ঈদুল ফিতরের পর, আসতে পারে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৬ মার্চ ২০২৪, ১৩:০০ |  আপডেট  : ৩ মে ২০২৪, ১০:২০

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। দলটির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই শাখা চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের আওতাভুক্ত থানা ও ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন হলেও দীর্ঘদিনেও দেওয়া হয়নি কমিটি। এসব কমিটি ঘোষণা হতে পারে ঈদুল ফিতরের পর, আসতে পারে নতুন নেতৃত্ব— এমনটাই জানিয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র।

দলের সূত্র মতে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ তাদের আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড শাখার সম্মেলন করে কমিটি দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও তা আলোর মুখ দেখছে না। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতার ‘হস্তক্ষেপের’ কারণে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি গড়িয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা পর্যন্ত। তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন নগরের বিভিন্ন স্তরের নেতারা।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন হয় ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর। ওই দিন উভয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বরে সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত হয়নি। সম্প্রতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা, উপজেলা ও মহানগর, পৌর শাখা এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন করে নতুন কমিটি দেওয়া, সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করা এবং তৃণমূলে অভন্তরীণ কোন্দল বা বিরোধ মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা, ঢাকা জেলা শাখা এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে যৌথসভা করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নতুন করে গঠনসহ দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

জানা গেছে, দলীয় সভাপতির নির্দেশনা আসার পর নতুন কমিটি দেওয়ার জন্য নড়েচড়ে বসেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতারা। ওয়ার্ড ও থানাগুলো এবং মহানগরের দুই কমিটির পদপ্রত্যাশীরা আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট ও প্রভাবশালী নেতাদের কাছে নিয়মিত ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে কোনও নির্দেশনা আসেনি। সে কারণে নতুন নেতৃত্বের জন্য অপেক্ষা নগর, থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের।

নগরের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী, ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা সম্মেলন এবং কমিটি ঘোষণার পর মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সব ইউনিটের সম্মেলন করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। তবে দক্ষিণের ২৪টি থানা, ৭৫টি ওয়ার্ড এবং উত্তরের ২৬টি থানা ও ৬৪টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন সময়ে সম্মেলন হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও থানা বা ওয়ার্ডের একটি কমিটিও ঘোষণা করা হয়নি। উত্তরের নেতারা বলছেন, দক্ষিণের সমস্যার কারণে এখনও কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। আর দক্ষিণের নেতাদের ভাষ্য— উত্তরের ‘খারাপ অবস্থার’ কারণে এই জটিলতা।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দুজন সমন্বয়কের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘কবে নাগাদ সম্মেলন বা নতুন কমিটি হবে, তার দিনক্ষণ এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। এখানে যে সমস্যা ও জটিলতা দেখা দিয়েছে, তা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনোকে জানানো হয়েছে। তিনি সম্মতি দিলে যেকোনও দিন নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা আসতে পারে। তবে সামনে রমজান মাস হওয়ায় ঈদের পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে, তেমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।’

সম্মেলন ও নতুন কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘কবে সম্মেলন হবে বা কমিটি দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশনা আমরা পাইনি। হাই কমান্ডের গ্রিন সিগন্যাল পেলে যেকোনও সময় থানা ও ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করা হবে। ইউনিটগুলোর সম্মেলন হয়েছে, নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে থানা ও ওয়ার্ডের সম্মেলন হলেও কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঈদের পর ঢাকা মহানগরের কমিটি দেওয়া হতে পারে। আগে তো ওয়ার্ড ও থানা কমিটি দিতে হবে। তারপর মহানগর কমিটির বিষয় আসবে। নতুন সম্মেলন বা কমিটি না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান কমিটিই বহাল থাকবে এবং দায়িত্ব পালন করে যাবে।’

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, থানা ও  ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্য নতুন কমিটি ঘোষণা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনও কারণে সেটি সম্ভব না হলে কেন্দ্রের কাছে কারণ ব্যাখ্যা করে সময় বাড়ানোর আবেদন করতে হয়, সেটাও করা হয়নি।  সম্মেলন হওয়ার পর কোথাও বছর, কোথাও মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটি দেওয়া হয়নি এখনও। ফলে বিলুপ্ত কমিটিগুলো নেতৃত্বশূন্য রয়েছে অনেকদিন ধরে। কবে নাগাদ নতুন কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে, সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছেন না নগর নেতারা। আর এক বছরের বেশি সময় ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।

ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও থানা শাখার কমিটি না দেওয়ায় সম্প্রতি বেশ কয়েকটি যৌথসভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তারা বারবার দ্রুত কমিটি দেওয়ার তাগিদ দেওয়ার পরও কোনও কাজে আসছে না। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে গত বছরের ২০ মার্চের মধ্যে কমিটি ঘোষণার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেই সময়ও পেরিয়ে গেছে, হয়নি কমিটি।

গত বছরের ১ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথসভায় এ নিয়ে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। সেখানে ওই বছরের ২০ মার্চের মধ্যে ওয়ার্ড ও থানা কমিটি না দেওয়ায় উষ্ণা প্রকাশ করেন তিনি। এসময় নগর নেতারা সময় চাইলে তাতে সম্মতি দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন কমিটির খসড়া প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

কেন কমিটি দিতে এত বিলম্ব হচ্ছে, জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ চার নেতার একজন বলেন, আমরা তো যথারীতি ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা শাখার সম্মেলন করেছি। কমিটি ঘোষণা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একাধিক নেতার কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বসাতে চান। বলয়মুক্ত কমিটি দেওয়া যাচ্ছে না। সে জন্য জটিলতা দেখা দেওয়ায় কমিটি দিতে দেরি হচ্ছে।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত