ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলায় আঞ্চলিক যুদ্ধের শঙ্কা

  আন্তর্জাতিক অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৫১ |  আপডেট  : ২ মে ২০২৪, ২০:৪০

ছবি: সংগৃহীত

সোমবার ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবারের ওই হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর শীর্ষ একজন কমান্ডার ও তার ডেপুটিসহ অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এই হামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিমূলক জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে তেহরান।সিরিয়ায় কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলি হামলার ঘটনার পরপরই তেহরানের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে আইআরজিসি বলেছে, সোমবারের হামলায় ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি ও তার ডেপুটি জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমি নিহত হয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা ও তাদের মিত্রদের লক্ষ্যবস্তু করে আসছে ইসরায়েল। তবে সোমবারের হামলাটি প্রথমবারের মতো ইরানের কনস্যুলেট ভবনে চালানো হয়েছে। দামেস্কের মেজেহ জেলার প্রধান দূতাবাস ভবনের পাশে অবস্থিত কনস্যুলেটটি সোমবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫ টার দিকে আক্রান্ত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপের মাঝে ইস্পাতের খুঁটিতে লাগানো ইরানের একটি পতাকা এখনও ঝুলছে।

আইআরজিসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলার সময় আইআরজিসির বেশ কয়েকজন সামরিক উপদেষ্টা ভবনটিতে ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে জাহেদি ও রাহিমিও রয়েছেন। জাহেদি ২০১৬ সাল পর্যন্ত লেবানন ও সিরিয়ায় কুদস ফোর্সের প্রধান ছিলেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকারবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, ইসরায়েলি ওই হামলায় আট ইরানি, দুই সিরিয়ান এবং একজন লেবানিজসহ মোট ১১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের সবাই যোদ্ধা।

সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত হোসেন আকবরী বলেছেন, তেহরানের প্রতিক্রিয়া হবে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিমূলক। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান এই হামলাকে ‌‌‘‘সব ধরনের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও চুক্তির লঙ্ঘন’’ বলে অভিহিত করেছেন। কনস্যুলেট ভবনে হামলার ঘটনায় ইসরায়েল জড়িত বলে দাবি করেছেন তিনি।

পৃথক এক বিবৃতিতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, ইরানের প্রতিক্রিয়া জানানোর অধিকার রয়েছে। আর এই প্রতিক্রিয়ার ধরন ও হামলার শাস্তি সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তেহরান।

জাতিসংঘে ইরানের মিশন বলেছে, এই হামলার ঘটনাটি জাতিসংঘের সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক ও কনস্যুলার চত্বর রক্ষার মূলনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। অন্যদিকে, হামলার নিন্দা জানাতে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি মিশন সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এই হামলা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকি বলে সতর্ক করে দিয়ে ইরানি মিশন বলেছে, হামলার চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে তেহরানের।

ইরানের অন্যতম মিত্র সিরিয়া বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। হামলার পরপরই ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মেকদাদ। তিনি বলেছেন, ‌‌‘‘আমরা দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবন লক্ষ্য করে চালানো এই নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই।’’

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মিত্র রাশিয়াও ইরানি কনস্যুলেটে হামলার নিন্দা জানিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলার মিশনের বিরুদ্ধে এই অগ্রহণযোগ্য হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।’’

লেবাননের ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, দামেস্কে হামলার ঘটনায় ইসরায়েলকে চড়া মূল্য দিতে হবে। গত ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হামাসের সমর্থনে ইসরায়েলে প্রায় প্রতিদিনই হামলা চালিয়ে আসছে হিজবুল্লাহ।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ বলেছে, ‌‌‘‘এই অপরাধের জন্য শত্রুপক্ষকে শাস্তি পেতে হবে। অবশ্যই হামলার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’’ ইরাক, জর্ডান, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অন্যান্য মুসলিম দেশও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেছেন, ওয়াশিংটন ‘‘ওই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান সংঘাত বৃদ্ধির কারণ হতে পারে এমন যেকোনও বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে।’’ 

ওয়াশিংটন ডিসির সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জন অল্টারম্যান বলেছেন, ইসরায়েল সম্ভবত এই হামলাকে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। তিনি বলেন, ‌‌‘‘ইসরায়েলিরা নিশ্চিত যে, তারা যদি পিছিয়ে যায়, তাহলে হুমকি কমার পরিবর্তে আরও বাড়বে। এই ধরনের হামলার ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে গেলে তা প্রতিপক্ষ শক্তিকে দুর্বল করবে বলে তারা মনে করে।’’

ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, সোমবার দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি নৌ ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা হামলা হয়েছে। ইরানের নির্দেশে চালােনো এই হামলায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। মঙ্গলবার সকালের দিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, সিরিয়া থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া কিছু অস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই বিধ্বস্ত হয়েছে। 

সূত্র: আলজাজিরা, নিউ ইয়র্ক টাইমস, এপি।

সা/ই

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত