আদালত কক্ষে লোহার খাঁচা কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:০৭ |  আপডেট  : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯

আদালত কক্ষে লোহার খাঁচা বসানো কেন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১, ৩২ ও ৩৫ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না এবং কেন লোহার খাঁচার পরিবর্তে কাঠগড়া পুনঃস্থাপন করার নির্দেশ দেওয়া হবে না, এই মর্মে চার সপ্তাহের রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এছাড়া কোন কোন আদালতে এই ধরনের লোহার খাঁচা বিদ্যমান আছে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে আইন সচিবকে সে রিপোর্ট দিতে বলেছেন আদালত।

রোববার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচা অপসারণ করতে সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী রিট দায়ের করেন। গত বছরের ১৬ অক্টোবর আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচার অপসারণ করতে সরকারকে আইনি নোটিশ দেন তারা।

আদালত অঙ্গনে মিছিল-সমাবেশ বন্ধে লিখিত আদেশ প্রকাশআদালত অঙ্গনে মিছিল-সমাবেশ বন্ধে লিখিত আদেশ প্রকাশ
নোটিশে বলা হয়, দেশের সিংহভাগ আইন ও আদালতের ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি। আদালতে আসামি হাজিরার জন্য কাঠগড়ার প্রচলন ব্রিটিশ আমলেই শুরু হয়। তবে দুর্ধর্ষ আসামি, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে হাজির করানো হত। বিচার শেষে দোষীকে লোহার খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে এমন ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু বিচার চলাকালীন আদালতে লোহার খাঁচায় বন্দি করে রাখার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না।

ভারতেও সাধারণ আদালতের কাঠগড়ায় লোহার খাঁচার ব্যবহার নেই। আমাদের দেশের কোনো আইনে কাঠগড়ায় লোহার খাঁচার ব্যবহার নিয়ে কোনো বিধান নেই। তবে কারা আইন, ১৮৯৪ এর ৫৬ ধারা মতে জেলে বন্দি কয়েদিকে সরকারের অনুমোদনক্রমে লৌহ-শৃঙ্খলে আটক করে রাখার বিধান রয়েছে। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই অভিযুক্তকে প্রকাশ্য আদালতে লোহার খাঁচায় বন্দি করে অভিযুক্ত ব্যক্তির Presumption of Innocnce ভঙ্গ করা হচ্ছে। যা একইসঙ্গে দেশের প্রচলিত আইন এবং আন্তর্জাতিক বিধি-বিধানের পরিপন্থি।

নোটিশে আরও বলা হয়, দেশি-বিদেশি আইন, আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান ও উচ্চ আদালতের নজিরগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায় আদালতে কাঠগড়ার পরিবর্তে লোহার খাঁচার ব্যবহার অমানবিক, বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ, আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান ও Principle of presumption of innocence -এর পরিপন্থি। মানুষের স্বাভাবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আদালতে লোহার খাঁচার অপসারণ একান্ত প্রয়োজন।

এ অবস্থায় সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদসহ আন্তর্জাতিক বিধি-বিধান অনুযায়ী মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নোটিশ পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতের এজলাস কক্ষ থেকে লোহার খাঁচার অপসারণ করার অনুরোধ করা হয়। নোটিশের জবাব না পাওয়ায় এ রিট দায়ের করা হয়।

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত