শত শত বিঘা আমন ফসল পানির নিচে

আদমদীঘিতে ইরামতি খালে বরেন্দ্র প্রকল্পের বাঁধ, কৃষকের মরণ ফাঁদ

  আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:২৬ |  আপডেট  : ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৬

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা ও নওগাঁ জেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইরামতি খাল ও রক্তদহ বিলে বরেন্দ্র বহুমূখি উন্নয়ন প্রকল্প বৃষ্টির পানি আটকে রাখার জন্য ৭ ফুট উঁচু করে ২টি বাঁধ নির্মাণ করে এ অঞ্চলের কৃষকদের সর্বনাশ করেছে। এক পশলা বৃষ্টি হলেই পানি নিষ্কাশনের এই খালে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে যায়। প্রতি বছর এই বাঁধের সচিত্র রিপোর্ট বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হলেও আজ পর্যন্ত প্রশাসনে টনক নড়েনি। তাই স্থানীয় কৃষকরা বাধ্য হয়ে ইরামতি খালের এই বাঁধে কিছু অংশ ভেঙ্গে দিয়েছে। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হচ্ছে না। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির পানি ও উজান থেকে নেমে আসা পানি এ খাল দিয়ে গড়িয়ে ভাটার দিকে সঠিক ভাবে যেতে পারছে না এসব বাঁধের কারণে। তাই এই খালের দুই পাশের হাজার হাজার বিঘা আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে এ অঞ্চলের কৃষকরা লাখ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখিন হবেন বলে স্থানীয় কৃষকরা জানান। এছাড়া এলাকার প্রভাবশালী এক ব্যক্তি রাণীনগর উপজেলার চকপারইল গ্রামের দক্ষিণে রক্তদহ বিলের বিশাল অংশ দখল করে মাছের খামার গড়ে তোলায় সেখানে সরুপথে পানি ঠিকমত নিষ্কাশন হয় না। স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসী ইরামতি খাল ও রক্তদহ বিলের এ দু’টি বাঁধ ভেঙ্গে ফেলা ও রক্তদহ বিলের অবৈধ দখলদার হতে মুক্ত সহ খালটি পুনঃ খনন করে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রশাসনের নিকট জোড় দাবী জানান। 
    
জানা যায়, ইরামতি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ কিলোমিটার। দুপচাঁচিয়া উপজেলার ভাতহান্ডা এই খালের উৎপত্তি নিচু জমিতে। দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘি, রাণীনগর, আক্কেলপুর, ক্ষেতলাল উপজেলার মাঠের পানি গড়িয়ে বর্ষাকালে এই খাল দিয়ে রক্তদহ বিলে পড়ে। রক্তদহ খাল থেকে এই পানি বিভিন্ন খাল পথে প্রবাহিত হয়ে আত্রাই নদীতে যায়। এটা হলো এই ইরামতি খালের স্বাভাবিক গতি ধারা। বিভিন্ন সময় এই অগভীর খাল ভরাট হয়ে গেলে খনন করা হয়। গত ২০১৩ সালে দায়সাঁরা ভাবে এই খাল পুনঃ খনন করা হয়। এই খালটি পুনরায় ভরাট হয়ে বর্তমানে কচরি পানায় ভরে আছে। 

সেই সময় আদমদীঘি উপজেলার কোঁচকুড়ি রেলওয়ে ব্রীজ থেকে পারইল রক্তদহের বিল পর্যন্ত না পৌছতেই খালটির খনন কাজ শেষ করে দিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাঁকি দিয়ে চলে যায়। যেখানে যতটুকু চওড়া ও গভীর করে খনন করার কথা ছিল তা করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ইরামতি খালের রক্তদহ বিলে যেতে চকপারইল গ্রামের পার্শ্ব দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রীজের পশ্চিম পার্শ্বে খালের কোন অস্তিত নেই বললেই চলে। এলাকার এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি শত শত বিঘা সরকারি খাস জমি ও রক্তদহ বিল দখল করে তৈরি করেছে বিশাল মাছের খামার।
উপজেলার কেশরতা গ্রামের কৃষক ইয়াছিন আলী জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই আমাদের জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে যায়। আমরা এলাকার অনেক কৃষক মিলে কয়েক বছর পূর্বেক উক্ত বাঁধের কিছু অংশ ভেঙ্গে দেই। কিন্তু বর্তমানে উক্ত খালে কচরি পানা ও ভরাট হয়ে গিয়ে পানি প্রবাহের গতিধারা কমে গেছে। 

পার্শ্ববর্তী রাণীনগর উপজেলার পারইল গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান জানান, আমাদের পারইল ব্রীজের দক্ষিণ পার্শ্বে ইরামতি খালের উপর নির্মিত এই বাঁধের কারণে ও কচরি পানায় ভরে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই আমাদের শত শত বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়। পার্শ্ববর্তী দুটি উপজেলা প্রশাসনের নিকট আমাদের দাবী দ্রুত সম্ভব এই খালের প্রতি নজর দিয়ে এসব সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করে দিবেন।

এব্যাপারে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আদমদীঘি উপজেলার আওতাধীন এ দু’টি বরেন্দ্র প্রকল্পের বাঁধের কারণে ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে আকষ্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়ে উপজেলার ২টি ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চলে প্রায় ৬০ হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে বোরো আবাদ হুমকির পড়ে। এতে করে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়। সরজমিনে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন। 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত