আজ আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস; গৃহশ্রমিকদের সবচেয়ে ঝুঁকিতে ফেলেছে করোনা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২১, ১২:১৫ |  আপডেট  : ১১ এপ্রিল ২০২৪, ২১:২১

কোভিড-১৯ এ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহশ্রমিকরা। তারা কাজ হারিয়ে আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছেন। তাদের কাজের নেই নিশ্চয়তা, নিয়োগপত্র ও নির্দিষ্ট মজুরি না থাকায় যে কোনো সময় তাদের কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে তাদের কাজে নেই নিদিষ্ট কর্মঘণ্টা, নেই ছুটি ভোগের সুযোগ।

করোনা মহামারিতে তারা সর্বপ্রথম কাজ হারান। হঠাত্ করে কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয় তাদের। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখনো অনেক ফ্ল্যাট বাসায় গৃহশ্রমিক প্রবেশ করতে পারছেন না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ-২০১৬-১৭ তথ্য অনুযায়ী, দেশে গৃহস্থালি কাজে জড়িত কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ, যাদের ৯০ শতাংশই নারী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার আগেও গৃহকর্মীদের অবস্থা নাজুক ছিল। তারা শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬’ এর আওতা বহির্ভূত রাখায় তারা মানবিক অধিকার, শোভন কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি, সামাজিক সুরক্ষা ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত। বেশির ভাগ গৃহকর্মীকে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হতে হয়।

গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষায় সরকার ২০১৫ সালে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫’ তৈরি করলেও তার বাস্তবায়ন নেই। গৃহশ্রমিক নিয়ে কাজ করা সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই নীতির আলোকে একটি আইন প্রণয়নের দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন।

সম্প্রতি ঢাকার মহাখালীতে সাত তলা সরকারি কোয়ার্টারে আমেনা খাতুন (১১) এবং চট্টগ্রাম নগরীর হামজারবাগ এলাকায় নিলুফার বেগম (১৫) নামে দুই গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ নিয়ে দুই-এক দিন কেবল আলোচনা সভা, মানববন্ধন কিংবা বিবৃতিতেই শেষ হয় সচেতন মহলের সব কর্মকাণ্ড। প্রভাবশালীদের ক্ষমতা আর অর্থের জোরে মামলা তুলে নিতে বাধ্য হন গৃহশ্রমিকের পরিবার। ফলে বিচার হয় না গৃহশ্রমিক নির্যাতনের।

কোভিড-১৯ এর এমন পরিস্থিতিতে আজ ১৬ জুন আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হবে গৃহশ্রমিক দিবস-২০২১। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। তবে করোনা সংক্রমণের কারণে ভার্চুয়ালি দিবসটি পালিত হবে।

দেশব্যাপী গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষায় প্রণীত ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫’ বাস্তবায়ন না হওয়ায় দেশে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন।

তিনি আরো বলেন, বিচারহীনতার কারণে দোষীরা বারবার গৃহশ্রমিকদের নির্যাতনের সাহস পায়। যদি এসব ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়, তাহলে ভয়ে আর কেউ গৃহশ্রমিকদের নির্যাতনের সাহস দেখাবে না।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) যৌথভাবে দরিদ্র মানুষের ওপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব নিয়ে একটি জরিপ করেছে। গত বছর ৪ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত টেলিফোনে এ জরিপ করা হয়। জরিপে অংশ নেন ৫ হাজার ৪৭১ জন।

এতে বলা হয়েছে, গৃহকর্মীদের ৫৭ শতাংশেরই কোনো কাজ নেই। এই গৃহকর্মীদের ৭৬ শতাংশ আয় কমেছে। ফলে নিম্ন আয়ের অন্যান্য পেশার সঙ্গে যুক্তদের পরিবারের যে ভোগান্তি, একই ভোগান্তি হচ্ছে গৃহকর্মী ও তার পরিবারের।

জাতীয় গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব ও বিলস পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন বলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটা অংশ গৃহশ্রমিকরা কাজের উদ্দেশে শহরে আসেন। কিন্তু করোনা তাদের শহর থেকে বিতাড়িত করেছে।

গৃহশ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইএলও কনভেনশন-১৮৯ প্রণয়নে সরকার আইএলসিতে ভোট দিয়েছে এবং তার আলোকে নীতিমালা তৈরি করেছে। কিন্তু নীতিমালা বাস্তবায়নে আইনের দরকার রয়েছে। আইন হলেই কেবল নীতির বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত