অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিবাদে উত্তাল আর্জেন্টিনা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ০৮:৩৯ |  আপডেট  : ১৮ জুন ২০২৪, ০৯:৪১

আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ার মিলের বিতর্কিত অর্থনৈতিক সংস্কার প্যাকেজ সিনেটে অনুমোদিত হওয়া নিয়ে বিক্ষোভ সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজধানী বুয়েনস আইরেস। বুধবার সিনেটে ভোটাভুটির সময় কংগ্রেস ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দাঙ্গা পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে পেট্রোল বোমা ও পাথর ছুড়ে মারে এবং গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের অভিযোগ, সরকারের এই পদক্ষেপে লাখ লাখ আর্জেন্টাইন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব সংঘর্ষের ঘটনায় বহু মানুষ আহত হয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম ঘটনাস্থলকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ বলে বর্ণনা করেছে।

দাঙ্গা পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে। ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট দেশটির পিছিয়ে পড়া অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে যে সংস্কার প্রস্তাব করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা, পেনশন কাটছাঁট এবং শ্রমিকদের অধিকার হ্রাস করা।

আর্জেন্টিনার গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই ডানপন্থি অর্থনীতিবিদ মিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হিসাবে ছয় মাস পার করে ফেললেও অর্থনীতির পতন ঠেকাতে কোনো সফলতা দেখাতে পারেননি তিনি। বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি এখন প্রায় ৩০০ শতাংশের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। আর্জেন্টিনার অর্ধেকের বেশি মানুষ এখন দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। মিলের এই ‘অপ্রত্যাশিত’ পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে দেশটির বামপন্থি রাজনৈতিক দল, শ্রমিক ইউনিয়ন এবং সামাজিক সংগঠনগুলো। তার পরও বুধবার সিনেটে তার সংস্কার প্রস্তাব পাশ হয়। ভোটাভুটিতে প্রথমে প্রস্তাবটির পক্ষে-বিপক্ষে সমান ৩৬-৩৬ ভোট পড়েছিল। তখন সিনেট চেম্বারের প্রধান ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিক্টোরিয়া ভিলারুয়েল প্রস্তাবের পক্ষে নিজের ভোটটি দিয়ে এ পরিস্থিতির অবসান ঘটান। অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে তিনি বলেন, ‘যে আর্জেন্টাইনরা ভুগছেন, যারা অপেক্ষা করছেন, সন্তানরা দেশ ছেড়ে যাচ্ছে যারা এটি দেখতে চান না, তাদের জন্য আমার ভোটটি ইতিবাচক।’ গতকাল বৃহস্পতিবার পূর্ণ অনুমোদনের আগে ৩২৮ অনুচ্ছেদের এ বিলটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিরীক্ষা করা হবে। তারপর এটি চূড়ান্ত ভোটাভুটির জন্য কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে ফেরত যাবে।’

সিনেটে বিলটি পাশ হওয়ার আগে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেয়, ‘দেশ বিক্রির জন্য নয়, দেশকে আগলে রাখতে হয়।’ আরেকটি ব্যানারে লেখা ছিল—‘কীভাবে একজন রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রকে ঘৃণা করতে পারেন?’ দিনের শুরুতে বিক্ষোভকারীরা বেড়া ডিঙিয়ে পার্লামেন্টের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। তাদের থামাতে পুলিশ পিপার স্প্রে করলে বিক্ষোভকারীরা পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে। পর্যবেক্ষক ও বিরোধীদলীয় এমপিরা জানিয়েছেন, জখম হওয়া কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী ও কয়েক জন এমপিকে চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে। আইনপ্রণেতা সিসিলিয়া মোরো জানান, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে থাকা বিরোধীদলীয় অন্তত পাঁচ জন এমপিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর পাশাপাশি অন্তত ২০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, তারা ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের পিছু হটিয়ে দেয়।

এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট মিলের দপ্তর অভ্যুত্থানের চেষ্টাকারী ‘সন্ত্রাসীদের’ দমন করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। বুয়েনোস আয়ার্সে এক সম্মেলনে মিলি বলেন, ‘আমরা আর্জেন্টিনাকে বদলে দিতে যাচ্ছি, আমরা আর্জেন্টিনাকে বিশ্বের সবচেয়ে উদার দেশে পরিণত করতে যাচ্ছি।’ ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করা অর্থনৈতিক সংস্কার বিলটিতে উল্লেখযোগ্য সংশোধনী আনার পর এপ্রিলে নিম্নকক্ষে এটি অনুমোদন পায়।

মিলি ২০২৩ সালে সরকারি ব্যয়ের ব্যাপক কাটছাঁটের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। ক্ষমতায় আসার পর তিনি মন্ত্রিসভার আকার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছেন, ৫০ হাজার সরকারি চাকুরেকে ছাঁটাই করেছেন, নতুন সরকারি প্রকল্পের চুক্তি স্থগিত করেছেন এবং পরিবহন ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাতিল করেছেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত