অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হচ্ছে, কিন্তু আমার ভরসা দেশের মানুষ: শেখ হাসিনা
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:০৩ | আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬
আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র। অনেক চক্রান্ত। কিন্তু আমার ভরসা একমাত্র বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়— সেটাই আমরা করেছি। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আজকে সেখানে রেল সেতু চালু করে দিলাম।
বিএনপি-জামায়াত এলে দেশ ধ্বংস করে দেবে অভিযোগ তুলে সরকারপ্রধান বলেন, এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকা মার্কাই আপনাদের সব রকম সহায়তা দেবে। আপনাদের কাছে আমার আহ্বান নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও সেবা করার সুযোগ করে দেবেন।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রেল যোগাযোগ উদ্বোধন উপলক্ষে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গার ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের সভাপতিত্বে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্ল্যাহ বক্তব্য রাখেন।
পদ্মা রেল সেতু চালুর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এসেছি একটি উপহার নিয়ে। সেটি হচ্ছে রেল। আমি রেলে করে ভাঙ্গায় এসেছি। এটা কেউ কখনও চিন্তাও করতে পারিনি। আমি আপনাদের পদ্মা সেতুর সাথে সাথে রেললাইনও উপহার দিয়ে গেলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্ক্ষা ছিল— প্রতিটি গ্রাম সুন্দরভাবে সাজাবেন। প্রতিটি মানুষের ঘরে আলো জ্বালাবেন। শিক্ষার আলোয় আলোকিত করবেন। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবেন। যে কারণে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। তার সুফল বাংলাদেশের মানুষ পেতেও শুরু করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমার মা-তিনভাইসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দুই বোনের বিদেশে থাকা প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে বিদেশে থাকতে হয়েছে। স্বজন হারিয়ে এদেশে ফিরে এসেছিলাম ৬ বছর পর। একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছিলাম— এই দেশের মানুষের ভাতের কষ্ট থাকবে না, কেউ ভূমিহীন গৃহহীন থাকবে না, প্রত্যেকের দোরগোড়ায় চিকিৎসা পৌঁছবো, উন্নত জীবন দেবো। এই লক্ষ্য নিয়ে আমার দেশে ফেরা। এমন একটি দেশে ফিরলাম যেখানে আমার বিচার চাওয়ার অধিকার নেই। তবে আমি পিছিয়ে যাইনি। বোমা, হামলা, গ্রেনেড, গুলি অনেক কিছুর মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু দেশের মানুষের জন্য কাজ করবো এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। আমার বাবা-মা ভাই কেউ নেই। আমার আছে বাংলাদেশের জনগণ। তারাই আমার পরিবার। তারাই আমার সব। তাদের জন্যই আমার কাজ।
তিনি বলেন, জনগণের কোনও ভোটের অধিকার ছিলো না। অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন করেছিল। আমরা ভোট ও ভাতের অধিকারে সংগ্রাম করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। মিলিটারি ডিকটেটর জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া। এদের সময় কেউ ভোট দিতে পারতো না। কথা চালু হয়ে গিয়েছিল, ১০টা হোন্ডা ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। এখন আর সেই অবস্থা নেই। একটানা ১৪ বছর আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে। স্থিতিশীলতা আছে। যে কারণে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। সমগ্র বাংলাদেশে ওয়াইফাই সংযোগ আছে। আমাদের লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ করা। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করে। দেশের কল্যাণে কাজ করে। আমরা দেশকে আরও উন্নত করতে চাই।
পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের ঘটনা বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি সামান্য ব্যাংকের এমডি পদের জন্য… সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে হেরে গেলো। আর সেই ক্ষোভে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা বন্ধ করে দুর্নাম দিতে চেয়েছিল, পদ্মা সেতুর টাকায় দুর্নীতি হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। বলেছিলাম দুর্নীতি করতে আসিনি। মানুষের সেবা করতে এসেছি। শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করে না। আমি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নিলে অনেকে বলেছিলেন— এটা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের টাকায় এই খরস্রোতা নদীতে সেতু করা সম্ভব নয়। আমি জানি অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ আমার সাথে নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আছে। বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়— সেটাই আমরা করেছি। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আজকে সেখানে রেল সেতু চালু করে দিলাম। বঙ্গবন্ধুর সুরে বলতে চাই বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ দাবায় রাখতে পারবে না।
তিনি বলেন, আজকে আমার মুক্তিযোদ্ধারা আছেন। জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছেন। আজকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমি ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নির্মাণ করে দিচ্ছি। যেন আমাদের ধর্মটা সম্পর্কে মানুষ জানে। সব ধর্মের সব মানুষ তার ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। স্বাধীনভাবে তারা ধর্ম পালন করবে। এটাই আমাদের নীতি। ইসলাম ধর্ম সেটা শেখায়। যার যার ধর্ম সে পালন করবে। আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।
ধ্বংস করাই বিএনপির চরিত্র অভিযোগ করে সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি এসে কী করেছে? সকলের ওপর অত্যাচার। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা। কাউকে ছাড়েনি তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এদেশকে গড়তে চায়। আজকে সারা বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য এদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে সকলের প্রতি সেই আহ্বান জানান। আমি আমার সব জমি এখন চাষ করি। এখন গণভবন একটা খামার হয়ে গেছে। সেখানে যা যা পারি উৎপাদন করি। সবাইকে উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিজেদের ঠিক করতে হবে। বরং আমরা অনেক দেশকে সাহায্য করতে পারবো। এসময় বিদ্যুৎ, পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। বঙ্গবন্ধুর দেশে একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, এত দিন-রাত পরিশ্রম করে এদেশের উন্নতি করেছি। হাজার হাজার মাইল রাস্তাঘাট। গ্রামে কাচা রাস্তা খুব কমই আছে। যা আছে আগামীতে সেটাও পাকা করে দেবো। রেল সম্প্রসারণ করে দিচ্ছি। নৌপথ ড্রেজিং করে সম্প্রসারণ করছি। বিমান কিনে বিমানপথ চালু করে দিচ্ছি। বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে উন্নয়ন করে সারা বিশ্বে আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে বলেই আমরা এটা সম্ভব হয়েছে। নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। নৌকা পদ্মা সেতু, রেল সেতু করে দিয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নতি করেছে। নৌকা আপনাদের কলেজ স্কুল বিশ্ববিদ্যালয় দিচ্ছে।
নৌকাই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আনে দাবি করে তিনি বলেন, ওই লুটেরা বিএনপি। যে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। যে পলাতক আসামি। মুচলেকা দিয়ে দেশে ছেড়ে ভেগেছে। অর্থ আত্মসাৎ করেছে। অস্ত্র চোরাকারবারি। এই হলো বিএনপির নেতা। আর জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধের দায়ে শাস্তি দিয়েছি। এরা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকা মার্কাই আপনাদের সব রকম সহায়তা দেবে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার যাতে আপনাদের সেবা করতে পারে। আপনাদের কাছে আমার সেই আবেদন থাকলো। আপনাদের কাছে আমার এই আহ্বান। আজকে পদ্মা সেতুকে রেললাইন আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম। আপনারা ফরিদপুরবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও সেবা করার সুযোগ করে দেবেন। এই আহ্বান জানাই।
সান
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত