অথৈ পানিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড
 অনলাইন ডেস্ক
  অনলাইন ডেস্ক
                                    
                                    প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৪৭ | আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:৪৮
 
                                        
                                    এটা কি নিছক দুর্ঘটনা? নাকি কর্তৃপক্ষের অসতর্কতাজনিত মর্মান্তিক মৃত্যু-যজ্ঞ? সচেতন মহলে এ প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে ঢকা থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এম ভি অভিযান-১০’এ নজিরবিহীন ও ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় যে ৪১টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল তার দায় কে নেবে? খবরে বলা হয়েছে, লঞ্চটিতে প্রায় হাজারখানেক যাত্রী ছিল। যদিও এর ধারণক্ষমতা পাঁচশ’র বেশি নয়। লঞ্চটি যখন ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর মাঝখানে তখনই হঠাৎ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত। প্রত্যক্ষদর্শী ওই লঞ্চের বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা সংবাদমাধ্যমকে যে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে এটা অনুমান করা যায় যে, লঞ্চটির সারেং, সুকানিসহ অন্য স্টাফদের অসতর্কতা ও সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে দুর্ঘটনাটি এত ভয়ংকর রূপ নিতে পেরেছে। বেঁচে যাওয়া একজন যাত্রী বলেছেন, ইঞ্জিনরুমের কাছে যখন আগুনের সূত্রপাত তখন সারেংকে তা অবহিত করা হলেও সে লঞ্চটিকে নদীর তীরে না নিয়ে জোরে চালাতে থাকে। তারা আগুন নেভানোর কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। নদীর মাঝখানে থৈ থৈ পানির মধ্যে একটি লঞ্চ মানষসমেত পুড়ে ছাই হয়ে গেল, অথচ সে পানি কোনো কাজই আসলো না! খবরে আরো বলা হয়েছে, আইন অনুযায়ী লঞ্চটিতে ত্রিশের অধিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকার কথা। লঞ্চটির মালিক দাবি করেছেন ২১ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ছিল। কিন্তু উদ্ধারকারিী দল ও যাত্রীদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, লঞ্চটিতে একটিও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ছিল না। তাছাড়া আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সাথে সাথে কেন সারেং-সুকানিরাঞ্চল থামিয়ে যাত্রীদের তীরে নামানো ও আগুন নেভানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলো না এটাও একটি প্রশ্ন। খবরে বলা হয়েছে, এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য পৃথক তিনটি তদন্ত কামিটি গঠন করা হয়েছে। এই তদন্ত শেষ হওয়ার পরই জানা যাবে ভয়ংকর এই অগ্নিকান্ডের কারণ কী।
আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন সড়কে ঝরছে দু’চার দশটা প্রাণ। নৌ দুর্ঘটনাও আমাদের দেশে বিরল নয়। প্রতি বছর বর্ষা মওশুমে বা ঝড়-বাদলের দিনে এ দুঘটনা ঘটে। কখনো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় লঞ্চ , কখনো ঝড়ের কবলে পড়ে উল্টে যায়, আবার কখানো দুই নৌযানের সংঘর্ষেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। তবে নদীর মাঝখানে চলন্তঞ্চলে অগ্নিকান্ডের ঘটনা এটাই প্রথম। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, লঞ্চ মালিক-কর্তৃপক্ষ হয়তো এ ধরনের দুর্ঘটনার কথা ভাবেন নি। তাই আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা রাখার তাগিদ অনুভব করেন নি। কিন্তু সরকারি যে কর্তৃপক্ষ এসব লঞ্চের ফিটনেস সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে, তারা কি এ বিষয়টি কখনো গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখেছেন? মনে হয় না। যদি তারা বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিতেন, তাহলে নিয়মিত পরিদর্শনের সময় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র না থাকার বিষয়টি তাদের নজরে আসত, এবং তারা মালিক-কর্তৃপক্ষকে তা রাখতে বাধ্য করতেন। সুতরাং আমরা মনে করি, এ অনাকাক্সিক্ষত ও বেদনাদায়ক মৃত্যুর জন্য কবলমাত্র ল মালিক-কর্তৃপক্ষ একা নয়, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়েরও দায় রয়েছে।
আমরা দেখে আসছি, মালিক পক্ষ এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের অবহেলা-অবজ্ঞাজনিত কারণে নান রকম দুঘটনায় মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে কিছু ‘ক্ষতিপূরণ’ দেয়া হয়, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তা কি একটি মানুষের জীবনের দামের তুল্য? ‘প্রিভেনশন বেটার দ্যান কিউর’ অর্থাৎ ‘নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ উত্তম’ বলে যে কথাটি চিকিৎসাশাস্ত্রে চালু আছে, আমরা মনে করি এসব ক্ষেত্রেও তার অনুসরণ জরুরি। দুর্ঘটনা ঘটার পর কারণ অনুসন্ধান, দায়িদের শাস্তি আর ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য গলদঘর্ম না হয়ে দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করাই শ্রেয়। সে হিসেবে প্রতিটি যানবাহনে, সে নৌ-যানই হোক, কিংবা সড়ক-যান, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখা বাধ্যতামূলক করা অতীব জরুরি। আর নৗযানগুলোতে পানি সেচ পাম্পও রাখা দরকার। যাতে অগুন লাগলে সাথে সাথে পানি দিয়ে নেভানোর ব্যবস্থা করা যায়।
বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, গ্রামনগর বার্তার পক্ষ থেকে আমরা তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। যারা অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত
 
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
            