গুরুতর অভিযোগে স্বর্ণজয়ী দিপু চাকমা এশিয়ান গেমসের ক্যাম্প থেকে বহিষ্কার

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:০৮ | আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১৭

আসন্ন সাউথ এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতির চেয়ে ব্যক্তিগত বিশৃঙ্খলাকেই বড় করে তুলেছিলেন দিপু চাকমা। কোচের নির্দেশনা অমান্য করা, ক্যাম্পে গ্রুপিং করে বিদ্রোহের চেষ্টা, এমনকি বিদেশি কোচকে বার্তা লেখে বিব্রত করার মতো গুরুতর সব অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সেই সাথে নারী নির্যাতন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়ার মতো চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে জাতীয় তায়কোয়ানডো প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের শৃঙ্খলা যখন ভেঙে পড়ার উপক্রম, তখনই কঠোর অবস্থানে গেল তায়কোয়ানডো ফেডারেশন। ২০১৯ সালের সাউথ এশিয়ান গেমসের স্বর্ণজয়ী এই খেলোয়াড়কে ক্যাম্প থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ তায়কোয়ানডো জানিয়েছে, ক্যাম্পের শৃঙ্খলা রক্ষায় শূন্য সহনশীলতা (জিরো টলারেন্স) নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। দলের কোচদের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের সত্যতা মেলার পরই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
ফেডারেশনের সূত্রে জানা গেছে বিশৃঙ্খলা যখন চরমে, তখন দিপু চাকমার বিরুদ্ধে অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানতে পেরে তিনি ক্যাম্পের শৃঙ্খলা পুরোপুরি ধ্বংসের চেষ্টা করেন তার সহযোগী অন্য আরেক খেলোয়াড় ফয়সার আহমেদকে নিয়ে । তারা দলের খেলোয়াড়দের উস্কানি দিয়ে সবাইকে নিয়ে ক্যাম্প ছেড়ে দেওয়ার বারংবার হুমকি দেন। শুধু তাই নয়, দলের কোচ ও অ্যাডহক কমিটিকে পাশ কাটিয়ে তিনি নতুন কোরিয়ান কোচ- মি. চই জাংগু’কে কোরিয়ান ভাষায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে বার্তা পাঠান, যা ওই বিদেশি কোচকে মারাত্মক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। এ ধরনের ঘটনাকে ফেডারেশন চরম অবাধ্যতা এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার শামিল বলে মনে করছে। এছাড়াও আরও অভিযোগ এসেছে, ক্যাম্পে নারী খেলোয়াড়দের স্ট্রেচিং ট্রেনিংয়ের সহায়তার নামে দিপু চাকমা প্রায়ই বিভিন্নভাবে তাদের শরীরে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে স্পর্শ করতেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পর তাকে সতর্ক করা হলেও তিনি তা উপেক্ষা করেন এবং একই আচরণ অব্যাহত রাখেন।
ফৌজদারি মামলা ও অনৈতিকতা এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগের পাশাপাশি দিপু চাকমার বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ। তিনি তার চাকমা স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও আরেকজন মুসলিম তায়কোয়ানডো নারী খেলোয়াড়কে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে এবং বিয়ের পর তাকে মারধরের অভিযোগে দায়েরকৃত নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।
আরও মারাত্মক অভিযোগ হলো, ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোঃ মোসলেম মিয়া তার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে এই সব তথ্য গোপন করে দিপু চাকমাকে জাতীয় দলে জায়গা করে দিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে দিপু চাকমাকে ক্যাম্প থেকে অপসারণের পর তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, তার সহযোগি ফয়সাল আহমেদ এর মাধ্যমে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, তার এই কর্মকাণ্ডে ফেডারেশনেরই বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ইন্ধন দিচ্ছেন। এদের মধ্যে যুগ্ম সম্পাদক মোঃ মোসলেম মিয়া, মোঃ নূরদ্দিন হোসেইন, শাহ মো: মন্জুরুল হক পাটওয়ারি, সাকলাইন জনি, মোকসেদোর রহমান, জাহাঙ্গীর, সহ আরও কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে- তাদের মধ্যে রয়েছে আবদুল্লাহ আল নোমান, জামাল হোসেন, সৌরভ খান প্রমূখ। এই ঘটনা ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে প্রকাশ্যে এনেছে।
প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের কোচ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "তার (দিপুর) কার্যকলাপ দলের একাত্মতা এবং আসন্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ আসরের প্রস্তুতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমাদের যৌথ সিদ্ধান্তে এই পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।"
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত