কৃষকের হাতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়বে বিএনপি: তারেক রহমান

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:১৬ | আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৬

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘কৃষকদের পরিশ্রমে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে, তাদের ত্যাগে পুষ্ট হয়েছে, আর তাদের দৃঢ়তায় হয়েছে শক্তিশালী। বগুড়ার উর্বর মাঠ থেকে শুরু করে বরিশালের ভাসমান বাগান পর্যন্ত— প্রতিটি শস্যদানার ভেতর লুকিয়ে আছে তাদের সহনশীলতার গল্প এবং আমাদের সম্মিলিত ভবিষ্যৎ।’
বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে—সত্যিকারের খাদ্য নিরাপত্তা সম্ভব সরকারের, কৃষকের, উদ্যোক্তার এবং জনগণের যৌথ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, যেখানে সবাই মিলে গড়ে তুলবে একটি টেকসই খাদ্যব্যবস্থা।’তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় নেতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দুর্ভিক্ষ ও হতাশার ছায়ায় নেতৃত্বে আসেন।
তিনি জানতেন, খাদ্য নিরাপত্তা ছাড়া স্বাধীনতার অর্থ অসম্পূর্ণ। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শুরু করে নির্ভরতা থেকে মর্যাদার পথে যাত্রা— সেচ সম্প্রসারণ, খাল পুনরুদ্ধার এবং একাধিক ফসল চাষের মাধ্যমে একসময় দুর্ভিক্ষপীড়িত জাতিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মে এগিয়ে নিয়েছেন। কৃষককে ক্ষমতায়িত করা হয়েছে সার ভর্তুকি, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন এবং ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচির মাধ্যমে, যা গ্রামাঞ্চলকে পুনরুজ্জীবিত করেছে এবং নিশ্চিত করেছে যেন কোনো পরিবার অনাহারে না থাকে।
এই ভিত্তির ওপরই আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি।’’তারেক রহমান বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ যখন খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পানি সংকট এবং জলবায়ু হুমকির মুখোমুখি, তখন আমাদের সেই ভিত্তির ওপর আরো শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে— শুধু নিজের মানুষের জন্য নয়, বরং তাদের জন্যও যারা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে ১১.৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে— যা বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির। সেখানে আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় এখন প্রতিটি পরিবার মাসে মাত্র ছয় ডলারের খাদ্য সহায়তায় টিকে আছে।
বিএনপি বিশ্বাস করে— সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, দাতা দেশ ও বেসরকারি অংশীদারদের সমন্বিত, জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন— খাদ্য সহায়তা পুনরুদ্ধার ও জীবিকায়নের সুযোগ জোরদার করার জন্য, যেন বিশ্ব যৌথভাবে এই সংকট মোকাবেলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করতে পারে।’
‘এই বাস্তবতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—বিশ্বজুড়ে খাদ্য অনিরাপত্তা বাড়ছে— গাজা, সুদান, ইয়েমেন থেকে শুরু করে আমাদের নিজ দরজার কাছেও। বাংলাদেশে আমাদের খাদ্য ও কৃষির ভবিষ্যৎ হতে হবে মানবিক এবং উদ্ভাবনী উভয়ই। নতুন প্রযুক্তি, নতুন উদ্যম ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে বিএনপি একটি অংশীদারত্বভিত্তিক খাদ্যব্যবস্থার স্বপ্ন দেখে—যেখানে কৃষক সম্মানিত, উদ্ভাবন গ্রহণযোগ্য, এবং বৈশ্বিক দায়িত্ব নিশ্চিত।’
খাদ্য ও কৃষি নিরাপত্তায় বিএনপির রূপরেখা সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, ‘প্রতিটি কৃষককে নিরাপদ ডিজিটাল পরিচয়পত্র দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে তারা সরাসরি সার, ভর্তুকি, ন্যায্যমূল্য, ঋণ, ফসল বিমা ও সরকারি ক্রয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন—মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই।
এর ফলে শোষণ বন্ধ হবে এবং কৃষক হবেন জাতীয় অর্থনীতির প্রকৃত অংশীদার। আমরা ২০,০০০ কিলোমিটার নদী ও খাল পুনঃউদ্ধারের পরিকল্পনা নিয়েছি, সম্প্রদায়ভিত্তিক সেচব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন এবং আধুনিক তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের মাধ্যমে পানির প্রবাহ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করব।’
তিনি বলেন, ‘‘অলটারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রায়িং’ পদ্ধতিতে ধান চাষ সম্প্রসারণ করা হবে, যা কার্বন নিঃসরণ কমাবে, পানি সাশ্রয় করবে এবং বাংলাদেশকে কার্বন ক্রেডিট থেকে আয় করতে সহায়তা করবে। ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ও ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের—যারা পরিবারপ্রধান হিসেবে স্বীকৃত—খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার নেতৃত্বে ক্ষমতায়িত করা হবে, যা পরিবার ও সমাজের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাবে।’’
‘‘কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাতে ১৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে— শীতল সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত শিল্প ও রপ্তানিমুখী খাদ্য শিল্পের মাধ্যমে কৃষকদের স্থানীয় ও বৈদেশিক বাজারে যুক্ত করা হবে। আধুনিক গুদাম ও কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের মাধ্যমে খাদ্য অপচয় হ্রাস এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধি করা হবে। তরুণদের কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে যান্ত্রিকীকরণ, ড্রোন প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ ফান্ড প্রদান করা হবে। একটি জাতীয় ‘চক্রাকার অর্থনীতি’ গড়ে তোলা হবে, যেখানে প্লাস্টিক, ই-বর্জ্য ও কৃষি বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করে উৎপাদনশীল সম্পদে রূপান্তর করা হবে। গ্রামীণ বায়োগ্যাস কেন্দ্র ও বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদনের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি হবে টেকসই। একই সঙ্গে কৃষি গবেষণা, সম্প্রসারণ ও প্রশিক্ষণ আধুনিকায়ন করে মানসম্পন্ন বীজ, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন সরাসরি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘এক অনিশ্চিত বিশ্বে বাংলাদেশ উদাহরণ হতে পারে— যেখানে খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন ও কৃষকের মর্যাদা বাস্তব রূপ পায়। বাংলাদেশের শক্তি সবসময় ছিল সেই হাতে, যে হাত মাটিতে চাষ করে। বিএনপি সেই হাতগুলোকে ক্ষমতায়িত করবে— যাতে তারাই গড়ে তোলে বাংলাদেশের আগামী।’’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত