রাজনৈতিক দলের এজেন্টরাই ভোটের সবচেয়ে বড় পর্যবেক্ষক: ভারতের সিইসি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:২২ |  আপডেট  : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৮

একটি নির্বাচনের মূল চাবিকাঠি হলো বিশ্বাসযোগ্যতা। এই বিশ্বাসযোগ্যতায় ভারতের নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত শতভাগ উতরে গেছে বলে মনে করেন সাংবিধানিক সংস্থাটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) রাজীব কুমার।

তার মতে, বিদেশিদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানানো হলেও মূলত রাজনৈতিক দলের এজেন্টরাই ভোটের সবচেয়ে বড় পর্যবেক্ষক।সোমবার বিকেলে নয়াদিল্লিতে সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে রাজীব কুমার এ অভিমত দেন। নির্বাচন কমিশন ভবনে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত সচিব অরিন্দম বাগচী।

এসময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের মহাপরিচালক (মিডিয়া) বালসুব্রামানিয়ান নারায়ণান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বাসুদেব রবি, পবন স্মরণ, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (প্রেস, ইনফরমেশন ও কালচার) শিলাদিত্য হালদার প্রমুখ।

রাজীব কুমার তার অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যে কোনো নির্বাচন ব্যবস্থাপকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কারণ এতে ভুল তথ্য ও গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর সমাধান বের করতে হবে আমাদের।

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অবশ্যই মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে এবং এটাই বড় কথা উল্লেখ করে ভারতের সিইসি বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া যদি শতভাগ স্বচ্ছ হয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে।

‘নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য যেকোনো কার্যক্রম রাজনৈতিক দল এবং মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করতে হবে। আপনি ভোটকক্ষ স্থাপন করবেন, জানাতে হবে। নতুন নির্বাচনী বিধি জারি করবেন, সেটাও জানাতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার যা-ই করুন, রাজনৈতিক দল ও মিডিয়ার কাছে সেটা তুলে ধরতে হবে। যেন তাদের মনে কোনো সন্দেহ না থাকে। ’

রাজীব কুমার বলেন, আমাদের ইভিএম মেশিনগুলো নির্বাচনের ছয় মাস আগে রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে চেক (যাচাই) করা হয়। ঠিক সেই মেশিনের নির্দিষ্ট কেন্দ্র এবং নির্দিষ্ট বুথ জানিয়ে দেওয়া হয় দল বা প্রার্থীকে, যাতে তারা ভোটগ্রহণ শেষে ওই কেন্দ্র বা বুথেই সেই নির্দিষ্ট ইভিএমটি খুঁজে পান। মেশিনগুলোর ব্যাটারি স্থায়ীভাবে চার্জ করা। তাই নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সময় কোনো সমস্যা করে না। ভোটিং মেশিন ২৪ ঘণ্টা সিসি ক্যামেরার অধীনে থাকে। যখন নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয় তখন পুলিশ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাই নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যায়। তারা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেকই কাজ করে।

রাজনৈতিক দলের ভোটে অংশগ্রহণের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো ভালো করে উপলব্ধি করে যে, তারা যদি নির্বাচনে না আসে, তাতে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সেজন্য তারা উৎসাহের সঙ্গে ভোটে অংশ নেয় এবং প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই নির্বাচন কমিশনের ওপর গভীর আস্থা হয়েছে। সেজন্য রাজ্য থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত যত ভোট হয়েছে এ যাবতকাল, সব পক্ষ গ্রহণ করেছে এবং সেখানে সরকার গঠিত হয়েছে।

নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা প্রসঙ্গে রাজীব কুমার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্টরাই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় পর্যবেক্ষক। আমরা মনে করি আমাদের ভোটাররাই পর্যবেক্ষক। অবশ্য আমরা ভারতের নির্বাচনী পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকি। অনলাইন-অফলাইন দুইভাবেই তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে।

নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে কত শতাংশ ভোটগ্রহণ মানদণ্ড হতে পারে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এমন নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই। ভারতের শেষ লোকসভা নির্বাচনে ৬৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল। কোনো রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোটও পড়ে। তবে কোথাও ৫০ শতাংশের নিচে পড়েনি।

ভারতের গণতন্ত্র দিনে দিনে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছে উল্লেখ করে সিইসি এসময় ভোটগ্রহণের হার বাড়াতে ও ভোট প্রদানের জটিলতা কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।

এক রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে অন্য রাজ্যে চাকরি বা বসবাস করা ভাসমান ভোটারদের ভোট দেওয়ার জটিলতা নিরসনের আলোচনাও চলছে বলে জানান রাজীব কুমার।

তিনি বলেন, ১৮ বছরের বেশি সবাইকে ভোটার হতে হবে। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তৈরির কার্যক্রম শুরু করেছি। এমনকি ট্রানজেন্ডারদেরও ভোটার করা হচ্ছে। একটি দ্বীপে একজন ভোটার থাকলেও আমরা সেখানে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। এটাও ভোটের অন্যতম একটা চ্যালেঞ্জ।

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা এবং সংস্থাটির ওপর কোনো চাপ না থাকার বিষয়ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সিইসি।পরে সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সামনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া উপস্থাপন করেন নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা।

নির্বাচন কমিশন পরিদর্শনের আগে সাংবাদিক প্রতিনিধি দল  ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম দূরদর্শন (ডিডি) কার্যালয় ঘুরে দেখে। সেখানে ব্রিফিংকালে ভারতজুড়ে ডিডির কার্যক্রমের কথা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বর্তমানে হিন্দি ভাষায় দূরদর্শনের একটি পূর্ণাঙ্গ নিউজ চ্যানেল আছে। ইংরেজি ভাষায় ২৪ ঘণ্টার আন্তর্জাতিক চ্যানেলও দুই বছর আগে শুরু হয়েছে। বাংলাসহ ২৮টি আঞ্চলিক ভাষায় দূরদর্শন টিভি চ্যানেল সম্প্রচারিত হচ্ছে ভারতজুড়ে।

এরপর প্রতিনিধি দলটি কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই) কার্যালয় পরিদর্শন করে। সেখানে ব্রিফিং সেশনে কনফেডারেশনের নেতারা ভারতের শিল্প খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ও এসময় উল্লেখ করেন। পরে রাতে সাংবাদিকরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত