রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল

আমাদের কত অর্জন ছিল, এবার দুর্ভিক্ষ হলে দায় শেখ হাসিনা সরকারকেই নিতে হবে

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২২, ১৯:১৩ |  আপডেট  : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪১

আমাদের কত অর্জন ছিল। গত ১৫ বছরে এই সরকার দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের সমস্ত দেশটাকে তারা কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। তারা এখন দেশের অর্থনীতিকে খেয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেন, ‘হাসিনা কবে যাবে? এই সরকারের কবে পদত্যাগ করবে। আমাদের লক্ষ্য এই সরকারের পদত্যাগ।’

শনিবার দুপুরে রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে অত্যাচার নির্যাতন করে আমাদের এই সরকার আমাদের সর্বনাশ করে দিয়েছে। এখন যেদিকে তাকাবেন চুরি আর চুরি। তারা দেশের অর্থনীতিকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছে’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলেও দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। মানুষ খাবার খেতে না পেরে রাস্তায় পড়েছিল। এখন আবার সেই অবস্থা ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, এবার দুর্ভিক্ষ হলে দায় শেখ হাসিনা ও তার সরকারকেই নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১০টাকা কেজি চাল খাওয়াতে চেয়েছিল কিন্তু এখন ৯০ টাকার চাল খাওয়াচ্ছে। চিনির দামও বেড়েছে। শাকসবজিও মানুষ কিনতে পারছে না। এটা দুর্ভিক্ষের লক্ষণ।

সমাবেশের আগে বাস ধর্মঘটের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার নাকি বিরোধী দলকে ভয় পায় না। তাহলে দুই দিন আগে গাড়ি বন্ধ করেছেন কেন?’

সমাবেশে অসুস্থ হয়ে একজনের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রংপুরের সব জেলার নেতাকর্মীরা অসাধ্য সাধন করেছেন। সেই জন্য আপনাদের স্যালুট।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না। দল নির্দেশ দিলেই আমাদের এমপিরা পদত্যাগ করবে।  তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। তারপর নির্বাচন।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রয়োজনে জাতীয় সরকার হবে। যারা আন্দোলন করেছে তাদের নিয়ে হবে। দেশের অর্থনীতি মেরামত করার জন্য সরকার কাজ করবেন। এ সরকার সব শেষ করে দিয়েছে , তা ঠিক করতে হবে।

তিনি বলেন, হাসিনা বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে চাকরি হয়। ঘুষখোর, ভোট চোর। তাকে আর দেখতে চায়না মানুষ।  ১৫ বছর ধরে অত্যাচার চালিয়েছে, সর্বনাশ করেছে।  অর্থনীতি খেয়েছে। এখন বাংলাদেশ খাওয়ার পায়তারা করছে।

তিনি বলেন, গৃহবন্দী আছেন নেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি অসুস্থ, তবুও তাকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয় নাই। পরিবার, চিকিৎসক বলেছেন তাকে বাইরে পাঠানো দরকার। সে  সুযোগও দেওয়া হয় নাই। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দেওয়া হয়েছে। ৬০০ বেশি মানুষকে গুম করেছে। হত্যা করেছে অনেককে।

দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি প্রসঙ্গে সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এতদিন কি বললেন, দেশ মধ্য আয়ের হয়েছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া হয়ে গেছে। অথচ মানুষ খাবার পায় না। সব কিছুর দাম অতিরিক্ত। কি খেয়ে থাকবে মানুষ।

ফখরুল বলেন, মার্কিন রিপোর্ট বলেছে, এ সরকার মিথ্যা বলে। মানবাধিকার নিয়ে যে রিপোর্ট দেয় তা মিথ্যা। নির্বাচনে জোর করে ক্ষমতায় এসেছে এ সরকার।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, মানুষ এখন তাদের রুখে দেবে। বন্দুক, পিস্তল, লাঠি, রিভলবার সব ভেঙ্গে চুরমার করে দেবে। একনায়ক হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে মানুষ জেগে উঠবে।

গণসমাবেশে বক্তব্য দেন- রংপুর বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামা সামুর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন- সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের মহাসচিব শহিদুল ইসলাম (বাবুল), ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনোকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ জুয়েল প্রমুখ।

এদিকে এদিন বেলা ১২টায় পবিত্র কোনআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় সমাবেশ। পরে দুপুর ২টায় শুরু হয়েছে সমাবেশের মূল আনুষ্ঠানিকতা। এর আগে সকাল থেকেই মিছিল, ব্যানার ও ফেস্টুনে ভরে যায় সমাবেশস্থল। গণসমাবেশে পথের সকল বাধা পেরিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশস্থনে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঢল নামে।

এদিকে বিভাগীয় এ গণসমাবেশ সফল করতে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও রংপুরসহ ৮ জেলা থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হন সমাবেশস্থলে। শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে রংপুর বিভাগে ৩৬ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট শুরু হলেও নানা কৌশলে দলে দলে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা রংপুরে এসে পৌঁছান।

সমাবেশস্থল ও আশপাশে লাগানো হয় ১৩০টি মাইক। সমাবেশের মাঠ ছাড়াও রংপুর নগরজুড়ে সড়কের দুই পাশে সাঁটানো হয়েছে ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন। নগরীর প্রবেশ পথে তৈরি করা হয়েছে তোরণ। বিকেলের পর থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশ মাঠে আসেন।

ঈদগাহ মাঠে ঠাঁই নেই, সড়ক ও অলিগলিতে নেতাকর্মীরা: বিভাগীয় গণসমাবেশে শুরু হয়েছে দুপুর ২টায়। কালেক্টরেট মাঠের সমাবেশে একে একে বক্তব্য দেওয়া শুরু করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে। অনেক নেতাকর্মী মাঠে ঠাঁই পেয়ে আশপাশের সড়ক ও অলিগলিতে অবস্থান নিয়েছেন।

সমাবেশস্থলে জায়গা না পেয়ে পাশের সড়ক অবস্থায় নেওয়া লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতী ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি জিয়াউল হক বলেন, ‘বিএনপির গণসমাবেশ সফল করতে শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে এসেছি। মাঠে ঢুকতে না পেরে পাশের সড়কে অবস্থান করছি।’

৭০০ ভ্যানে সৈয়দপুর থেকে রংপুরে বিএনপির নেতাকর্মীরা:

রংপুরে বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে ব্যাটারিচালিত ৭০০টি ভ্যান নিয়ে রওয়ানা দেয় নীলফামারীর সৈয়দপুর বিএনপির নেতাকর্মীরা। জেলা বিএনপির নেতা আব্দুল খালেক ও লোকমান হাকিমের নেতৃত্বে কামারপুকুর ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে সমাবেশের পথে এ যাত্রা শুরু করেন তারা।

সৈয়দপুর জেলা বিএনপির নেতা মো. আব্দুল খালেক বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের অবিচার, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিভাগীয় গণসমাবেশ চলছে। এ মহাসমাবেশ সফল করতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ভ্যানে করে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।

ধর্মঘটে কার্যত বিচ্ছিন্ন রংপুর: বিএনপির সমাবেশ ও আগের দিন পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সারাদেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে রংপুর। বিভাগটির ৮ জেলায় চলছে না কোনো গাড়ি। এতে অচল হয়ে পড়েছে গোটা বিভাগ। শুক্রবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। দেশের কোনো স্থান থেকেই রংপুরে যাচ্ছে না এবং রংপুর থেকেও কোথাও যাচ্ছে না কোনো ধরনের পরিবহন।

কলা-চিড়া নিয়ে সাইকেলে চেপে রংপুরে বিএনপির সমর্থকরা: বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে রংপুরে বাস ধর্মঘটের কারণে সাইকেলে চেপে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুরের পথে রওনা দেন দলটির কয়েকজন সমর্থক। এ সময় নিজেদের বাইসাইকেলে শুকনো খাবার (চিড়া) ও কলা এবং দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে যাত্রা শুরু করেন তারা। সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার সকালে জেলার সদর উপজেলার বেগুনবারি ইউনয়ন থেকে তারা রওনা হন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, অবৈধ সরকারের টনক নড়ে গেছে। সারাদেশে গণজাগরণ দেখে ভয় পেয়েছে। সেজন্য সমাবেশের আগে বাস বন্ধ করে দিয়েছে। তবে আমাদের এ সমাবেশকে প্রতিহত করতে পারেনি তারা। জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে কালেক্টরেট মাঠ।

সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

ফাঁকা খালেদা জিয়ার চেয়ার:

অন্যান্য সমাবেশের মতো রংপুরের গণসমাবেশের মঞ্চেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য একটি ফাঁকা আসন রাখা হয়।

এর আগে ময়মনসিংহ ও খুলনা সভামঞ্চের ঠিক মাঝখানে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’ লেখা একটি পোস্টার লাগানো চেয়ার রাখা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন স্থানে গুলিতে দলের নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদসহ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার রংপুরে তাদের চতুর্থ বিভাগীয় গণসমাবেশ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত