হিন্দু সংস্কার আইন বিষয়ক আলোচনা সভায় স্বপন ভট্টাচার্য
আমলাদের কলমের খোঁচায় বদলে যায় আইন
প্রকাশ: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৫০ | আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৪
স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেছেন, হিন্দু সংস্কার আইনে নারী-পুরুষ সমতায় প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে আইন পাস হওয়ার কথা থাকলেও, পরবর্তীতে আমলাদের কলমের খোঁচায় তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।
গত শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ বিপু মিলনায়তনে হিন্দু সংস্কার আইন বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের একটি আইনও জনগণের সম্মতিতে হয়নি। এটা হওয়া উচিত নয়। সরকারের উচিত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের সম্মতিকে গুরুত্ব দেয়া। হিন্দু সংস্কার আইনে নারীরা নানাভাবে বৈষ্যমের শিকার। আমার ছেলে সম্পত্তি পেলে আমার মেয়ে কেন পাবে না? সম-অধিকার হওয়া উচিত। একজন সম্পত্তি পাবে, আরেকজন পাবে না; হাজার বছর ধরে চলা এই আইন এখনো চলবে তা আমি মেনে নিতে পারি না। আমার মতে আমার ছেলে যে সম্পত্তি পাবে, আমার মেয়েও তা পাবে। আমি এটার সঙ্গে একমত। আইনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সরকারকে চাপ দিতে হবে।
এ বিষয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, মূলত বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই। তাই দীর্ঘ ২২ বছরেও হিন্দু নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি। যার ফলে তৈরি হচ্ছে নানা বৈষম্য। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে আমার দুই ভাই উত্তরাধিকারসূত্রে বাবার সম্পত্তি পেয়েছে। অথচ আমরা বোনরা পিতার সম্পত্তি পাইনি। তবে সম্পত্তি না পেলেও, আমি আমার বাবার কর্মের অধিকার পেয়েছি। আমার বাবা দীনেষ চন্দ্র দেবনাথ একজন জজ ছিলেন। এদিক থেকে আমি ভাগ্যবতী।
তবে তার মতে, সংস্কার আইনের সমাধান নেই, থাকতে পারে না; তা হতে পারে না। সমাধান আছেই। তা খুঁজে বের করতে হবে। এর জন্য দরকার প্ল্যান অফ অ্যাকশনে যাওয়া। আমাদের কী চাই, তা নির্বাচন করা এবং সেই বিষয়টাই মানুষকে জানানো। তবেই এর সমাধান সম্ভব।
অনুষ্ঠানে অনেক ভুক্তভোগী নারী বলেন, হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র ভারত অনেক আগেই এই আইনের সংস্কার করেছে। নেপাল ও মিয়ানমারও ব্রিটিশ এই আইন পরিবর্তন করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও চান পরিবর্তন হোক; তবে আমাদের বাবা ও দাদারা তা চান না।
স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভলপমেন্ট এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন ২০১৪ সালের জুলাইয়ে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ নারীর সম্পদের মালিকানা নেই। এক শতাংশের সম্পদ থাকলেও পরে তারা তা হারিয়েছে। ২৯ ভাগ নারী সম্পদের মালিক হয়েছে উত্তরাধিকারসূত্রে। তবে এই ২৯ ভাগ নারীর সবাই আসলে মুসলিম পরিবারের আওতাধীন। হিন্দু আইনের আওতাধীন নারীরা সম্পত্তির ক্ষেত্রে প্রায় শূন্য অধিকার নিয়ে বেঁচে আছে। কিছু কর্মজীবী নারী বাদ দিলে সব হিন্দু নারী আশ্রিত-পিতার, স্বামীর, ভাইয়ের কিংবা সন্তানের।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, সমাজকর্মী কাজল দেবনাথ, আওয়ামী লীগের নেত্রী ঝরনা বাড়ৈ, মুক্তা শেরপা, মায়া হক প্রমুখ।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত