আওয়ামী লীগ পালাবার দল নয়, প্রয়োজনে জেলে যাবো: কাদের

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২২, ২০:২৭ |  আপডেট  : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭

ফাইল ফটো

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটকে নির্বাচনি জোট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, এই জোট তাদের নির্বাচনি অ্যালায়েন্স, কৌশলগত জোট। এখানে আদর্শের কোনও বিষয় নেই।

বৃহস্পতিবার ১১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক জরুরি সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় জোটের শরিকরা আন্দোলনকে কীভাবে দেখছে আওয়ামী লীগ, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জোটের শরিকদের দলগতভাবে কর্মসূচি দেওয়ার অধিকার আছে। তারা করতে চাইলে করবে। এটা তো কোনও কথা না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের জোট তো  নির্বাচনি জোট। সেটা তো কৌশলগত জোট। সেখানে আদর্শের কোনও বিষয় নেই। তাহলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমরা কেন জোট করেছি? এসব ব্যাপারতো ভাবতে হবে।’

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা সরকারের ব্যাপার। এটা দলীয় মিটিংয়ে আলোচনা হয়ে করে না। সরকারিভাবে এটা সিদ্ধান্ত হয় এবং এখানে বিদ্যুৎ মন্ত্রণঅলয়ের প্রধান কিন্তু প্রধানমন্ত্রী।’

তিনি বলেন, ‘সারা দুনিয়ার পরিস্থিতি, বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া, সবকিছু জেনেশুনে এটা করা হয়েছে। আমরা আগেই বলেছি, এটা আমরা বাধ্য হয়ে নিরুপায় হয়ে করেছি। মানুষকে আমরা কষ্ট দিতে চাইনি। কিন্তু আমাদের সামনে অন্য কোনও বা বিকল্প কোনও পথ ছিল না। এটা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বাবাজারে তেলের দাম কমলে ঠিক তখনই আমরা তেলের দাম কমাবো। দেশে চার বার আমরা দাম কমিয়েছি। এই উদাহরণ কিন্তু নেই।’

কাদের বলেন, ‘আজকে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে এই পরিস্থিতি হয়েছে। যখন স্বাভাবিক সময় আসবে, তখন আমাদের প্রতিজ্ঞা থেকে পিছিয়ে যাবো না।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,  আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির  মূল্য কমলে আমরাও এখানে সমন্বয় করবো। এটা বলার পরও আজকে বিএনপিসহ তাদের দোসররা  মাঠে নেমেছে এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করছে, বিষোদগার করছে। জ্বালানি তেলে মূল্য নিয়ে নানান কথা বলছে। ৮ হাজারেরও বেশি টাকা বাংলাদেশ ভর্তুকি দিয়েছে। আর কত ভর্তুকি? তারপরও আমাদে নেত্রী বলেছেন, আপনারা একটু ধৈর্য্য ধরুন। আমার তো মনে হয়, এই সংকট  থেকে তিনি মুক্তি দিতে পারবেন। সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের নেত্রীর রয়েছে।’

কাদের বলেন, ‘আজকের সংকট সাময়িক। এই সংকট কেটে যাবে এবং এই সংকট উত্তরণের জন্য সবকিছুই প্রধানমন্ত্রী করে যাচ্ছেন।’

আওয়ামী লীগ রাজপথ থেকে ক্ষমতায় এসেছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা (বিএনপি ও সমমনা দলগুলো) যেভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, রাজপথ মনে করে আমরা ভুলে গেছি। আমরাও আছি। অচিরেই রাজপথে দেখতে পাবেন। শোকের মাসে হয়তো আমরা কিছু কিছু প্রোগ্রাম করছি না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তা করছি— অপপ্রচার, মিথ্যাচার, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। আমাদেরও প্রতিবাদ করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে হবে। সেই জন্য  আগামী ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবসে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে একটা বিক্ষোভ সমাবেশ  করতে চাই। আগামী বুধবার বিকাল চারটায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে সবাই মিলিত হবো। কিছুক্ষণ সমাবেশ করার পর আমরা মিছিল সহকারে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত আসবো। এই কর্মসূচি জেলা, উপজেলা, থানা ও ইউনিয়নে পালন করা হবে।’

এসময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সবাই প্রস্তুত আছেন? আছেন মাঠে? খেলা হবে, মোকাবিলা হবে। যার যা কিছু ফ্রি-স্টাইল বাংলাদেশে হতে দেবো না আমরা।’

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিরোধী কর্মসূচি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটাতো গণতন্ত্রের বিষয়। আমরা তাদের বাধা দেবো কেন? তারা যদি এই আন্দোলনের সঙ্গে সহিংসতার উপাদান যুক্ত করে, আগুন সন্ত্রাস নিয়ে মাঠে নামলে আমরা নীরব হয়ে বসে থাকবো? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কি আঙুল চুষবে? প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে। রাজপথে মোকাবিলা হবে।’

প্রয়োজনে জেলে যাবো

বিএনপিকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা প্রতি দিনই সরকারের পতন দেখতে পাচ্ছেন। প্রতি দিনই (তারা) বলে সরকার পালিয়ে যাবে। কোথায় পালাবো? আমাদের দেশ বাংলাদেশ। পালানোর ইতিহাস আমাদের নেই। প্রয়োজনে দেশের মাটিতে জেলে যাবো। আওয়ামী লীগ পালাবার দল নয়। পালাবার দল আপনারা [বিএনপি]। আপনাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোথায়? তিনি টেমস নদীর তীর কীভাবে দেখেন? জরুরি সরকারের কাছে মুছলেকা দিয়ে এখান থেকে পালিয়ে গেছেন।’

বিএনপি মহাসচিব ময়ুর সিংহাসন দেখছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটা সোনার হরিণ। দিন যায়, রাত যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায়, বছর যায়— কিন্তু সোনার হরিণ, ময়ূর সিংহাসনের দেখা আজও দেখলাম না। তাদের এই স্বপ্ন রঙিন খোয়াবের মতো কর্পূরে উড়ে যাবে। আওয়ামী লীগ যখন মাঠে নামবে, খালি মাঠে গোল হবে না। ফাঁকা মাঠে গোল হবে না।’

ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন— সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, বিপ্লব বড়ুয়া, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম, সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য রিয়াজুল কবির কাওছারসহ সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের নেতারা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত