টি–টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের ৩০৪ রান, দক্ষিণ আফ্রিকার ১৪৬ রানের হার

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৩৮ |  আপডেট  : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩:৩৫

আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের এ যুগে ওয়ানডেতে ২ উইকেটে ৩০৪ রান বেশ ভালো সংগ্রহ। কিন্তু এই সংগ্রহই যদি দেখা যায় টি–টোয়েন্টিতে? অদ্ভুত ও অবিশ্বাস্য, তাই না!

এমন না যে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ন্যূনতম তিন শ রানের দলীয় সংগ্রহ দেখা যায়নি। ২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আফ্রিকান উপ-আঞ্চলিক বাছাই পর্বে গত বছর অক্টোবরে গাম্বিয়ার বিপক্ষে ৪ উইকেটে ৩৪৪ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। শুধু আন্তর্জাতিক নয়, স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিতেই এটি সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে নেপালের ৩ উইকেটে ৩১৪ রানের রেকর্ড ভেঙে সেই নতুন রেকর্ড গড়েছিল জিম্বাবুয়ে।

কিন্তু ম্যানচেস্টারে গতকাল রাতে যা ঘটেছে, সেটার মহিমা জিম্বাবুয়ে ও নেপালের ইনিংস দুটির চেয়েও অনেক বেশি। সিরিজে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হয়েছিল দুই টেস্ট খেলুড়ে দেশ। অন্য চোখে, ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি—ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

এমন ম্যাচে ইংল্যান্ড আগে ব্যাটিংয়ে নেমে তুলেছে ২ উইকেটে ৩০৪! দক্ষিণ আফ্রিকা এই রান তাড়া করতে নেমে হেরেছে ১৪৬ রানে। সিরিজে দুই দল ১–১–এ সমতায় ফেরায় আগামীকাল নটিংহামে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি হয়ে দাঁড়াল সিরিজ নির্ধারণী।

টসে হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে স্রেফ ঝড় বইয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড। প্রথম ১০ ওভারে তুলেছে ১ উইকেটে ১৬৬ রান। ১২.১ ওভারেই ছাড়িয়ে যায় ২০০ রানের কোটা। শেষ পর্যন্ত নিজেদের টি–টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে থেমেছে, যেটা আবার এই সংস্করণের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ। টেস্ট খেলুড়ে দুটি দেশের মধ্যে টি–টোয়েন্টি ম্যাচে এটি সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডও। এর আগে রেকর্ডটি ছিল ভারতের দখলে। ২০২৪ সালে হায়দরাবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা করেছিল ৬ উইকেটে ২৯৭।

ইংল্যান্ডের রেকর্ড গড়ার এই রাতে শিরোনাম ফিল সল্ট। ৮ ছক্কা ও ১৫ চারে ৬০ বলে ১৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। টি–টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের হয়ে শুধু সর্বোচ্চ রানের ইনিংস নয়, সেই পথে ইংল্যান্ডের হয়ে এই সংস্করণে গড়েছেন দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও। ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে লিয়াম লিভিংস্টোনের ৪২ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে ৩৯ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন সল্ট। এই সংস্করণে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ছয়টি ইনিংসের মধ্যে চারটিই সল্টের। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এটি তাঁর চতুর্থ সেঞ্চুরি।

চমৎকার ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ইংল্যান্ড নিজেদের ইনিংসে চার মেরেছে ৩০টি এবং ছয় মেরেছে ১৮টি—অর্থাৎ শুধু বাউন্ডারি থেকেই ২২৮ রান তুলেছে ইংল্যান্ড, যা তাদের মোট রানের ৭৫%। তাতে অবশ্য শুধু সল্ট নয়, ৩০ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেলা জস বাটলারের অবদানও কম নয়। ৭ ছক্কা ও ৮ চারে সল্টের (২৩৫.০০) চেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন বাটলার (২৭৬.৬৬)। ২১ বলে ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি ব্রুক।

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের জন্য রাতটা ছিল স্রেফ দুঃস্বপ্নের। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে তাঁরা এর আগে কখনোই এত রান হজম করেননি। তাঁদের তিনজন বোলার এক ম্যাচে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের তালিকায় শীর্ষ ছয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। কাগিসো রাবাদা (০/৭০), লিজাদ উইলিয়ামস (০/৬২) ও মার্কো ইয়ানসেন (০/৬০)। শুধু তাই নয়, শৃঙ্খলাও ছিল না বোলিংয়ে। ৮টি ওয়াইড দেওয়ার পাশাপাশি ৫টি নো-বল করেন প্রোটিয়া বোলাররা।

ওভারপ্রতি ১৫.২৫ করে তোলার লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে হালে পানি পায়নি প্রোটিয়া ব্যাটিং। ৩.৩ ওভারে বিনা উইকেটে ৫০ রান তুললেও জেতার মতো ব্যাটিং করতে পারেনি। ২০ বলে ৪১ রান করেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। বিয়ন ফরচুনের ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ বলে ৩২। শেষ পর্যন্ত ১৬.১ ওভারে ১৫৮ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৫ রানে ৩ উইকেট নেন ইংল্যান্ডের পেসার জফরা আর্চার।

ম্যাচসেরা সল্ট জয়ের পর বলেছেন, ‘ক্রিজে সময়টা উপভোগ করেছি, ম্যাচেও প্রভাব ফেলতে চেয়েছিলাম। ভালো স্ট্রাইক রেটে নিজের খেলাকে আমি যতটা গভীরে সম্ভব টেনে নিতে চাই। এ দুটো কাজ একসঙ্গে সব সময় করা যায় না, কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে আমি এটাই করতে চাই। লক্ষ্য আসলে এটাই। আমি এই কাজে বিশ্বের সেরা হতে চাই।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ৩০৪/২ (সল্ট ১৪১*, বাটলার ৮৩, ব্রুক ৪১*; ইয়ানসেন ০/৬০, রাবাদা ০/৭০, উইলিয়ামস ০/৬২)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৬.১ ওভারে ১৫৮ (মার্করাম ৪১, ফরচুন ৩২, স্টাবস ২৩, ফেরেইরা ২৩; আর্চার ৩/২৫, ডসন ২/৩৪)

ফল: ইংল্যান্ড ১৪৬ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: ফিল সল্ট (ইংল্যান্ড)

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে ১–১–এ সমতায় দুই দল।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত