আগামীকাল শুক্রবার বিএনপির মহাসমাবেশ করার ঘোষণা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৩, ১১:৩৯ |  আপডেট  : ২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪১

পুলিশের অনুমতি পাওয়া নিয়ে দিনভর নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত বিএনপি তাদের মহাসমাবেশ এক দিন পিছিয়েছে। কাঙ্ক্ষিত জায়গায় অনুমতি না পেয়ে এখন সাপ্তাহিক ছুটির দিন আগামীকাল শুক্রবার বেলা দুইটায় ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মহাসমাবেশের জায়গা নিয়ে পুলিশের আপত্তিতে সৃষ্টি হয়েছিল সংকট। দিনভর এ নিয়ে টানাপোড়েনের একপর্যায়ে গতকাল বিকেলে জলকামান, রায়ট কার নিয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সমানে। 

পুলিশের এ ধরনের অবস্থানের মুখে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর বৈঠক করেন। পরে গত রাত নয়টায় বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এক অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক দিন পিছিয়ে আগামীকাল মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, এই মহাসমাবেশে সরকার কিংবা সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বাধা সৃষ্টি করবে না বলে তাঁরা আশা করেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, নাকি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ হবে—এই দোটানায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যেও একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। ইতিমধ্যে ঢাকার বাইরে থেকে এসে পড়া নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনেও জড়ো হতে থাকেন। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশের সময়েও প্রায় একই রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তখনো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, নাকি নয়াপল্টনে সমাবেশ হবে—তা নিয়ে টানা কয়েক দিন নাটকীয়তা চলেছিল। যদিও অনেক ঘটনার পর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপি গণসমাবেশ করে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে। তবে এবার বিএনপি গোলাপবাগে মহাসমাবেশ করতে রাজি হয়নি।


পুলিশ বিএনপিকে ঢাকার গোপীবাগ এলাকায় গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু দলটি তাদের প্রস্তাবিত নয়াপল্টন এলাকা অথবা সোহরাওয়ার্দীর উদ্যান ছাড়া অন্য কোথাও মহাসমাবেশ করতে রাজি হয়নি। এই দুটি জায়গা নিয়ে আপত্তির ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মদিবসে রাস্তায় সমাবেশের কর্মসূচিতে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়কে যুক্তি হিসেবে দেখায়।

তবে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ঢাকার মহাসমাবেশ ঘিরে উৎসুক নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হন। এ অবস্থায় পুলিশ বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে জলকামান ও সাঁজোয়া যান নিয়ে কিছুটা মারমুখী অবস্থান নেয়। তারা বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নেতা-কর্মীদের নয়াপল্টন এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়।

এদিকে মহাসমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল। এ জন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা নয়াপল্টন—দুটির কোথাও সমাবেশ করতে পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় তাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেননি। তাঁরা ছয়টার দিকে নয়াপল্টন থেকে বের হয়ে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যান। সেখানে দলটির নেতারা আরেক দফা বৈঠক করেন।

এর আগে গতকাল সারা দিন মহাসমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির মহাসচিবসহ একাধিক নেতা কয়েক দফায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের (ডিএমপি) সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু পরিষ্কার জবাব পাচ্ছিলেন না। কয়েকবার যোগাযোগ করার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিএমপি কমিশনার বিএনপির নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরীকে জানান, তিনি আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানাবেন। বেলা সোয়া একটার দিকে ডিএমপি কমিশনার বিএনপির নেতাদের জানান, তাঁরা কর্মদিবসে জনদুর্ভোগ ও নিরাপত্তা বিবেচনায় নয়াপল্টন বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিতে পারছেন না। ডিএমপি কমিশনার বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠে মহাসমাবেশ করার পরামর্শ দেন; কিন্তু বিএনপির নেতারা তাতে রাজি হননি।

জানা গেছে, বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি কর্মদিবসের পরিবর্তে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার জুমার নামাজের পর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার নতুন প্রস্তাব দেন। সাড়ে ছয়টার দিকে পুলিশ কমিশনার জানান, তিনি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে জানাবেন।

এ পর্যায়ে মির্জা ফখরুল ইসলামসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নয়াপল্টনের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গুলশানের কার্যালয়ে যান। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ভার্চ্যুয়াল সভা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা শুক্রবার বেলা দুইটায় নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবেন।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ২৭ জুলাইয়ের পরিবর্তে আগামী ২৮ জুলাই শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বেলা দুইটায় নয়াপল্টনে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিচ্ছে।’

শুক্রবার আর কোনো বাধা সৃষ্টি করা হবে না—এমন প্রত্যাশা রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করি, দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চলমান গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আয়োজিত এই মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানে সরকার কিংবা সরকারের কোনো প্রতিষ্ঠান বাধা সৃষ্টি করবে না।’

ফখরুল বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আয়োজিত যেকোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করার যেকোনো অপচেষ্টা দেশবাসী প্রকৃত পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বাধা সৃষ্টি হিসেবেই দেখবে এবং এমন অপচেষ্টা গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা সৃষ্টিকারী হিসেবে গণ্য হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মুজিবর রহমান সরোয়ার উপস্থিত ছিলেন।

তবে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনের পর শুক্রবার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল রাত সোয়া নয়টার দিকে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা বিএনপির ঘোষণা। আমরা এখনো অনুমতি দিইনি।’

২৩ জুলাই বিএনপির কেন্দ্রীয় দুই নেতা আমানউল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে মহাসমাবেশের বিষয়ে কথা বলেছিলেন। সেখানে তাঁরা নয়াপল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার কথা জানিয়েছিলেন। পরদিন ২৪ জুলাই দুটি স্থানের কথা উল্লেখ করে বিএনপির পক্ষ থেকে মহাসমাবেশের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছিল। এরপর গত দুই দিনে দলের পক্ষে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেছিলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) যে কী চায়, নিজেরাই পরিষ্কার করে দিয়েছে। এরপর আমাদের আর কিছু বলার দরকার আছে কী? গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, শিষ্টাচার আর কিছুই থাকল না। এটা হচ্ছে গায়ের জোরের রাজনীতি।’

বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে মহাসমাবেশ এক দিন পেছানোর পর ১২–দলীয় জোটসহ অন্যান্য দল ও জোটও তাদের কর্মসূচি পিছিয়ে শুক্রবার করার ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে ১২–দলীয় জোট বেলা তিনটায় বিজয়নগরে মহাসমাবেশ করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট দুপুর ১২টায় আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে, গণফোরাম বেলা তিনটায় নটর ডেম কলেজের সামনে, এবি পার্টি বেলা ১১টায় বিজয় ’৭১–এর সামনে সমাবেশ করবে। অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি, গণ অধিকার পরিষদের দুই অংশও শুক্রবার সমাবেশ করবে। গণতন্ত্র মঞ্চ আজ কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত