১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা  ও ৩ নভেম্বর হত্যা একই সূত্রে গাঁথা

  মো.জয়নাল আবেদীন

প্রকাশ: ৩ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪১ |  আপডেট  : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২১:৫০

স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে পরিবার ও আত্বীয় স্বজন সহ  হত্যা এবং আড়াই মাস পরে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী জাতীয় চার নেতার হত্যাকান্ড একই সূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পৃথিবীর পরাশক্তি দু’ভাগ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের পক্ষে ছিল ভারত,রাশিয়া ও রাশিয়ান ব্লকের পূর্ব ইউরোপীয় সমাজতান্ত্রিক দেশ সমূহ। আর বিপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরবসহ সকল মুসলিম দেশ সমূহ। সে যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছিলাম ভারত রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সহায়তায় আর মুজিব নগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, উপ রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মন্ত্রী মনসুর আলী ও কামারুজ্জামানের দৃঢ়তায়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় খন্দকার মোশতাক আহমদ- ❝ বঙ্গবন্ধুকে চাও না স্বাধীনতা চাও ❞  বলে তৎপরতা চালিয়েছিল  সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে। মার্কিনীদের সহায়তায় মেশতাক এ ষড়যন্ত্র চালায়। মোশতাক ছাড়াও আরো ২/৩ জন মুজিব নগর সরকার গঠনের বিরোধিতা করেছিল, যা ছিল এক অর্থে স্বাধীনতারই বিরোধিতা। তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সড়ানোর চেস্টাও করেছিলকেউ কেউ। কিন্তু সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদের কূটনীতিক বুদ্ধির কারনে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি।

স্বাধীনতার পরে দলের ভেতরের এই অপশক্তিরা বসে থাকেনি। তারা অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে। তাজউদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলতে বলতে এই অপশক্তির দল বঙ্গবন্ধুর কান ভাড়ি করে। বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীনকে উপেক্ষা করতে থাকেন। তাজউদ্দীনের পরামর্শ না শুনে বঙ্গবন্ধু আমেরিকার দিকে ঝুঁকেন। ১৯৭৪ সালে হেনরী কিসিঞ্জার -এর ঢাকা সফরের আগে তাজউদ্দীন আহমদকে মন্ত্রী পরিষদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়েছিল আমেরিকাকে খুশি করার জন্য। 

লাহোরে ইসলামি শীর্ষ সম্মেলনেও বঙ্গবন্ধুকে না যেতে পরামর্শ ছিল তাজ উদ্দীনের। তিনি বলেছিলেন একজন মন্ত্রীকে পাঠাতে। কারণ প্রটোকল অনুসারে সরকার প্রধান কোন দেশে গেলে সে দেশের সরকার প্রধানকে আমন্ত্রণ জানাতে হয়। যার প্রেক্ষিতে জুলফিকার আলী ভুট্টো জুলফিকার আলী ঢাকা সফরে আসেন। এতে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি রাজনৈতিকভাবে চাঙা হয়ে ভুট্টা কে রাজকীয় সংবর্ধনা জানায় সড়কের দু'ধারে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান দূতাবাসের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঢালা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শিবিরে।

তাজউদ্দীন আহমদ মন্ত্রীত্ব ত্যাগের আগে লালফোনে বঙ্গবন্ধুকে একদলীয় শাসনে যেতে নিষেধ করেছিলেন।এবং এতে বঙ্গবন্ধু ও মুজিবনগর সরকারের প্রায় সবাই হত্যা হবে তাও বলেছিলেন।কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীনের কথা আমলে নেননি।

পুলিশ, রক্ষীবাহিনী, ডিজিএফআইসহ ভারত ও রাশিয়ার গোয়েন্দারা বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু কারো পরামর্শ শোনেননি। যার পরিনতিতে ১৫ আগস্টে তিনি ও জেলে চার নেতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী শক্তির হাতে নিহত হন। যা ছিল ১৯৭১ সালের বাঙালির বিজয়ের প্রতিশোধ। এতে আমরা দু’দশক পিছিয়ে যাই। পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশ চলে যায়। এখনও আমরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পূর্বাবস্থায় যেতে পারিনি রাজনৈতিক চিন্তা ও ধ্যান ধারণায় ।

স্বাধীনতার পরে সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আরো কৌশলি হওয়া উচিত ছিল। রক্ষীবাহিনী না করে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গঠন করা উচিত ছিল। পাকিস্তানে আটকে পড়া সেনাবাহিনীর সদস্যদের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করাও একটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। ১৯৭২ সালে জাতীয় সরকার করা উচিত ছিল। তা করা হলে জাসদ হতো না। হক, তোয়াহা, সিরাজ শিকদারকে সরকারে নিয়ে আসতে পারতেন বলে সিরাজুল আলম খান বঙ্গবন্ধুকে জানিয়েছিলেন। খন্দকার মোশতাককে দল থেকে বহিস্কার করা উচিত ছিল। ১৯৭৫ সালে এক দলীয় বাকশাল করা ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না।তাজউদ্দীন আহমেদের থেকে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের ঘটনা শোনা উচিত ছিল। তাঁকে উপেক্ষা করা ছিল চরম ভুল।আরো ভুল ছিল ধানমন্ডির বাসায় থাকা।

বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার, আত্বীয়-স্বজন যারা ১৫ আগস্টে শহীদ হয়েছেন তাঁদের জন্য জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করি। জেল হত্যা শিকার জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আল্লাহ তাঁদের জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।


  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত