বাংলাদেশে নতুন নির্বাচিত সরকারের সাথে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১৮:২০ | আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ২৩:৫৪

সম্প্রতি চীন সফর করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। এই সফরকে সার্বিকভাবে সফল আখ্যায়িত করে প্রতিনিধি দলের প্রধান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে কাজ করতে চায় চীন। দেশটি নতুন নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ফখরুল এসব কথা বলেন। চীন সফর সম্পর্কে জানাতে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
সম্প্রতি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল চীন সফরে যায়। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়য়া, জহির উদ্দিন স্বপন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার।
ফখরুল বলেন, পাঁচ দিনব্যাপী এই সফরে আমরা চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং চীন সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় করার সুযোগ পেয়েছি। যাদের মধ্যে ছিলেন- চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপল'স কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী মিস্টার লিউ জিয়ানচাও, সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার মিসেস সান হাইয়ান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী সম্প্রতি উদযাপিত হয়েছে। এটা সেই ঐতিহাসিক সম্পর্ক যা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চীন সফরের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল এবং যা পরবর্তী সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে সফরের মাধ্যমে আরও ঘনিষ্ঠতর হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকে চীনা নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ চীন সম্পর্ক উন্নয়নে এই দুই ব্যক্তিত্বের অবদান সসম্মানে ব্যক্ত করেছেন। বিশেষ করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য এবং ন্যাশনাল পিপল'স কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংসং এর সঙ্গে গ্রেট হল অব পিপলে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক সভায় যেখানে তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ। এসময় আমাদের পক্ষ থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে 'এক চীন নীতি'র প্রতি আমাদের দলীয় অবস্থান দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয়েছে।
ফখরুল বলেন, পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংর নেতৃত্বে বৈঠকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে চীনের অবদানসমূহ আমাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীতে ডিজিটাল প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, মেডিকেল ও স্বাস্থ্যসেবা, উচ্চশিক্ষা, যোগাযোগ, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, এসএমই বিজনেস, ব্লু ইকোনমি উন্নততর প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে চীনের অধিকতর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক অবস্থান সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ করে আমরা এর অধিকতর প্রয়োগিক দৃষ্টান্ত দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। যাতে আমাদের মাঝে সাংস্কৃতিক ও সফর বিনিময়, প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে সেটা আরোও দৃঢ়তর হতে পারে। আমরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ স্বেচ্ছা এবং সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে চীনের অধিকতর এবং কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের পক্ষ থেকে পারস্পারিক মর্যাদা সমুন্নত রেখে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ভাবনায় এমন সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছি যেখানে জনগণ এবং জনকল্যাণের অগ্রাধিকার যেন থাকে সর্বোচ্চ স্থানে। আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিবেচনায় নির্যাতিতদের পক্ষে তাদের অবস্থানকে আমরা সম্মানের সাথে অভিনন্দিত করেছি এবং এর ব্যাপকতা দৃশ্যমানতার আহ্বান জানিয়েছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিগত ১৭ বছরের অনাকাক্ষিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে সহনীয় করতে আমরা ঋণ পরিশোধ সময়সীমা বৃদ্ধি, বিভিন্ন ফি পুনর্বিবেচনা এবং অনুদানের সম্ভাব্যতার বিষয়েও তাদের সহায়তা চেয়েছি। যেটা তারা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশ চীন ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল নির্মাণ, দেশের উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও রফতানি সুযোগ বৃদ্ধির বাস্তব পদক্ষেপ কুনমিংয়ে চারটি বিশেষায়িত হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সহজতর করা, চীন-বাংলাদেশের মাঝে স্থলপথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ, এগুলোও আমাদের আলোচ্য সূচিতে ছিল, যা ইতিবাচকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
ফখরুল বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে দুই বছর মেয়াদী রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আমরা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছি। এ সময় তিনি জানান, দ্রুতই একটি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে নতুনভাবে কার্যক্রম শুরুর ব্যাপারে চীনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সানঝি প্রদেশে কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারির সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে আমরা উচ্চশিক্ষা বিনিময় তাদের সঙ্গে গার্মেন্টস শিল্প স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বিবেচনায় রাখার প্রস্তাব বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছি। সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্ব ছিল জিয়ান শহরতলীর একটি আদর্শ গ্রাম পরিদর্শন যা গ্রামবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণে তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিনোদন, কর্মসংস্থানের অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
সফরকে ইতিবাচক উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, সার্বিকভাবে এই সফরের মাধ্যমে আমরা দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও উন্নততর ও ঘনিষ্ঠতার সুযোগ পেয়েছি, যা আগামীতে আরও প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশাবাদী। এই সফর আয়োজনের উদ্যোক্তা হিসেবে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি, ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস এবং আমন্ত্রণকারী চীন কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত