হিলারি ক্লিনটন 'যুদ্ধাপরাধী' এবং 'ভণ্ড' বলে অভিহিত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিশ্ববাসীর ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ

  অভিজিৎ বড়ুয়া অভি

প্রকাশ: ৫ মার্চ ২০২৪, ১৬:৩৩ |  আপডেট  : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৪৩

বার্লিনে প্রতিবাদকারীরা ও একটি অনুষ্ঠানের দর্শকরা হিলারি ক্লিনটনকে 'যুদ্ধাপরাধী' এবং 'ভণ্ড' বলে অভিহিত করেছেন। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে তার জড়িত থাকার নিন্দা করেছেন। ১৯ ফেব্রুয়ারী বার্লিনে ওয়ার্ল্ড ফোরামের ইভেন্ট চলাকালীন, সিনেমা ফর পিস আয়োজিত অনুষ্ঠানে হিলারিকে বক্তৃতা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সে অনুষ্ঠানের প্রতিবাদকারীরা ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে ২৯০০০ এরও বেশি বেসামরিক নাগরিক এবং ১২০০০ ও বেশি শিশুকে হত্যাকারী ইসরায়েলকে সমর্থনের জন্য হিলারি ক্লিনটনকে 'যুদ্ধাপরাধী' বলে অভিহিত করেন । গাজায় বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে হিলারি হতবাক কিনা জানতে চাইলে, হিলারি উত্তর দিয়েছেন, 'অবশ্যই আমি হতবাক নই, কারণ যুদ্ধে এটি ঘটে।' তিনি গাজায় হতাহতের সংখ্যা দেখে "মর্মাহত হননি" বলে বলতে থাকেন। এর প্রতিক্রিয়ার একজন অংশগ্রহণকারী চিৎকার করে বলেন: "ইসরায়েল নিজেকে রক্ষা করছে না, এটি একটি গণহত্যা যার জন্য আপনি অর্থ প্রদান করছেন। তারপরও আপনি নারী অধিকারের কথা বলেন? আপনি কি সিরিয়াস? আপনি কোন নারী অধিকারের কথা বলছেন?" সংহতি কর্মী আরও বললেন: “এখন আপনি শান্তির জন্য সিনেমার কথা বলছেন? আমরা গণহত্যার সিনেমা দেখছি। আপনি নারী নন; আপনি মানুষ না! আপনার লজ্জিত হওয়া উচিত। আপনার হাত রক্তাক্ত!” রক্ষীরা যখন সেই কর্মীদের হল থেকে বের করে দিয়েছিল, তখন অন্যরা চিৎকার করে বলছিল: “আপনারা শত শত পাকিস্তানি হত্যার জন্য দায়ী। আপনি আফগানিস্তানে, ইরাকে, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধকে সমর্থন করেছেন। আপনি একজন যুদ্ধাপরাধী। আপনি  ভন্ড"। সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভিস্টদের প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে যে, সোমবার জার্মান রাজধানীতে সিনেমা ফর পিস আয়োজিত সম্মেলনে হিলারি তার বক্তৃতার সময় প্রায় সাতবার বাধা পেয়েছিলেন।

হিলারির বিরুদ্ধে সমালোচনা চলার সত্ত্বেও, তিনি বক্তৃতা অব্যাহত রাখেন এই বলে যে, "৭ই অক্টোবরের হামলাটি ছিল একটি সন্ত্রাসী হামলা যা হলোকাস্টের পর থেকে ইহুদি জনগণের সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটায়।" তখনই একজন অ্যাক্টিভিস্ট উঠে বলেন: “হিলারি আপনার, মানবাধিকারের কথা বলার সাহস কিভাবে হল, যখন ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার রক্ষার নামে হত্যা করা হচ্ছে? লজ্জা করে না আপনার।"

এর পূর্বে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে হিলারি ক্লিনটনকে হেনস্তা করেছিল বিক্ষোভকারীরা। স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত "সংঘাত-সম্পর্কিত যৌন সহিংসতা প্রতিরোধ এবং মোকাবেলা" শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে হিলারির বক্তৃতা করছিলেন, তখন একজন পুরুষ চিৎকার করে বলতে থাকেন, "হিলারি ডায়ান রডহ্যাম ক্লিনটন!" “তুমি একজন যুদ্ধাপরাধী! লিবিয়ার জনগণ! ইরাকের জনগণ! সিরিয়ার জনগণ! ইয়েমেনের জনগণ এবং এখন ফিলিস্তিনের জনগণকে হত্যাকারী!” “ আপনি একজন যুদ্ধাপরাধী! লিবিয়ার জনগণ, ইরাকের জনগণ, সিরিয়ার জনগণ, ইয়েমেনের জনগণ, ফিলিস্তিনের জনগণ এবং সেইসাথে আমেরিকার জনগণ আপনাকে কখনই ক্ষমা করবে না"। তারা "মুক্ত, মুক্ত প্যালেস্টাইন" এবং "হিলারি ডায়ান রডহ্যাম ক্লিনটন, আপনি একজন যুদ্ধাপরাধী" স্লোগান দিতে থাকেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওবামা প্রশাসনের অধীনে হিলারি পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসাবে তার মেয়াদকালে বিভিন্ন দেশের  জনগণের উপর চালানো গণহত্যার জন্য বিক্ষোভকারীরা হিলারিকে দায়ি করেন। এর আগে অক্টোবরে হিলারি একই ধরনের বাধার মুখোমুখি হয়েছিলেন। ইউক্রেন এবং ইস্রায়েলের জন্য অতিরিক্ত অর্থায়নের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের আহ্বানকে নিন্দা করার সময়, একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্যানেল আলোচনায় একজন সদস্য তাকে বাধা দেয়।

তাছাড়াও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনও ভার্জিনিয়া রাজ্যে একটি প্রচার সমাবেশে বিক্ষোভকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হন। বিক্ষোভকারীরা 'জেনোসাইড জো': বলে চিৎকার করে ১২ বারের বেশি বিডেনের সমাবেশকে ব্যাহত করেন। বিক্ষোভকারীরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনকে ইসরায়েলের প্রতি অটল সমর্থনের জন্য তাকে দায়ী করেন। বিক্ষোভকারীরা বলছিল, "ইসরায়েল প্রতি ঘন্টায় দুই জন মা কে হত্যা করে" এবং বিডেনকে জিজ্ঞাসা করছিল, "আপনি কতজন শিশুকে হত্যা করেছেন?" অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে, বিক্ষোভকারীরা "আপনার লজ্জা পাওয়া উচিত" বলে স্লোগান দেয় এবং ইসরায়েলের জন্য সমস্ত মার্কিন সহায়তা বন্ধ করার আহ্বান জানায়। "আমরা আপনাকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করছি," তারা বলতে থাকেন। তারা আরো বলেন, "বাইডেন, আমরা নির্বাচনে আপনাকে ভোট দেব না।" বিক্ষোভকারীরা ইস্রায়েলের প্রতি বিডেনের সমর্থনের জন্য তাকে ধিক্কার দিতে থাকেন। মার্কিন মিত্র ইসরায়েল ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫৫০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহত ফিলিস্তিনিদের অধিকাংশ, আনুমানিক দুই-তৃতীয়াংশ, নারী ও শিশু।

বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.ইউনূসের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন এই হিলারি ক্লিনটন। তিনি, ইউনূসকে করা হয়রানি রুখে দিতে বিশ্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ড. ইউনূসকে বাঁচাতে ২০১১ সালের মার্চ মাসে শেখ হাসিনা সরকার গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. ইউনূসকে অপসারণ করলে ড. ইউনূসকে তার পদে ফেরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। হিলারি তখন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেছিলেন যেন ড. ইউনূসকে তার পদে রাখা হয়। উল্লেখ্য যে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্পর্ক বেশ ভালো। ২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করলে সে সময় ড. ইউনূস মোটা অঙ্কের টাকা হিলারি ক্লিনটনকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য দিয়েছিলেন। ড. ইউনূসের নোবেল পাওয়া নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। কথিত রয়েছে যে, মার্কিন লবিংয়ে ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলের প্রধান সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থক। মার্কিনদের এই সমর্থনের ফলে ইসরায়েল অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নৃশংস যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। আর সারা বিশ্ব জুড়ে মানবিক মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ওবামা প্রশাসনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনকে যুদ্ধাপরাধী, লিবিয়ার, ইরাকের, সিরিয়ার, ইয়েমেনের এবং এখন ফিলিস্তিনের জনগণকে হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে ধিক্কার দিচ্ছে। তাছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত নারী নিপীড়ক ও নারী পাচারকারী জেফরি এপস্টেইন–সংশ্লিষ্ট একটি মামলার নথিতে নাম এসেছিলো সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের। নথিতে হিলারি ক্লিনটনকে ‘সুনির্দিষ্ট ১৩ জন প্রত্যক্ষদর্শীর’ একজন হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভার্জিনিয়া জুফরে। হিলারি ক্লিনটন 'যুদ্ধাপরাধী' এবং 'ভণ্ড' বলে অভিহিত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিশ্ববাসীর ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ।

লেখকঃ কথা সাহিত্যিক, কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক

লেখকঃ কথা সাহিত্যিক, কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক

 

সান
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত