হরতালে বাধা দিলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি হেফাজতের
প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২১, ১৫:০২ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫০
হেফাজতে ইসলামের ডাকা রোববারের হরতালে বাধা দিলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির মহাসচিব নূরুল ইসলাম। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জড়ো হয়ে শনিবার বিক্ষোভ থেকে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বিক্ষোভ হলেও সেখান থেকে কোনো মিছিল বের করেনি দলটি। শান্তিপূর্ণ ভাবেই এদিন তাদের কর্মসূচি শেষ করেছে ইসলামি দলটি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ থেকে সংঘর্ষে জড়ায় হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীরা। তারা সরকার দলীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ কর্মীদের সঙ্গে প্রথমে সংঘর্ষে জড়ালেও পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে এই সংঘর্ষের প্রতিবাদে বিকেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা।
হাটহাজারীরে হেফাজতের সদরদপ্তরের কাছের মাদ্রাসা থেকে মিছিল বের করে কর্মীরা সরকারি ডাকবাংলো, স্থানীয় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় ও পরে থানায় হামলা করে।
হেফাজত কর্মীরা তেড়ে যায় থানায়। সেখানে পুলিশের ওপর করে হামলা। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার পর গুলি করতে বাধ্য হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গুলিবিদ্ধ আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চার জনকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকরা।
এর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার দেশ জুড়ে বিক্ষোভ ও রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় হেফাজত। শনিবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ করতে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জড়ো হতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আগামীকাল যদি আমাদের হরতালে বাধা দেয়া হয় তাহলে এর চেয়েও কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি দেয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু মসজিদে ঢুকে আমাদের সন্তানদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য আমরা কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।’ এ সময় হেফাজত ইসলামের নায়েবে আমীর মাহফুজুল হক বলেন, ‘আগামীকাল হরতালে কোনো বাধা দেয়া হলে সেখান থেকেই লড়াই শুরু হবে।’
সকাল থেকেই জড়ো হয় নেতা-কর্মীরা
বিক্ষোভ করতে সকাল সোয়া ১১টা থেকেই বায়তুল মোকারমের উত্তর গেটে জমায়েত হতে থাকেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। এ সময় শান্তিপূর্ণভাবে সেখানে অবস্থান করেন তারা। সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হেফাজতের কর্মীদের সংখ্যাও সেখানে বাড়তে থাকে।
পরে ১১টা ৪০ মিনিটে হেফাজতের নেতা মামুনুল হকসহ অন্য নেতারা যখন কর্মসূচি যোগ দেন যখন হেফাজতের কর্মীরা ‘মোদির দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, হাসিনা জবাব দে’ এমন স্লোগান দেন।
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে পুলিশ এ সময় বেশ শান্ত অবস্থায় ছিল। বায়তুল মোকাররম মসজিদের থেকে বেশ দূরে পল্টন মোড়ে ছিল পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান।
দুপুর ১২টায় বিক্ষোভে বক্তব্য দেন হেফাজতে নেতারা। তবে বক্তব্য শেষে কোনো মিছিল করেনি ধর্মভিত্তিক সংগঠনটি।
মামুনুলের যুদ্ধ ঘোষণা
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মানুনুল হক বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের সন্তানদের রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছে। বাধ্য হয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী রাজপথে নেমে এসেছেন।’
‘আমরা হরতালের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। স্পষ্ট বলতে চাই, আজ ও আগামীকাল যদি আপনাদের সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনী আওয়ামী সন্ত্রাসের ভয়াল রাজত্ব বহাল রাখবার চেষ্টা করে সারা বাংলাদেশে আবার যুদ্ধ হবে।’
তিনি বলেন, গতকাল সরকারের বাহিনী বায়তুল মোকারামে নামাজ শেষে জুম্মার নামাজে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। ভয়াল জনপদে পরিনত করেছে এই এলাকাকে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘গতকাল এখানে মহড়া দেয়া হয়েছে। ১০০-২০০ হোন্ডা নিয়ে হেলমেট সন্ত্রাসী বাহিনী এখানে মড়হা দিয়ে গোটা দেশে এক আতঙ্কজনক পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। কারা সেই হেলমেট বাহিনী তাদের পরিচয় আমরা জানতে চাই।
‘জনতা যদি রাজপথে নেমে আসে হেলমেট বাহিনী পালাবার পথ খুঁজে পাবে না। যার সকল দায়িত্ব আপনাদেরকেই বহন করতে হবে।’
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের ওপর শাপলা চত্বরে পুলিশের হামলা প্রসঙ্গ টেনে হেফাজতের এই নেতা বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে এভাবেই যারা গুলিস্তান, পল্টন, বিজয়নগর এলাকায় হেফাজতের কর্মীদের রক্ত দিয়ে ঢাকা পথ তারা রঞ্জিত করেছিল। শাপলা চত্বর যাদের হাতে রক্তে ভেসেছিল। সেই বাহিনী আবার কালকে মাঠে নেমেছে। এই সন্ত্রাসীরা বেশি দিন আস্ফালন করার সুযোগ পাবে না।’
পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা দেশের জন্য কাজ করবেন। রাষ্ট্রের সেবা করবেন। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দেবেন। আপনাদের কোন দলের সেবা-দাস হওয়ার জন্য রাখা হয়নি। আমরা লক্ষ্য করেছি আপনাদের ছত্রছায়ায় হেলমেট বাহিনী এসে আমাদের সন্তানদের ওপর গুলি চালায়।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব, সহকারী মহাসচিব জসিম উদ্দিন, হাসান জামিল, অর্থ সম্পাদক মনির হোসেন কাসেমী, হেফাজতের ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি আহমেদ আলী কাসেমী, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, অধ্যাপক আব্দুল জলিলসহ অন্যরা।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত