সড়ক ব্যবস্থাপনাঃ বেলায়েত হোসেন খান বিল্লালের মৃত্যু
প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:২৩ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৭
২৬ আগস্ট শনিবার আবুল কাশেম খান খোকন ফোন করে জানায় হান্নান খান (গ্রামনগর বার্তার প্রকাশক) এর ভাই মারা গেছেন আমি খবর পেয়েছি কি না। নজরুল ইসলাম খান হান্নান সামাজিক ও সৃজনশীল কর্মকান্ডের একজন পৃষ্ঠপোষক,পররোপকারী ও সমাজ কর্মী। তার পিতা দরবেশ আলী খান ছিলেন একজন ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের নেতা। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভা করতে গিয়ে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য পদপ্রার্থী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের সফরসঙ্গী হিসেবে রাতের খাবার ও রাত্রি যাপন করেছিলাম দরবেশ আলী খাঁনের বাড়িতে। সে থেকে এ পরিবার আমার পরিচিত।
খোকন খাঁনের ফোন পেয়ে আমার ধারনা হলো - হান্নানের বড় ভাই কুমারভোগ ইউনিয়নের দুবারের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ খান অসুস্থ কয়েক মাস যাবত - হয়তো নূর মোহাম্মদ ভাইইয়ের কিছু হলো কি না। হান্নান খানকে ফোন দিলাম কয়েকবার, কিন্তু ফোন বন্ধ। ফেসবুক চালু করে অলোক মিত্রের পোস্টে সর্বপ্রথম জানতে পারি হান্নানের সহোদর ভাই বিল্লাল, ডেমরায় রোডে দূর্ঘটনায় মারা গেছে। বিল্লালের সাথে আমার একবারই দেখা হয়েছিল। হান্নানের বাড়িতে শর্ট ফিল্মের প্রদর্শনীর দিন বিল্লাল এসে পরিচয় দেয়। খুবই নিরীহ ও নিষ্পাপ চেহারার বিল্লাল আমার হৃদয়ে স্থান করে নেয়। খরব পেয়ে বারবার সে দিনের স্মৃতি আমাকে দুর্বল করে ফেলে। বারবার বলি - আহা! বিল্লাল কি হলো ভাই?
জানাজার সময় জেনে বিকেলের দিকে যাত্রা করি শিমুলিয়ার পথে। হান্নানদের বাড়ি লোকে লোকারন্য। সাতঘড়িয়া মসজিদে বাদ এশা বিল্লালের জানাজায় হাজারের অধিক মানুষ অংশ নেন। বাদ এশায় এত মানুষের উপস্থিতি এর আগে আমি দেখিনি, জানাজা শেষে ঢাকায় ফিরি। শুক্রবার বাদ আছর বিল্লালের আত্মার মাগফিরাত কামনার দোয়া মাহফিলেও বহু মানুষের সমাগম হয়। আমি ঢাকা ফেরার আগে বিল্লালের দুই পুত্রকে শান্তনা দিয়ে বলি,” পিতার মৃত্যুতে তোমরা ভেঙ্গে পড়োনা- শোককে শক্তিতে পরিণত করে অধিক মনোযোগ দিয়ে লেখা পড়া করবে। মানুষের মতো মানুষ হবে।”দুভাই আমার কাছে দোয়া চায়।
ঢাকা ফিরার পথে বোনের বাড়িতে থাকা মাকে দেখতে যাই। মা আমাকে পেয়ে মহা খুশি। ফিরার পথে বিল্লালের মা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, ভাই,বোনদের মনের অবস্থা কল্পনা করি আর ভাবি আসলে বিল্লালকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিনের মতো খিলগাঁও’র বাসা থেকে সিএনজিতে ডেমরায় নেমে রুপগন্জের বাসে উঠার সময় আরেকটি বাস এসে বিল্লালকে চাপ দেয়। এতে পাজরে ও কানে প্রচন্ড আঘাত পায়। বিল্লাল বলেছিল, 'আমাকে দ্রুত ঢাকার ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে চলুন, সেখানে পরিচিত ৩/৪ জন ডাক্তার আছেন।' লোকজন তাই করেছিল। ন্যাশনাল হাসপাতালের ডাক্তাররা বহুচেষ্টা করেছে। ফুসফুসের ওপরের পাতলা আবরণ ছিড়ে যাওয়ায় বিল্লাল নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না। তখন উন্নত চিকিৎসার জন্য এম্বুলেন্সে তোলা হয় স্কয়ার/ ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়ার জন্য। তখনই স্ট্রোক হয় এবং বিল্লাল শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। মাত্র ৫৫ বছরে এ মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
আসলে বিল্লালকে হত্যা করেছে দেশের সড়ক পথের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা। প্রতিমাসে শত শত লোক সড়ক পথের অব্যবস্থার কারনে মারা যাচ্ছে। হাজার হাজার লোক পঙ্গু হচ্ছে। এর প্রতিকার করা যাদের দায়িত্ব তারা কোন কিছুই করছে না।
ড্রাইভারদের লাইসেন্স দেওয়া হয় যথাযথ পরীক্ষা না নিয়ে। টাকা খেয়ে নামকা ওয়াস্তে পরীক্ষা নিয়ে লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। এ সব অপরিপক্ক চালক বেশির ভাগ দূর্ঘটনা ঘটায়। অনেক সময় বাসের হেলপারদের দিয়েও বাস চালানো হয়। অনেক বাসের ফিটনেস থাকে না। টাকা খেয়ে ফিটনেসহীন বাস চলতে দেওয়া হয়। এ সব বাস প্রায়ই রাস্তার পাশের খাঁদে গিয়ে পরে। বেসরকারি বাস মালিকদের সমিতির কাছে সরকারি কতৃপক্ষ আত্মসমর্পন করে বসে আছে। বিআরটিসির বাস জনগণ পরিবহন না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ,ব্যাংক,বীমা ও অন্যান্য অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অফিসে আনা নেওয়ার জন্য ভাড়া খাটছে- যা বিআরটিসির প্রতিষ্ঠার নিতীমালার শর্ত বিরোধী। ঢাকা- মাওয়াসহ বিভিন্ন রুটে বিআরটিসি বাস চালু না করে বেসরকারি বাস মালিকদের একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছে।
বেসরকারি বাস মালিকেরা অনেক সময় বেশি বেতন দিয়ে দক্ষ চালক না রেখে কম বেতনের অদক্ষ চালক রাখে। দুর পাল্লার রুটের চালকেরা যথাযথ বিশ্রামের সুযোগ পায় না।ফলে ক্লান্ত দেহমন নিয়ে বাস চালাতে গিয়ে তন্দ্রায় দূর্ঘটনা ঘটে। খবরের কাগজে প্রায়ই এ ধরনের খবর থাকে।
এসব অব্যবস্থার শিকার হয়ে যারা প্রাণ হারায় তাদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। একটি দূর্ঘটনা সাড়া জীবনের কান্না। সরকারের উচিত সড়কের নৈরাজ্য দূর করে একটি আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে গণপরিবহনের যাত্রী হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র আতঙ্কহীন ভ্রমন করতে পারে।আমরা আর বেলায়েত হোসেন খান বিল্লালের মতো অকাল মৃত্যু দেখতে চাই না। চাই না।
জয়নাল আবেদীন,লেখক।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত