মহাবিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ- বিএনপি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১ মার্চ ২০২৩, ১২:২৮ |  আপডেট  : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৬

এই সরকারের সরে যাওয়া ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই বলে মনে করে বিএনপি। তারা বলছে, মহাবিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। কেবল দুর্নীতিপরায়ণ এই সরকার সরে গেলেই আস্থা তৈরি হবে। তখন আর্থিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে এসে দ্রুত এর সমাধান করা সম্ভব হবে। এই সরকারকে রেখে এটা করা সম্ভব হবে না।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তারা এত বেশি দুর্নীতিপরায়ণ যে তারা সেন্ট্রাল ব্যাংককেও প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে। তারা পুরো ইকোনমিক সিস্টেম, মনিটরিং সিস্টেম—সবকিছু নষ্ট করে ফেলেছে। ব্যাংকগুলো ভয়াবহভাবে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে প্রায়। ভুল ধারণা, ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে সরকার দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার চেষ্টা করছে। একমাত্র পথ হচ্ছে এই সরকারের চলে যাওয়া।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বারবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ তলানিতে নেমে আসা, ডলার–সংকট, টাকার নজিরবিহীন অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা, ভ্রান্তনীতি, লাগামহীন দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাওয়া, ঋণপ্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা, আয়বৈষম্য, সুশাসনের অভাব এবং গণতন্ত্র না থাকা—এসব কারণে দেশে অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবহন, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যের জাঁতাকলে জনগণের ত্রাহি অবস্থা। অর্থনীতির প্রায় সব কটি সূচকই আরও দুর্বল ও প্রকট হয়ে উঠেছে। চারদিকে শুধু হাহাকার। এককথায় দেশের অর্থনীতি এক মহাসংকটে নিমজ্জিত।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত আগস্টে সরকারি হিসেবেই মূল্যস্ফীতি দেখানো হয় ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি কমছে দেখানো হলেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এখনো প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি রয়েছে। জানুয়ারি মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। চাল, ডাল, ডিমের আকাশছোঁয়া, এমনকি ব্রয়লার মুরগির দাম ২০০ টাকার ওপর। অথচ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সাধারণ মূল্যস্ফীতি দেখাচ্ছে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর সঠিকতা নিয়ে খোদ অর্থনীতিবিদেরাই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার বিরাজমান অর্থনৈতিক দুর্বলতার কথা স্বীকার করে পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠিন শর্তে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। বলতে গেলে তারা এখন ব্যাংক থেকে ধার করে এবং আইএমএফের ঋণের ওপর ভর করেই চলছে। আইএমএফ যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে, তা প্রবাসীদের পাঠানো দুই মাসের আয়ের সমান। প্রতিবছর দেশ থেকে যে পরিমাণ ডলার পাচার হচ্ছে, তা রোধ করা গেলে এই ঋণ নেওয়ার কোনো দরকারই হতো না।

বিএনপি মনে করে, সরকার আইএমএফ থেকে যে ঋণ নিচ্ছে, এই ঋণে সংকট কাটবে না। এই ঋণ বরং রাজশাসকদের পেটে যাবে, সাধারণ জনগণের কষ্ট বাড়বে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং ও রাজস্ব খাতের সংস্কার ও নীতি সংস্কার করে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার না করলে, শক্তভাবে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে ব্যর্থ হলে যে উৎস থেকেই ঋণের টাকা আসুক, নানা কৌশলে শেষ পর্যন্ত রাজশাসকেরাই তা লুণ্ঠন করে নেবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য আর্থিক খাতে সংস্কার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণ, কর–শুল্ক, আর্থিক খাত, ব্যাংকিং সেক্টর, বাজেট ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্যনীতির সংস্কার করা আবশ্যক। তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত আইনের শাসন ও প্রকৃত অর্থেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার। বিএনপি আশা করে, বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আর্থিক খাতে কার্যকর সংস্কার সাধনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আইএমএফ বিশেষ সহযোগিতার হাত বাড়াবে।

দেশের অর্থনৈতিক সংকটের কথা সরকার কেন স্বীকার করে না, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। তারা ভোট করে নির্বাচিত হয়ে আসেনি। যদি নির্বাচিত হয়ে আসত, তাহলে তাকে পার্লামেন্টে জবাবদিহি করতে হতো। তাই তারা সব সময় একটা মিথ্যা প্রচারণা করে, ত্রাসের সৃষ্টি করে, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে গোয়েবলসের মতো সার্বক্ষণিকভাবে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। যারা ফ্যাসিস্ট হয়, যারা ডিক্টেটর হয়, তাদের জন্য এই প্রচারণা জরুরি হয়। তারা মিথ্যা ধারণার মধ্যে জনগণকে রাখতে চায়।


চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটকে ‘জাতীয় সংকট’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই দুর্বিষহ জাতীয় সংকট থেকে মুক্তি পেতে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে সবাইকে রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে এই অবৈধ সরকারকে হটানোর জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ে দুর্বার গণ-আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত