বিদায় সংবর্ধনা নেবেন না সেই বিচারপতি ইমদাদুল হক 

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:০০ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:১৫

একটি মামলার জামিন শুনানির সময় ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ মন্তব্য করা বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের আজ শেষ কর্মদিবস। সুপ্রিম কোর্টে রীতি অনুযায়ী শেষ কর্মদিবসে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি থেকে বিদায়ী বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেয়া হয়ে থাকে। তবে বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি কোন ধরণের সংবর্ধনা নেবেন না।

রোববার সংশ্লিষ্ট কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারপতিদের যে সংর্বধনা দেয়া হয় ওই সংর্বধনাও তিনি নেবেন না। তবে প্রধান বিচারপতির পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা তাকে ফুল ও ক্রেস্ট পৌঁছেয়ে দেবেন বলে জানা গেছে।

এর আগে গত ১০ অক্টোবর তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাদের সাজা নিয়ে করা আপিল আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়।

জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বিরোধিতায় উষ্মা প্রকাশ করেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ। এ সময় আদালত বলেন, দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।

শুনানির শুরুতে আদিলুর-এলানের পক্ষে জামিন শুনানি করতে ডায়াসের সামনে দাঁড়ান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিমও দাঁড়িয়ে যান। তিনি বলেন, আমাদেরও বক্তব্য আছে। তখন হাইকোর্ট বলেন, আসামিদের আইনজীবীদের আগে বলতে দিন। আপনি এখন লাফ দিয়ে উঠছেন কেন?

এরপর আসামিদের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আবারও কথা বলা শুরু করেন। তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় আসামিদের দুই বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানান তিনি।

পরক্ষণে আবারও জামিনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম। তখন আদালত উষ্মা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলেন, তাহলে তাদের ২ বছরের সাজা দিলেন কেন? যাবজ্জীবন দণ্ড দিতে পারলেন না? এক পর্যায়ে আদালত বলেন, দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।

এরপর মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে জামিন দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদেরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশও স্থগিত করা হয়।

পরে বিচারপতি এমদাদুল হক আজাদের ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সতর্ক করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। প্রধান বিচারপতির খাস কামরায় আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিদের উপস্থিতিতে বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদকে ডেকে সতর্ক করা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খাস কামরায় আসার পর বিচারপতি ইমদাদুল হক আজাদকে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আদালতে বিচারকাজের সময় মন্তব্য করার ব্যাপারে আরও যত্নশীল হতে বলেন প্রধান বিচারপতি।

এদিকে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদের এমন মন্তব্যকে ‘অসাংবিধানিক ও অসৌজন্যমূলক’ এবং এতে তার ‘শপথ ভঙ্গ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত