‘কিশোর গ্যাং লিডারের’ গুলি ছোড়ার ভিডিও ভাইরাল, এলাকায় আতঙ্ক

  গাজীপুর প্রতিনিধিঃ

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১২:৩৪ |  আপডেট  : ৩০ জুন ২০২৫, ২০:১৯

গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ‘কিশোর গ্যাং’ সদস্য তিহিম মাদবরের গুলি ছোড়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। অস্ত্র হাতে ভাইরাল ভিডিও চোখে পড়ার পর শ্রীপুর থানা পুলিশ তিহিমকে ধরতে অভিযান শুরু করেছে। ভিডিও ভাইরালের পর থেকে তিহিমসহ তার বাবা-মা ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে রয়েছেন।

শনিবার (২৮ জুন) সকাল থেকে ১ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 


তিহিম মাদবর (১৯) শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধনুয়া গ্রামের আসাদুজ্জামানের ছেলে। সে এলাকায় ‘কিশোর গ্যাং লিডার’ হিসেবে পরিচিত। এলাকায় ভাড়ায় থাকা স্থানীয় শিল্পকারখানার শ্রমিকসহ বাইরের লোকজনকে তার ভয়ে চলাফেরা করতে হয় বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, ভিডিওটি ওই এলাকারই একটি বাসার ছাদে ধারণ করা। তবে তিহিমের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা গুলি ছোড়ার ভিডিওগুলো শনিবার রাত থেকে আর পাওয়া যাচ্ছে না।

১ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, তিহিম প্রিন্ট কালারের শার্ট গায়ে ডান হাতে পিস্তল নিয়ে একটি বাসার ছাদের ওপর হাঁটছে। ছাদের সাইডে গিয়ে হাতে থাকা পিস্তল ওপরের দিকে তাক করে ফাঁকা গুলি ছুড়ছে। আবার এক কালারের শার্ট গায়ে একই বাসার ছাদে পিস্তল ওপরের দিকে তাক করে ফাঁকা গুলি ছুড়ছে। কিছুক্ষণ পর চেক শার্ট পড়ে ছাদের সাইডে গিয়ে পেছনে প্যান্টে গোঁজা পিস্তল বের করে ডান হাতে নিচ্ছে। তার এরকম ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। তার অস্ত্র হাতে ভিডিও ছড়িয়ে পাড়ার পর অনেকেই গাজীপুর ইউনিয়ন তথা দক্ষিণ ধনুয়া গ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্থানীয় সংবাদকর্মী আব্দুর রউফ তিহিম মাদবরের গুলি ছোড়ার ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, ‘শ্রীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব, দেখে মনে হবে কোনও সিনেমার দৃশ্য। কিন্তু না এটা একটা বাস্তব ঘটনা। লিডারের বাড়ি শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধনুয়ায়।’

স্থানীয় সাংবাদিক আরিফ মণ্ডল তার ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, ‘প্রকাশ্যে পিস্তল দিয়ে ফায়ার করা কে এই যুবক? ধনুয়া গ্রামের এক কিশোর প্রকাশ্যে পিস্তল দিয়ে ওপরের দিকে ফায়ার করার ভিডিও ভাইরাল। এক মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ার হুমকি!’

স্থানীয় বাসিন্দা কলিম উদ্দীন মাদবর জানান, তিহিম তার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। বাড়ির পাশেই কামাল নগর স্কুলে লেখাপড়া করতো। শিক্ষকের সঙ্গে বেয়াদবির কারণে প্রায় দুই বছর আগে ওই স্কুল থেকে সে নিজেই বের হয়ে চলে আসে। ওই স্কুলের পাশে কলিম উদ্দীনের বড় ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাসার কাজ চলছে। বড় ভাই ঢাকা থাকায় তিনি ওই বাসার কাজ দেখাশোনা করছেন। ওই নির্মাণাধীন বাসা দেখাশোনার জন্য নয়ন নামে এক কাজের ছেলে রয়েছে তাদের। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে সেখানে গিয়ে নয়নকে চলে যেতে বলে তিহিম। নয়ন বাসায় গিয়ে তার মালিককে জানালে তিনি নির্মাণাধীন বাসায় গিয়ে দেখেন তিহিমের সহযোগী হাসান ২০ টাকা মূল্যে বাসার তারকাটা (পেরেকে) বিক্রি করছে। জিজ্ঞাসা করলে হাসান জানায় তিহিম বিক্রি করে ফেলেছে। পরে আবার তিহিম বলে হাসান বিক্রি করে ফেলেছে। এ সময় হাসানকে কঠিন ভাষায় জিজ্ঞাসা করলে তিহিম কলিম উদ্দিনকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় সে তার সহযোগী হাসানকে বলে তার ঘরের তোশকের নিচ থেকে পিস্তল নিয়ে আসতে। পরে তার বাবা আসাদুজ্জামানকে জানালে সে বলে এজন্য তাকে চরম খেসারত দিতে হবে। পরে সে তার ছেলের হাত ধরে বাসায় নিয়ে যেতে চাইলে বাবার হাত থেকে ছুটে ছেলে বলে বাসা থেকে পিস্তলটা নিয়ে আসি। এ বিষয়ে মীমাংসার জন্য এদিন সন্ধ্যার পর ঘটনাস্থলে স্থানীয় মুরুব্বি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সালিশ বৈঠকে বসেন।

তিনি আরও জানান, শুক্রবার (২৭ জুন) বেলা ১১টার দিকে তার নবম শ্রেণিপড়ুয়া মেয়ের মেসেঞ্জারে লাভ রিয়্যাক্ট দেয় তিহিম। এ সময় আরও লিখে, ‘স্কুলে যাওয়ার সময় তোকে টুকরা, টুকরা করে ফেলবো। তোর বাবা তোর শরীরের এক টুকরাও খুঁজে পাবে না।’ এ ধরনের হুমকিতে ওই শিক্ষার্থী এবং তার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। ভয়ে সে (স্কুলছাত্রী) এখন স্কুলেও যেতে চায় না।

গাজীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড স্থানীয় ইউপি সদস্য গাজী ইসমাইল জানান, তিহিম মাদবর এলাকায় অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেয়। কাউকে মানে না। তিহিমের গুলি ছোড়ার ভিডিওটি ফেসবুকে দেখেছি। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘ভিডিওটা গত ২ বা ৩ মাস আগের। সম্প্রতি তার চাচার সঙ্গে বিরোধ হওয়ায় এখন ভিডিওটি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে। গুলি ছোড়ার শব্দ শুনে এবং ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে এটা আসল অস্ত্র। আমরা এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছি এবং তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেফতারের পর অস্ত্রটি আসল না নকল সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত