প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এবার ‘বিরল’ সম্মান দেখিয়েছে ফ্রান্স
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২১, ০৭:৫৪ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৪
প্যারিস সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফ্রান্স এবার ‘বিরল’ সম্মান দেখিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে প্যারিসে প্রধানমন্ত্রীর সফরকালীন আবাসস্থল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এক কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এবারে প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফর ঐতিহাসিক সফর। এ সফরে তিনি যে সম্মান পেয়েছেন, এ ধরনের সম্মান আগে কখনও বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান পায়নি।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফরের বিভিন্ন কর্মসূচি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে সম্মান দেওয়া হয় তা তুলে ধরা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা নিয়ে যে আলোচনা হয় তা সাংবাদিকদের জানানো হয়।
ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ফ্রান্সে যে পরিমাণ সম্মান দেখানো হয়েছে, এটা সত্যিই বিরল। এটা থেকে বোঝা যায় ফ্রান্স আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও গভীরতর করার ক্ষেত্রে, বিভিন্ন সেক্টরে তারা আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে অত্যন্ত আগ্রহী।
তিনি বলেন, সফরে প্রধানমন্ত্রী অফিসিয়াল কর্মসূচিতে যেখানেই গেছেন সেখানে তাকে সশস্ত্র সালাম, লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
তালহা বলেন, ইউনেস্কোতেও বাংলাদেশের যে অবস্থান ও মর্যাদা প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে আরও অনেক উপরে গেছে। আরও অনেক উঁচু পর্যায়ে গেছে। আজকে সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে নিয়ে ভাবছে। সেই সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এক সময় বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ধারণা ছিল, বাংলাদেশ দারিদ্র্যপীড়িত, দুযোর্গপ্রবণ, সেই ইমেজ বাংলাদেশের কেটে গেছে। বাংলাদেশ যে উদীয়মান সম্ভাবনাময় দেশ, সে বিষয় এখন অনেকের কাছে স্পষ্ট।
বিভিন্ন দেশকে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আমরা যে এখন উন্নয়নশীল দেশ হচ্ছি, আমরা একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছি। আমরা অনেক দেশকে টেকনিক্যাল সহায়তা দেওয়া শুরু করেছি।
অন্য দেশকে সহায়তা করতে একটা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায় কি না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসিসটেন্স প্রোগ্রাম এ রকম কিছু। অন্য অনেক দেশে যেভাবে আছে।
প্যারিস সফরকালে প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন কর্মসূচির বাইরে ইউনেস্কো এবং প্যারিস পিস ফোরামের কর্মসূচিতে অংশ নেন।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো এবং লন্ডন সফর শেষে ৯ নভেম্বর স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে প্যারিস আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্যারিস বিমানবন্দরে ২১ জন গার্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্ট্যাটিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে যান। এলিসি প্রাসাদ এবং পরে ইনভ্যালিডস-এ লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় সফররত শেখ হাসিনাকে।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং প্রধানমন্ত্রী জিন ক্যাসটেক্সের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্র্যোঁর আমন্ত্রণে তার সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা। আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও মধ্যাহ্নভোজের সময়ও দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন দুই নেতা।
প্যারিস সফরকালে ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসুচি, প্যারিস পিস ফোরামে অংশ নেন, ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ পুরস্কার বিতরণসহ সাইডলাইনে বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেন শেখ হাসিনা।
এর আগে ৩১ অক্টোবর জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৬) যোগ দিতে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গ্লাসগোতে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনের মূল পর্বে অংশগ্রহণের সাইডলাইনে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশ নেন।
গ্লাসগোতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্রিটের রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসসহ বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থা প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।
কপ-২৬ সম্মেলনে যোগদান শেষে ৩ নভেম্বর লন্ডন আসেন প্রধানমন্ত্রী। লন্ডনে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১: বিল্ডিং সাসটেইনেবল গ্রোথ পার্টনারশিপ’ শীর্ষক রোড শোর উদ্বোধন ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে ৯ নভেম্বর লন্ডন থেকে দ্বিপাক্ষিক সফরে প্যারিস আসেন প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সময় শনিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে প্যারিস থেকে ঢাকার পথে রওনা হবেন শেখ হাসিনা। রোববার (১৪ নভেম্বর) সকালে সকালে দেশে পৌঁছানোর কথা প্রধানমন্ত্রীর।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত