পুলিশি সেবাকে গণমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে- প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:১২ | আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৩৯
পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আধুনিক সময়ে নাগরিক সেবার ধারণাকে প্রাধান্য দিয়ে পুলিশি সেবাকে গণমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।’
রবিবার (২৯ জানুয়ারি) রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।
জনগণের আস্থা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন সরকার প্রধান বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী যেন জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে। যেকোনও দুর্যোগ মোকাবিলা বা সন্ত্রাস দমন বা যে কোনও কাজ করতে গেলে জনগণের সহায়তা একান্তভাবে দরকার। মানুষ কোনও বিপদে পুলিশকে পাশে পেলে যেন অন্তত আশ্বস্ত হয়। কাজেই সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই আমি বলবো, পুলিশ তার পেশাদারিত্ব এবং সহমর্মিতা দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করবে।’
বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে যথার্থই বলেছিলেন, ‘আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ না, জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজের দিনে পুলিশ বাহিনীর সকল সদস্যদের আমি অনুরোধ করবো, জাতির পিতা যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন; তা গড়ার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করবেন।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সঙ্গে স্মার্ট পুলিশ বাহিনী গড়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা চাই, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়তে; বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। অর্থাৎ স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট প্রশাসন, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট জনগোষ্ঠী সাথে সাথে আমাদের পুলিশ বাহিনীকেও স্মার্ট পুলিশ বাহিনী আমরা গড়ে তুলতে চাই।
নবীন পুলিশ সদস্যদের শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আপনারাও আমাদের সঙ্গী। এজন্য আপনাদের যুগোপযোগী কর্মকৌশল গ্রহণ এবং দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৪ বছরের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে এসেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
বিগত সময়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের দেশ যেন আর কখনও পিছিয়ে না পড়ে। ২০০৮ এর নির্বাচনে আমরা নির্বাচনি ইশতেহার দিয়েছিলাম রূপকল্প-২০২১ সেটা বাস্তবায়ন করেছি। জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করেছি। ঠিক সেই সময় আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য ডেলটা প্ল্যান-২১০০ আমরা প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম।
‘বাংলাদেশকে আর কেউ পেছনে নিতে পারবে না’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। আমি চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীনতার সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে এ দেশকে আমরা আরও উন্নত করবো এবং সেভাবেই আপনারা আপনাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন। ইনশাল্লাহ, বাংলাদেশকে আর কেউ পিছে টানতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার সুফল বাংলার প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করে যাচ্ছি।’
পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি, আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত একদিকে যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা যায়, অন্যদিকে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগে দেখা দেয়। হত্যা, লুটপাট, বোমা হামলা, আগুন সন্ত্রাস সবসময় এদেশের অর্থনৈতিক গতিকে স্থিমিত করতে চেষ্টা করে, কোন মতেই যেন বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে না পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটা চেষ্টাই হচ্ছে বাংলাদেশকে এড়িয়ে নিয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে আমি বলবো পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের সাথে এ সমস্ত বোমাবাজ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক; এগুলো প্রতিরোধ করতে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। পুলিশ বাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
এর আগে সকাল সোয়া ১১টার দিকে সারদায় পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে আসেন প্রধানমন্ত্রী। ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
এক বছর মেয়াদি এই প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করায় বেস্ট একাডেমিক শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর কবির, অশ্বারোহণে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপাট সাজ্জাদুর রহমান, বেস্ট ইন ফিল্ড শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শুভ্র দেব, বেস্ট স্যুটার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল রানা এবং বেস্ট প্রবেশনার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার সাকিবুল আলম ভূঁইয়াকে ট্রফি প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপট তিনি এই নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।
এই কুচকাওয়াজে প্যারেড অ্যাডজুটেন্ট সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াকুব হোসেন এবং শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শুভ্র দেব প্যারেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কুচকাওয়াজে ১২ জন মহিলা অফিসারসহ ৯৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল আবু হাসান মুহম্মদ তারিকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, নবীন অফিসারদের অভিভাবকসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
এই অনুষ্ঠানের পরে বিকালে রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত জনসভায় অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জনসভা শেষে তিনি ঢাকায় ফিরে যাবেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত