নিঝুম, হাতিয়া ও কুতুবদিয়া দ্বীপে শতভাগ বিদ্যুতায়ন
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪৪ | আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩১
নিঝুম, হাতিয়া ও কুতুবদিয়া দ্বীপকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে এই তিন জনপদে নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ ও সেবার গুণগত মান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্যোগে নেওয়া এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে— যা গত ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেকে অনুমোদন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন [১ম সংশোধিত]’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড [বাবিউবো]।
সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া ৩৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি চলতি ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে শতভাগ বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুলাই মেয়াদে শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য স্থির করে একনেক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, হাতিয়া দ্বীপ শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা, সাবমেরিন ক্যাবল দ্বারা মুকতারিয়া-নিঝুমদ্বীপ খাল পারাপার করে নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া চ্যানেল পারাপার করে কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা এবং হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপের শতভাগ গ্রাহককে নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের কর্মপরিধিতে পরিবর্তন ও বিভিন্ন অঙ্গে ব্যয় কমানো-বাড়ানো এবং প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করায় প্রকল্পে সংশোধনী এনেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালে থেকে বাড়িয়ে ২০২৫ সাল এবং ব্যয় ৩৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৪৭ কোটি ১২ লাখ টাকা করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ ৫৯৭ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়াও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো) নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেবে ৫০ কোটি টাকা। নোয়াখালী ও কক্সবাজার জেলার হাতিয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলা জুড়ে বাস্তবায়িত হবে প্রকল্পটি।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় নতুন ৪টি ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ [হাতিয়া দ্বীপে ৩টি ও কুতুবদিয়া দ্বীপে ১টি], মুকতারিয়া-নিঝুমদ্বীপ খালে দেড় কিলোমিটার ১১ কেভি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হবে। কুতুবদিয়া চ্যানেলে ৫ কিলোমিটার ডাবল সার্কিট ৩৩ কেভি সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হবে। নতুন মোট ১ হাজার ৪৮৬ কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হবে। বিদ্যমান ৩৫ কিলোমিটার বিতরণ লাইন রেনোভেশন করা হবে। মোট ৩ হাজার ২৫০টি পোল মাউন্টেড বিতরণ ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হবে এবং অফিস ভবন কাম রেস্ট হাউজ, ডরমিটরি, সীমানা দেওয়াল ইত্যাদি নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৪৯.৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত আছে। প্রকল্পটি সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সংগতিপূর্ণ বলেও জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় একটি রাজস্ব সাশ্রয়ী, দক্ষ, সর্বনিম্ন ব্যয়ের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়েছে এবং দক্ষ ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সকলের জন্য নির্ভরযোগ্য, আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বাবিউবো) হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ এলাকার বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার মানোন্নয়ন করা সম্ভব হবে বিধায় প্রকল্পটি সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সংগতিপূর্ণ। এছাড়া, প্রকল্পটি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের [এসডিজি] লক্ষ্য-৭ “সকলের জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি সহজলভ্য করা” এর সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
একনেকের অনুমোদন সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের [বিপিডিবি] আওতাধীন হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং মানোন্নয়ন নিশ্চিত করে নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ ও সেবার গুণগত মান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। এমন প্রেক্ষাপটে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বাবিউবো) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন (১ম সংশোধিত)” শীর্ষক প্রকল্পটি জুন ২০২৫ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, ভৌগোলিক কারণেই হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়াকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করা যাচ্ছিল না। এ কারণে এই জনপদে বসবাসকারী মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। এ সমস্ত দিক বিবেচনা করে সরকার এ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) আওতাধীন হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এবং মানোন্নয়ন নিশ্চিত করে নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ ও সেবার গুণগত মান উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত