কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য একই পদে একাধিক নিয়োগ জবাব চেয়ে শোকজ
মোঃ কামরুল ইসলাম কামু
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৭ | আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:২৬
পঞ্চগড় সদর উপজেলার জগদল উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল পরিমান উৎকোচ নিয়ে একই পদে আবারো একাধিক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার গুরুত্বর অভিযোগ উঠেছে। হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোটি টাকা। এবিষয়ে পৃথক দুইটি অভিযোগ পঞ্চগড় জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগকারী হলেন; মোছা. ফরিদা বানু ও জুলফিকার রহমান।
প্রায় ৩২ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৪ সালের ১৫/০৯/১৯৯৪ মোছা. ফরিদা বানু তৎকালিন ‘জগদল দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়’এ সরকারী বিধিমতে চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি ‘‘ জগদল উচ্চ বিদ্যালয়’’ হিসেবে উত্তীর্ণ হয়। এদিকে পরবর্তীতে তিনি ২০১৩ সালের মার্চে ‘‘সংশোধিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী “আয়া’’ পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। অথচ ওই ‘‘ আয়া’’ পদে আবারো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর স্বারক নম্বর জউবি নিয়োগ ১১০(৪) এর অফিস আদেশে মোছা. শাওরিন আক্তারকে ১৫ দিনের মধ্যে যোগদান করতে বলা হয়। এরপর তিনি ২৯/১২/২০২২ তারিখে এরপর যথাযথ সময় ও তারিখে তিনি কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। ওই লিখিত অভিযোগে ফরিদা বানু জানান, তিনি ‘‘ আয়া’’ পদে কর্মরত এবং পূর্বে নিয়োগ প্রাপ্ত।’ অথচ বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. আনিছুর রহমান ‘‘ আয়া’’ পদটির পরিবর্তে ২০২১ সালের এর ২২ নং পদবি ‘‘ পরিছন্নতা কর্মী’’ পদে দায়িত্ব নেওয়ার চাপ প্রয়োগ করছেন।
অপরদিকে অনুরুপ ভাবে এমএলএসএস (পিয়ন) পদে প্রায় ০৯ বছর আগে অর্থাৎ ০৯/০৮/১৭ তারিখে মো. জুলফিকার রহমান তার কর্মস্থল ‘জগদল দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়’এ চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী হিসেবে ১০/০৮/১৭ তারিখে যোগদান করেন। পরবর্তীতে পরবর্তীতে তিনি ২০১৩ সালের মার্চে ‘‘সংশোধিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী “এমএল এসএস’’ পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। কিন্তু পরবর্তীতে গত ২৭/১২/২০২২ তারিখ স্বারক নম্বর জউবি নিয়োগ ১১০(৫) এর অফিস আদেশে মো. উজ্জল হোসেনকে নিয়োগ প্রদান করে যাতে ২৯/১২/২০১৭ তারিখে যোগদানের জন্য বলা হয়। এরপর যথাযথ সময় ও তারিখে তিনি কর্মস্থলে যোগদান করেছেন।
একই পদে দুইটি নিয়োগে স্বাক্ষর সহ কর্মস্থলে যোগদানের অনুরোধ করেন সাবেক বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রধান। অভিযোকারীরা জানান ওই দুইটি পদের জন্য গোপনে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকা উৎকোচ হাতিয়ে নেন তৎকালীন সভাপতি।তিনি স্থানীয় আসনের সাবেক সাংসদের ভাই। তবে জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে তার ফোন বন্ধ দেখায়। স্থানীয়রা জানান ‘ তিনি ৫ আগস্টের পর গা ঢাকা দিয়েছেন।
ওই লিখিত অভিযোগে মো. জুলফিকার রহমান জানান তিনি ‘‘এমএলএসএস’’ (পিয়ন) পদে কর্মরত এবং পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত। অথচ ওই পদটির পরিবর্তে ২০২১ এর ২৩ নং পদবী “ নৈশ্য প্রহরী’’ পদে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। জেলা শিক্ষা অফিসারের বরাবরে দাখিল করা লিখিত অভিযোগে বলা হয়; ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর সহকারী শিক্ষক স্বঘোষিত প্রধান শিক্ষক সেজে সরকারী পরিপত্র ও নীতিমালাকে উপেক্ষা করে আরো চারটি নিয়োগ প্রদান করেন। সেখানেও পূর্বের নিয়োগপ্রাপ্তদের ও দুই- একজনের দ্বিতীয় নিয়োগ হয়! যা চরম দুর্নীতি ও অসৎ লোভের বিষয়টি স্পষ্ট’! অভিযোগ সূত্র মতে, ওই চারটি নিয়োগে প্রায় ৬০ লাখ টাকা উৎকোচ নেওয়া হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়; সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকার পরেও জৈষ্ঠতা ডিঙ্গিয়ে সহকারী শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফা প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ কার্যক্রমে নিজেকে সামিল করেন। পাশাপাশি সরকারী নিয়মপরিপন্থি ভাবে নিয়োগে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন সভাপতি।
এরপর সেই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বৈধতা দিতে বর্তমান প্রধান শিক্ষক মো. আনিছুর রহমান সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দপ্তরে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা প্রদান করেন। বর্তমানে তারা বেতনভূক্ত কর্মচারী হিসেবে সকল রকম সুবিধা ভোগ করছেন। বর্তমান জগদল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল আলিম বলেন বিদ্যালয়ের সভাপতি নিয়োগ দেওয়ার কোন এখতিয়ার নাই ‘বিধান নাই।’ তৎকালীন সভাপতি ক্ষমতার দাপটে একক ভাবে করেছেন। তিনি বলেন এ জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার বর্তমান প্রধান শিক্ষক ও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে এই নিয়োগের বিষয়ে শোকজ করেছেন। বর্তমান যিনি প্রধান শিক্ষক নিজেই তখন নিয়োগ প্রাপ্ত। তিনি এজন্য দায়ী নন। তবে এ বিষয়ে সরাসরি বর্তমান প্রধান শিক্ষককের সাথে কথা বললে তিনি বলেন ‘ এসব নিয়োগের সময় আমি প্রধান শিক্ষক ছিলাম না। তবে পদায়ন করার সময় নিয়োগ দেওয়ার পূর্বে “আগের নিয়োগুলোকে সমন্বয় করার দরকার ছিল।
এব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার খায়রুল আনম মো. আবতাবুর রহমান হেলালীর সাথে মুঠোফোনে জানান ‘ আমি প্রধান শিক্ষক ও পূর্বের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে মৌখিক ভাবে শোকজ করে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছি। ‘‘ তবে তারা যে জবাব দিয়েছে তা সন্তোষজনক নয়। ‘ ওই জবাব আমি তাদের ফেরত দিয়েছি। কারণ তাদের দায়িত্বকালীন তারা(নতুনরা) নিয়োগ পেয়েছেন।’এখন আবার অফিসিয়ালি লিখিত দিয়ে তাদেরকে শোকজ করা হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত