আজ জাতীয় যুব দিবস

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৪৫ |  আপডেট  : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:৫৬

আজ জাতীয় যুব দিবস। “স্মার্ট যুব সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ -এ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশব্যাপী দিবসটি উদযাপন করা হবে।

জাতীয় যুব দিবস’ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।

রাষ্ট্রপতির বাণীতে মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, যুবরাই জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রধান নিয়ামক। সাহসী, অদম্য, প্রতিশ্রুতিশীল এবং সৃজনশীল যুবসমাজ যে কোনো দেশের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ দেশের যুবসমাজ মুক্তি সংগ্রামের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আত্মোৎসর্গের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামসহ বিভিন্ন সংকট উত্তরণে যুবসমাজের গৌরবোজ্জ্বল অবদান জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বৃহৎ অংশই যুবসমাজ, যাদের বয়সসীমা ১৮ হতে ৩৫ বছর। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জনসহ বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্য অর্জনে এ জনমিতিক সুবিধা (Demographic Dividend) কাজে লাগাতে হবে। আমাদের যুবসমাজকে পরিপূর্ণ দক্ষ, আধুনিক ও সচেতনরূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। তাদের অনেকেই আজ সফল আত্মকর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এদেশের প্রশিক্ষিত যুবরা বিদেশেও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিয়েছে এবং দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।

মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, কর্মবিমুখতা, কুসংস্কার, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি জ্ঞানমুখী, প্রশিক্ষিত ও আদর্শ যুবসমাজই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। যুবদের নিজেদেরকে দক্ষ, আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক, পরমতসহিষ্ণু, উদার ও নৈতিকতাবোধসম্পন্ন বিবেকবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমের মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের তেজোদীপ্ত, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ যুবসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে ­– এটাই সকলের প্রত্যাশা।

প্রধানমন্ত্রীর বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন,  সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে জীবন বাজি রেখে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে লাল-সবুজের একটি নতুন দেশ সৃষ্টি করে এদেশের যুবসমাজ। যুবদেরকে তিনি সংগঠিত করেছিলেন দেশপ্রেমের মহান দীক্ষায়। জাতির পিতা স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশ পুনর্গঠনেও যুবসমাজকে কাজে লাগান এবং শিক্ষিত ও কর্মদক্ষ যুবসমাজ সৃষ্টিতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন ও রূপরেখা প্রণয়ন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধীচক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর বাংলাদেশের যুবসমাজকে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার পথে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা চালায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যুবসমাজকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে যুবসমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে উন্নীত করার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন কারিগরি, বৃত্তিমূলক এবং কৃষিভিত্তিক বহুমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। আমাদের সরকার প্রশিক্ষিত যুবদেরকে জামানতবিহীন যুবঋণ দিয়ে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। যুবদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে প্রবাসেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা ‘যুব কল্যাণ তহবিল আইন-২০১৬’ প্রণয়ন করেছি। স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠনগুলোকে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে ‘যুব সংগঠন নিবন্ধন এবং পরিচালনা আইন-২০১৫’ ও ‘যুব সংগঠন বিধিমালা-২০১৭’ প্রণয়ন করা হয়েছে। যুবসমাজের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ‘জাতীয় যুব কাউন্সিল বিধিমালা-২০২১’, ‘জাতীয় যুবনীতি-২০১৭’, ‘জাতীয় যুবনীতি বাস্তবায়নে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা’, ‘ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স-২০১৯’ ও ‘যুব উদ্যোক্তা নীতিমালা-২০২২’ ও ‘যুব প্রশিক্ষণ নীতিমালা-২০২২’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় যুব কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। যুবদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, নেতৃত্ব সৃষ্টি, প্রতিভা বিকাশ, ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাভারে ‘শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং জেলা- উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় যুব কাউন্সিল গঠনের কাজ চলমান রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবসমাজ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এই জনমিতিক সুবিধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার-২০১৮ এ যুব সম্পর্কিত অঙ্গীকার ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’কে বিবেচনায় নিয়ে যুবদের চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্বদানে সক্ষম স্মার্ট যুবসম্পদ তৈরি করতে সারাদেশে হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার ও বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, ফ্রিল্যান্সিং থেকে উপার্জিত অর্থ আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ফলে প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছেছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তাদের কর্মসংস্থানও বেগবান হয়েছে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি-এ চারটি মূলভিত্তির ওপর ২০৪১ সালের মধ্যে গড়ে উঠবে স্মার্ট বাংলাদেশ। টেকসই ও জ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবনী দেশ হবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত