আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা হলেন নূহ-উল-আলম লেনিন
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৩, ১১:২৪ | আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৩৮
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা গঠনতন্ত্রের ২৬(১) ধারা মোতাবেক নূহ-উল-আলম লেনিনকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত করেছেন। গত কাল ২৫ মার্চ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি স্বাক্ষরিত মনোনয়ন পত্র নূহ উল আলম লেনিন এর নিকট পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
নূহ উল আলম লেনিন ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন। তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনী ইশতেহার ‘দিন বদলের সনদ’ এর অন্যতম প্রণেতা। দল ক্ষমতায় যাওয়ার পরে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হন। পরের সম্মেলনে তিনি প্রেসিডিয়াম মেম্বার হন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মুখপত্র ‘উত্তরণ’ এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নূহ-উল-আলম লেনিন এর জন্ম বিক্রমপুরের এক প্রগতিশীল রাজনৈতিক পরিবারে। তাঁর পিতা কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেন এবং ১৯৪৩-৪৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময়ও তিনি জনমানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণগাঁও স্কুল থেকে প্রাথমিক ও ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
কিশোর বয়স থেকেই নূহ-উল-আলম লেনিন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৬৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নের মুন্সিগঞ্জ মহকুমার সদস্য হন এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিরোধী এবং প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন। তিনি ঢাকায় থেকে ১৯৬৫ থেকে ৭১ পর্যন্ত প্রতিটি ছাত্র-গণ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
লেনিন ১৯৬৯ সালে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ১৯৭০ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যৌথ গেরিলা বাহিনীর অন্যতম সংগঠক হিসেবে বৃহত্তর ঢাকা জেলার কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। তিনি ১৯৭২ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি হন। ১৯৭৩ সালে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের যৌথ প্যানেলে তিনি ভিপি পদে মনোনয়ন লাভ করেন। ১৯৭২ সালে ছাত্র প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। পরের বছর বার্লিনে অনুষ্ঠিত দশম বিশ্ব যুব উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে সস্ত্রীক সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন।
১৯৮০ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ১৯৮৮ সালে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৮০ সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে জেনারেল জিয়া সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে।
নূহ-উল-আলম লেনিন সমাজ-অর্থনীতি-সংস্কৃতি বিষয়ক মুক্তচিন্তার মননশীল ত্রৈমাসিক সাময়িকী ‘পথরেখা’ সম্পাদনা করছেন এবং তিনি ত্রৈমাসিক অগ্রসর বিক্রমপুরের প্রকাশক। তিনি দেশের একজন স্বনামধন্য কবি, কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক। ইতোমধ্যেই তাঁর ৯টি কাব্যগ্রন্থ, ২১টি প্রবন্ধ গ্রন্থসহ ৬৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে আগামীর অন্বেষা, ব্রাত্যজন কথা, স্বাধীনতা ও উত্তরকাল, সর্বব্যাপী বঙ্গবন্ধু, সমুখে শান্তি পারাবার, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় বাঙালির কলঙ্কমোচন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড: প্রতিবাদের প্রথম বছর (যুগ্ম রচনা), বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির স্বপ্ন, স্বাধীনতার সন্ধানে, বাঙালি সমাজ ও সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদ প্রভৃতি। কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে স্বপ্ন করপুটে, অনেক দূর যেতে হবে, ভালোবাসা হিসেব জানে না প্রভৃতি।
নূহ-উল-আলম লেনিন এর সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে - তেভাগার কথা ও বাংলার কৃষক আন্দোলন, দুঃশাসনের চার বছর: সংকট ও উত্তরণের পথ, মুক্তিযুদ্ধ ও উত্তরকাল, নারী: পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ, বাংলাদেশে নগরায়ন ও পরিবর্তনশীল গ্রামজীবন, দিনবদলের সনদ: নাগরিক ভাবনা এবং কবিতা সংকলন ‘গণতন্ত্র মুক্তিপাক’ প্রভৃতি। তিনি অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। তিনি বিক্রমপুর জাদুঘর ও বঙ্গীয় গ্রন্থ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় এবং রঘুরামপুর ও নাটেশ্বর খননে মূল ভূমিকা রাখেন। তাঁর স্ত্রী রোকেয়া সুলতানা রাকা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর পিতা আব্দুর রহমান মাস্টার ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং দীর্ঘকাল কমিউনিস্ট পার্টির আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। তাঁর কন্য সুবর্না সেঁজুতি টুসি চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি ১৭ এপ্রিল ১৯৪৭ মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার রাণীগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত