অধিগ্রহন না করে কৃষকদের জমিতে ড্রেজিংয়ের বালু ডাম্পিং, কৃষকদের প্রতিবাদ
প্রকাশ: ৫ এপ্রিল ২০২১, ১৯:০৬ | আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:১৩
অধিগ্রহন না করেই ব্যক্তিমালিকানাধীন কৃষি জমিতে মোংলা বন্দরের ইনারবার ড্রেজিংয়ের বালু ডাম্পিংয়ের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। সোমবার (০৫ এপ্রিল)বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোংলা উপজেলার জয়মনির গোল এলাকার সহস্রাধিক মানুষ এই কর্মসূচি পালন করেন। জোরপূর্বক এই বালু ফেলার ফলে ফসলি জমি ও মৎস্য ঘের ভরাট হচ্ছে। এর ফলে কৃষকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তেমনি ভূমির শ্রেণি পরিবর্তণের ফলে জীববৈচিত্রের উপরও বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে দাবি মানবন্ধনকারীদের। এদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে জমির মালিকদের সাথে ৩ বছরের চুক্তি হয়েছে, এখন একটি মধ্যসত্যভোগী যারা ওই জমিতে ঘের করতেন তারা এই বিক্ষোভ করেছেন।
মানববন্ধনে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের ১১ নং মৌজার জমির মালিকদের পক্ষে বক্তব্য পাঠ করেন মোঃ আলম গাজী। তিনি বলেন, আমরা শুনেছি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিংয়ের বালু পশুর নদীর তীরবর্তী জমিসমূহে ফেলার জন্য মালিকানা জমি অধিগ্রহণ করার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু আমরা এলাকাবাসী ওই জমির মালিক হওয়া সত্তে¡ও বিষয়টি আমরা জানি না। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছেমত কাজ শুরু করেছে। অধিগ্রহণ ছাড়া এবং জমির মালিকদের অনুকূলে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে জোর পূর্বক মৎস্য ঘেরে পানি অপসারণ করে এবং মাটি কেটে তাতে যে ভাবে ডাইক নির্মাণ করেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ যে প্রক্রিয়ায় এই কাজ করতে চাচ্ছে তা সম্পূর্ণ বেআইনী, অবৈধ ও আইনের পরিপন্থি।
মানববন্ধনকারীরা আরও বলেন, ১১ নং চিলা মৌজার বিভিন্ন জমির মালিক আমরা। মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে ও পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকা, জীবন ধারনের একমাত্র সহায় সম্বল হচ্ছে আমাদের এই জমি। পুর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া জমিতে মৎস্য ও সামান্য কৃষি কাজ করে কোন মতে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। বর্তমানে চলতি মৌশুমে ওই জমিতে মৎস্য ও ধান চাষ চলছে। মাছ চাষ মৌসুমের প্রায় অর্ধেক সময়ও পার হয়ে গেছে। এখন মাছ ধরার সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে আমাদের মৎস্য গেট (গৈ) কেটে দিয়ে পানি অপসারণ করে ফেলছে। এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বিশাল উচু ডাইক নির্মাণ করছে।
তাদের কাছে আমাদের জমির ক্ষতিপূরণ চাইতে গেলে তারা বলে, জমির ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দপ্তরে জমা দিয়েছি, সেখানে যান। এমনকি চায়না ঠিাকাদার ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা জমির মালিক কৃষক ও চিংড়ি চাষীদের নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষসহ জেলা, উপজেলাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে আমরা এর আগে বহু আবেদন নিবেদন করেও কোন ফল না পেয়ে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হয়েছি।
জমির মালিকরা আরও বলেন, আমরা মোংলা বন্দরের উন্নয়নকে সমর্থণ করি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী করলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। মোংলা বন্দর সচল করতে পশুর নদীর চ্যানেলের ইনার বারের ড্রেজিং করার ক্ষেত্রেও আমাদের সার্বিক সহযোগীতায় কোন ঘাটতি নেই। তফশিল বর্নিত জমি জেলা প্রশাসক মহোদয় কর্তৃক অধিগ্রহণ করে, আমাদের জমি ও মৎস্য ঘেরের ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দিলে, আমরা অন্যত্র জমি কিনে অন্তত পরিবার পরিজন নিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই করতে পারতাম।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) ও ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পের শেখ শওকত আলী বলেন, যে জমিতে বালু ফেলা হয়েছে সেখানের জমি সবই ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি। ওই জমির মালিকদের সাথে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আমাদের তিন বছরের জন্য একটি চুক্তি হয়েছে। তারা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবেন। এটা পক্রিয়াধীন রয়েছে। জমির প্রকৃত মালিকরা তাদের ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবেন। তিনি আরও বলেন, কিন্তু ওই জমিতে কিছু মানুষ ঘের করতেন। তারা স্থানীয়দের ভুল বুঝিয়ে ও ঘের মালিকদের কিছু লোক সাথে নিয়ে এই অবস্থান কর্মসূচি করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)মোঃ শাহীনুজ্জামান বলেন, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী আমরা দুই বছরের জন্য ৭‘শ একর জমি অধিগ্রহন করেছি। দুই বছরের জন্য প্রত্যেক একর জমির মালিক ২ লক্ষ টাকা করে পাবেন। খুব শীগ্রই জমির মালিকগণ ৪ ধারার নোটিশ পেয়ে যাবেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত