হাওড়ে আবারও আতংক, দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২২, ২০:৫১ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৫৭
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের কারণে নেত্রকোনায় নদ-নদীসহ হাওরাঞ্চলে আবার পানি বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এতে করে হাওরের বোরো ধান হুমকির মুখে পড়বে। তাই নিম্নাঞ্চলে দ্রুত পাকা ধান কেটে বাড়িতে তুলতে কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। শনিবার (৯ এপ্রিল) থেকেই জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পৃথকভাবে বিভিন্ন উপায়ে কৃষকদের এই পরামর্শ দিচ্ছে।
এদিকে, নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদীতে পানি কমতে শুরু করায় খালিয়াজুরী, মদন, মোহনগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে ধাট কাটা শুরু করেছে কৃষকরা। মোহনগঞ্জ উপজেলার সায়াইর ইউনিয়নের সয়াইর গ্রামের কৃষক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী জানান, আমাদের এলাকায় ধান কাটার জন্য শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আসলে আমরা দ্রুত ধান কাটতে পারবো। শেরপুর, জামালপুর সহ বিভিন্ন জেলা থেকে হার্ভেস্টার মেশিন ইতিমধ্যে আসতে শুরু করেছে।
খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের কীর্তনখলা হাওর, চুনাই হাওর, বাদিয়ারচর হাওর, টাকটারের হাওর, মনিজান হাওর, লেবরিয়া হাওর, হেমনগর হাওর চাকুয়া ইউনিয়নের গঙ্গবদও হাওর, নয়াখাল হওর, গাজীপুর ইউনিয়নের বাগানী হাওর, নাওটানা ও ডাকাতখালি হাওরের ধানকাটার কার্যক্রম ইতিমধ্যে চলমান রয়েছে। মদন উপজেলা কৃষক সোহাগ মিয়া বলেন, আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে সরকার যদি আমাদের কে সহযোগিতা না করে তাহলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবোনা।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমান কৃষকদের কে দ্রুত পাকা ধান কাটার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। রোববার সকাল থেকে জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান, জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত, খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম আরিফুল ইসলাম, মদনের ইউএনও মো. বুলবুল আহমেদসহ প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তারা মদন ও খালিয়াজুরির বিভিন্ন হাওর ঘুরে কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত জানান, কির্তনখোলা ও নাউটানা এলাকায় আশা বাঁধের ফাটল দেখা দিয়েছিল,তা আমরা দ্রুত মেরামত করেছি। ধনু নদীর পানি আজ রোববার সকাল ১১টার দিকে বিপদ সীমার ৩৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আর কোনো আশঙ্খা নেই। আমাদের লোক বাধঁ রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়তই তদারকী করছি।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল রোববার সন্ধ্যায় বলেন, আমরা হাওরাঞ্চলের কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ আগামী তিন দিনের মধ্যে নেত্রকোনা এবং এর উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে মাঝারি থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে মর্মে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অতিবৃষ্টির ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির প্রভাবে নতুন করে জেলার নদ-নদী, হাওরসহ নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়বে। ফলে, হাওরে সোনালি ধান কেটে দ্রুত ঘরে তোলার জন্য বলা হচ্ছে। এ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতামূলক ও অবহিতকরণ প্রচার করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার ১০টি উপজেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। এর মধ্যে হাওরে অর্ধেক জমি রয়েছে। গত ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় হঠাৎ করে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খালিয়াজুরির ধনু নদের পানি ৭ থেকে ৮ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমায় চলে আসে। পানির প্রবল চাপে খালিয়াজুরি ও মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোতে চাপ বেড়ে যায়। ৩ ও ৪ এপ্রিল মদনের ফতেপুর হাওর, খালিয়াজুরির কীর্তনখোলা হাওর, লক্ষ্মীপুর হাওরসহ কয়েকটি হাওরের বেড়িবাঁধের বাইরের অংশ তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়।
এছাড়া লেপসাই হাওর, চৈতারা হাওরসহ বিভিন্ন হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের অন্তত ২০টি স্থান হুমকিতে পড়ে। এসব বাঁধের অনেক অংশে ধস ও ফাটল দেখা দেয়। তবে পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন কৃষকদের নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো সংস্কারকাজ চালায়। এতে এখন পর্যন্ত কোনো বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে গত বুধবার রাত থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। এতে অনেক খেতের ফসল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। আগামী কয়েক দিনে বৃষ্টিপাতসহ উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নতুন করে বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে- এই আশঙ্কায় কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত