স্মৃতিতে ডাঃ বি চৌধুরী - মো. জয়নাল আবেদীন
প্রকাশ: ৬ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:১২ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:২৭
তাঁকে প্রথম কবে কোথায় দেখেছি তা মনে নেই। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁর সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়। তাঁর পিতা কফিল উদ্দীন চৌধুরী আমাদের তিন থানা( শ্রীনগর, সিরাজদিখান ও লৌহজং) নিয়ে গঠিত আসনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। আমি তখন শ্রীনগর থানা ও শ্রীনগর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। সে সুবাধেই পরিচয়ের সূত্রপাত। বাবা চাচাদের কাছে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী কফিলউদ্দিন চৌধুরীর কথা শুনেছি। তখন যুবক বি চৌধুরী সাহেব পিতার পক্ষে ভোটে চেয়ে জন সংযোগে এলাকায় এসেছিলেন।
১৯৭০ সালে বন্যার সময় তিনি মেডিক্যাল টিম নিয়ে শ্রীনগর এসে এলাকার জনগণকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছিলেন।আমরা তাঁর টিমকে সহায়তা করি- যাতে জনতা সহজে সেবা পায়। সে দিন থেকে পরিচয়- যা তিনি কখনও ভুলে যাননি১৯৭০ সালের নির্বাচনে আমরা প্রাদেশিক পরিষদের প্রার্থী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন-এর পক্ষে কাজ করি। সেটা ছিল তাঁর জীবনে প্রথম নির্বাচন। তাই মিটিং মিছিল জনসংযোগ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে বেশি করতে হয়েছে।সে তুলনায় কফিলউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে মিটিং মিছিল হতো খুব কম। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ছিল চৌধুরী সাহেবের সাথে বেশি।
শ্রীনগর থানা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবদুর রশিদ মিয়ার অনুরোধে আমি কফিল উদ্দিন চৌধুরীর দুটি জনসভায় যোগ দেই। রারিখালের জনসভায় ডাঃ বি চৌধরী সাহেব পিতার পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তৃতা করেন। তিনি স্বায়ত্বশাসন ব্যাখ্যা করেছিলেন সহজ ও সরল বাংলায়। যা একজন অশিক্ষিত মানুষও বুঝতে পেরেছিলেন স্বায়ত্ত শাসন কি এবং কেন দরকার।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্ষাকালে আমাদের প্রতিবেশি সুধনের চিকিৎসার জন্য তাঁর বাড়ি মজিদপুর দয়হাটা গিয়েছিলাম। অনুরোধ না করা সত্বেও অর্ধেক ফি নেন তিনি।
১৯৭৮ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অনুরোধে রাজনীতিতে যোগদান করেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব হন তিনি।মন্ত্রী, উপ প্রধান মন্ত্রী , সংসদ উপনেতা ও রাষ্ট্রপতির পদ অলংকৃত করেন।
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তিনি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতেন। পাতলা একটি ফতুয়া গায়ে লুঙ্গি পড়ে হাঁটার পরে ঘামে চুপ চুপ অবস্থা দেখে ভোটারদের মন গলে যেত।অনেকেরে পায়ে হাত দিয়েও সালাম করতেন।
রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা অক্ষুন্ন (নিরপেক্ষতা) রাখতে গিয়ে তিনি নিজের গড়া দলের লোকজনদের বিরাগভাজন হয়ে পদত্যাগ করেন। যদিও সংবিধান তাঁর পক্ষে ছিল। তবু তিনি রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল না করে পদত্যাগ করেন। গঠন করেন নতুন দল বিকল্প ধারা। বিকল্প ধারার প্রার্থী হিসেবে তাঁর পুত্র মাহি বি চৌধুরী বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন। আমরা মাহি বি চৌধুরীকে সমর্থন দেই। এ সময়ে তিনি অন্যের মোবাইল দিয়ে আমাকে ফোন দিয়ে বার বার বলতেন ভোট গননা পর্যন্ত যেন আমাদের লোকজন ভোটকেন্দ্র ত্যাগ না করেন। আমার চাকুরীর যাতে সমস্যা না হয় এ জন্য তিনি নিজের মোবাইলে ফোন দিতেন না।
বিএনপির আমলে তাঁর দলীয় লোকজনদের দু/এক জন আমাকে বান্দরবান/ খাগড়াছড়ি বদলী করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করলে তিনি বলতেন,” কেন ? ও তো ভাল ছেলে- বঙ্গবন্ধুর ভক্ত। আমাদের দলের সমর্থক নয়। সে জন্য কেন ওকে বদলি করবো? বিএনপির যারা আমাকে ভাল জানে তারা আমাকে এসব জানাতো।ডাঃ বি চৌধুরী রাজনৈতিক কারনে কখনও কারো ক্ষতি করেননি।ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য তিনি কোন কর্মীর বা এলাকার লোকজনদের জন্য তদবির না করলেও কারো ক্ষতি করেননি।
কোন এক নির্বাচনে তাঁকে আমি ভোট কেন দেব না তা ব্যাখ্যা করে এলাকায় বেনামী একটি লিফলেট বিতরন করি। ভোটে জয়লাভ করে তিনি লিফলেট ছাপিয়ে যারা তাঁকে ভোট দিয়েছেন এবং যারা ভোট দেননি তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানান। এমন ছিল তাঁর উন্নতমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বর্তমান রাজনীতিতে এ ধরনের আচরণ নেই বললেই চলে।
তিনি অসুস্থ ছিলেন জানার পরে তাঁকে দেখতে যাওয়ার ও ক্ষমা চাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল।আমার লিখা বই গুলি তাঁকে উপহার দিতে চেয়ে ছিলাম।কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি।
বাংলাদেশের চিকিৎসা ও রাজনৈতিক জগতের এজ উজ্জল নক্ষত্র ছিলেন প্রফেসর একিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধরী।তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করি।পরিবারের প্রতি জানাই সমবেদনা।আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।
কা/আ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত