সাহিত্য সম্ভ্রম হারিয়ে লজ্জিত
প্রকাশ: ১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৩১ | আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৩৯
সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের ‘জ্ঞানচর্চা ও পাঠাভ্যাস’ বাড়ানোর জন্য ৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বই কেনার বরাদ্দ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এজন্য এক হাজার ৪শ ৭৭টি বইয়ের তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ে পত্রিকাতে রিপোর্ট হয়েছে। বইয়ের তালিকায় আমলা লেখকদের আধিপত্য। এর মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নবীরুল ইসলাম বুলবুলের বই রয়েছে ২৯টি। যার বেশিরভাগ বই আবার কবিতার!
এপার ওপার বাংলার সাহিত্য এখন সম্ভ্রম হারিয়ে লজ্জিত। ভালো লেখকের ভাল বই মাটিতে গড়ায়। ধান্দাবাজ উঠতি তরুণ প্রকাশক পদলেহন করে মন্ত্রী, সচিব, প্রশাসনের কর্তার বই প্রকাশ করেন এবং তা আবার খুবই বিক্রি হয়। বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে মুখ্য, পররাষ্ট্র, তথ্য, ডিজিটাল, সচিব, প্রশাসন সবাই ব্যস্ত। হয়ত সবার প্রধান যিনি তিনি ভাবেন, “এ কি তবে সার্বজনীন সাহিত্য”। তথাকথিত চ্যানেলের টি ভি রিপোর্টার একুশে বই মেলায় ভাষার তোড়ে রঙ্গ ভঙ্গে তোলে তরঙ্গ। সাহিত্য এখন লজ্জিত। সচিবের পিতা সাহিত্যে পুরস্কার পান। প্রতি বছর বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহিত্যে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। গত কয়েক বছর এসব পুরস্কার নিয়ে লজ্জাজনক অবস্থা তৈরি করেছেন সরকারি আমলারা। একজন আমলা তার বাবার জন্য সাহিত্যে সরকারি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছিলেন। পুরস্কার ঘোষণার পর চারদিকে সমালোচনা শুরু হয়। সবার বক্তব্য এমন কবিতা লিখে পুরস্কার পাওয়া এক বড় রঙ্গ অবিশ্বাস্য। সমালোচনার ফলে সরকার সে পুরষ্কার বাতিল করেন।
এপাং ওপাং ঝপাং / সুর ধরেছে পটাঙ
ব্যাঙ ডাকে গ্যাঙ গ্যাঙ / হাতির কতো বড় ঠ্যাং l l
হরে কর কমবা / গরু ডাকে হাম্বা
গর্জন করে অম্বা / মা ডাকেন বুম্বা l l
হরে কর কমবা / ডব্বা ডব্বা রব্বা
হুড়হুড় করে হুম্বা / তোবা তোবা আব্বা l l
সচিবের ২৯টি কবিতার বই সরকার ক্রয় করে, বাকী সব অন্যান্য মন্ত্রী আর আমলার দখলে। বাকী যদি থাকে তা প্রশাসনের হাতে। আর ভাল লেখক চিৎপটাং। সাহিত্য এখন লজ্জিত। বিশিষ্ট কবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশিষ্ট কবিতার ভাষায়ঃ
ওয়ান-টু-থ্রি-ফোর / আসবে আসবে নতুন ভোর
ফাইভ-সিক্স-সেভেন-এইট্ / জিততে গেলে আসবে ফাইট
নাইন-টেন-ইলেভেন / ঘর আমাদের সবার হেভেন
টুয়েলভ-থার্টিন-ফর্টিন / কার্টুন কার্টুন কাটিং
ফিফটিন-সিক্সটিন-সেভেনটিন / ঝাল-টক-লোডশেডিং
এইট্টিন-নাইন্টিন-টোয়েন্টি / লাগাও এবার নো-এন্ট্রি l
বাংলা অ্যাকাডেমি বা সাহিত্য অ্যাকাডেমি বা বিভিন্ন পরিচালক আবার লক্ষ টাকার প্রাপ্তির জন্য পুরস্কার নিতে ব্যস্ত। কার নামে পুরস্কার তাই লোকে জানে না। দিচ্ছে কে তার বা কি পরিচয়। সচিব সাহেব পুরস্কার হাতে গদগদ, দাঁত তার বিকশিত, দাঁতের বয়স তার নাকি চার। প্রশাসনের কর্তা চোর ডাকাত ভুলে গ্রন্থ প্রমোশনে ব্যস্ত। তাদের সবার পাল্লায় পরে সাহিত্য যাচ্ছে গোল্লায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী, সচিব, প্রশাসন, ধনী, রাজনীতিবিদ সবায় সাহিত্যিক কবি। প্রশ্ন হলো চোর কি তবে চা শ্রমিক বা গরীব মেটে মজুর। দামের লাগামহীন বৃদ্ধি, লোভী ব্যবসায়ীদের পাল্লায় পড়ে জনগণ ত্রাহি ত্রাহি। সাহিত্য তাদের কাছে দুঃস্বপ্ন। গরীব কবিতা ভুলে তেল লবণ সাবান আর বস্ত্র জোগাতে ব্যস্ত। কাপড় ঊর্ধ্বাঙ্গে দিলে পশ্চাদ্দেশ দর্শন হয়। সাহিত্য তাদের ভেংচি কাটে। বাংলার মন্ত্রী সচিব প্রশাসন ধনী রাজনীতিবিদ সবায় কবি, তাই মনের সুখে ওপারের কবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেনঃ
হরে করো কমবা.
গরু ডাকে হামবা।
গর্জন করে অম্বা,
মা ডাকেন বুম্বা।
হরে করো কমবা.
ডোব্বা ডোব্বা রোব্বা,
হুড় হুড় করে হুম্বা,
তোবা তোবা আব্বা
লেখকঃ কথা সাহিত্যিক, কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত