শিক্ষা সফরে মদের খালি বোতলে জুস ভরে টিকটক: ডোপ টেস্টে নির্দোষ বিদ্যালয়

  এসআর শফিক স্বপন,মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৪, ১৯:১৬ |  আপডেট  : ১৮ মে ২০২৪, ১৫:৫১

টিকটকে আসক্ত হয়ে অভিনব কায়দা বেছে নেয় শিক্ষার্থীরা। জোগাড় করে পুরানো মদের বোতল। সেই বোতলে জুস ভরে শিক্ষা সফরে যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গাড়িতে আসার সময় মদ ঢেলে খাওয়ার অভিনয়ে যোগ দেয় সবাই। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েলে সমালোচনার ঝড়ে উঠে নেট দুনিয়ায়। পরে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে মদের কোন চিহ্নই পাওয়া যায় না। ডোপ টেস্টেও নির্দোষ হয় শিক্ষক-শিক্ষকরা। অথচ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার মাদারীপুরের শিকদার হাট উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গেলো ২৪ ফেব্রæয়ারী মাদারীপুরের শিকদার হাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৪১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা সফলে সোনারগাঁও যায় শিক্ষকরা। বাসের মধ্যে বিনোদনের সময়ে দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী রাকিব, ছরোয়ার হোসেন, নাজমুল হাসান ও সিয়াম চারজন মিলে মদের বোতলে জুস ভরে পান করতে থাকে। বিষয়টি টিকটকে তার অন্যান্য বন্ধুরা ছড়িয়ে দেয়। এতে সমলোচনার ঝড়ে উঠে নেট দুনিয়ায়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত কমিটি করলে চার শিক্ষার্থী ও দুই শিক্ষককে ড্রপ টেস্ট করানো হয়। এতে নেগেটিভ আসে সবার। পরে তদন্ত প্রতিবেদনে নির্দোষ হয় দোষীরা। তবে সামাজিক মান-সম্মান আর সামাজিক মাধ্যমে বুলিংয়ের শিকার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখনো বেতন বন্ধ শিক্ষকদের। আর শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। 

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ ওয়ালিদ মোরশেদ জানান, ‘ঘটনার দিন আমি আমার পরিবারের স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে নিয়ে বাসে উঠি। হঠাৎ একজন ছাত্র বলল, ‘স্যার পিছনে গ্যাঞ্জাম হচ্ছে’ তাড়াতাড়ি আসেন। আমি পিছনে গিয়ে দেখলাম কিছু শিক্ষার্থী আনন্দ উল্লাস করছে। আমি বললাম হাতে কী? তখন ছাত্ররা বলল এটা স্যার বোতলের ভিতর মদ না, জুসের রস। আমরা টিকটক করার জন্য মজা করছি। তখন নোমান স্যার হাতে নিয়ে এটা আমার নিকট দেন। আমি পরীক্ষা করে দেখলাম সত্যিই মদ না জুস। আমি ওদের হাতে দিয়ে বললাম তাড়াতাড়ি বোতলটা ফেলে দাও। ওদের ফেলতে দেরী হওয়ায় পরে আমি নিজে বোতলটা ফেলে দেই, তিনি আরো প্রকাশ করেন যে, কারও উসকানিতে যেন তথ্য না জেনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুবিধা লাভের জন্য কোন রিপোর্ট বা পোস্ট না করে, কারন এর ফলে একজন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে। বিদেশীদের মত আমাদের দেশেও টিকটক নিষিদ্ধ করা হোক।’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শিউলী আক্তার বলেন, ‘এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রনোদিত। কোন একটি দল ইচ্ছাকৃত ভাবে বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদের দ্বারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে।’

পর্যায়ক্রমে কয়েকটি তদন্তের মাধ্যমে জানা গেছে যে, মদের যে ব্যাপারটি দেখিয়েছে তা সম্পূর্ণ ভূল। অতি উৎসাহে ছাত্ররা খেজুরের রস নিয়ে টিকটক করার জন্য এমনটি করেছে। চক্র মহল তিলকে তাল বানিয়ে ঘটনাটি জটিল করেছে। শিক্ষা সফরে যাওয়ার ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি, টিএনও ও অভিভাবকের সম্মতি ছিল। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন শিকদার জানান, ‘চারজন শিক্ষার্থী মদের খালি বোতলে খেজুরের রস ভরে টিকটক করেছে। ব্যাপারটি দুঃখ জনক। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চার শিক্ষার্থী ও দুই শিক্ষক কে ড্রপ টেস্ট করেছি। এটি সম্পূর্ণ নেগেটিভ এসেছে। মিডিয়াসহ একটি মহল ফায়দা লুটার জন্য ও বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্য করার জন্য উদ্দোশ্য প্রনোদিত হয়ে কিছু সংবাদ পরিবেশন করেছে। এই সংবাদগুলো সম্পূর্ণ বিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি: আলাউদ্দিন আল খালিদ জানান, ‘শিক্ষা সফরে কমলমতি শিশুরা মদের খালি বোতলে করে খেজুরের রস খেয়েছে। তাদের ড্রপ টেস্টে নেগেটিভ এসেছে। আমরা তাদের শাসন করেছি। এর পরেও কিছু সংবাদ মাধ্যম বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ভিত্তিহীন এই সংবাদ পরিবেশন করেছে। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

এব্যাপারে শিবচর উপজেলার শিক্ষা অফিসার ও তদন্ত কমিটির প্রধান খন্দকার মো. মাকসুদুর রহমান জানান, ‘আমরা তদন্ত করেছি, এখানে মদ ছিল না। খেজুরের রস ছিল, তবে টিকটকের জন্য মদের বোতলে করে এভাবে আনন্দ করাটা ঠিক ছিল না। ব্যাপারটি আমরা আরো খতিয়ে দেখছি।’
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত