শাহজাহান ভাইকে যেমন দেখেছি

  জয়নাল আবেদীন

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৩, ১৬:০৭ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৮

মোহাম্মদ শাহজাহান সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। ছাত্রজীবন শেষ করে তিনি ইংরেজি দৈনিক দি পিপলস-এ সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে এ পত্রিকা জেড়ালো ভূমিকা রাখে। 

২৫ মার্চে অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর প্রথম লগ্নে পাকিস্তান আর্মি পিপলস পত্রিকা অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। মোহাম্মদ শাহজাহান যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ফয়েজ আহমদ আমাদের জাতীয় সংবাদ সংস্থা বিএসএস গড়ে তোলেন।মো. শাহজাহান যোগ দেন বিএসএসে। তাঁকে প্রথম কবে দেখেছি তা মনে নেই। তবে ১৯৮০-৮১ সালের দিকে তিনি একদিন বাংলাদেশ কৃষিব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এসে জানান যে, তাঁর ছোট ভাই কৃষি ব্যাংকে নিয়োগ পেয়েছেন। সাথে ছোট ভাইকে নিয়ে এসেছিলেন। পরিচয় করিয়ে দিলেন। পোস্টিং যেন ঢাকায় বা আশেপাশে হয় সে জন্য অনুরোধ করেন। ছোট ভাই ব্যাংকে আর জয়েন করেনি। বিমানে বা বিদেশে চাকরি হয়। সেই যে পরিচয়- তা আর মুছে যায়নি। আমি জনসংযোগ বিভাগে কর্মরত থাকায় প্রায়ই দৈনিক পত্রিকার অফিসে, বিএসএস,বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে যেতাম।  যেতাম প্রেসরিলিজ দিতে। তখন বি এস এস অফিসে শাহজাহান ভাইর সাথে আর অবজারভার পত্রিকার অফিসে নুরুল হুদা ভাইর সাথে দেখা হতো।কা ইয়ুম খান মিলন, মোজাম্মেল হোসেন মন্টু তখন দৈনিক সংবাদে বসতেন বংশাল রোডে।তাঁরা সকলে আমাকে ছোট ভাইর মতো জানতেন। 

বিক্রমপুরের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি যেতেন। আমি গেলে তাঁর সাথে দেখা হতো, কথা বিনিময়  হতো। তাঁর মন ছিল সরল সহজ। কথায় ও কাজে এক ছিলেন। তিনি ছিলেন বিনয়ী, অহংকারমুক্ত সাদা মনের মানুষ। অন্যকে সম্মান দিতেন। নিজেও সম্মান পেতেন।

বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মধ্যে বিক্রমপুরের ফয়েজ আহমদ ও মাহবুবুল আলম ছিলেন সিনিয়র। সম্পাদক ছিলেন, কলাম লিখতেন। শফিউদ্দীন আহমদ ছিলেন মফস্বল সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি বিক্রমপুর বার্তার সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি। তাঁদের পরে সাংবাদিক হিসেবে যারা খ্যাতি অর্জন করেছেন তাঁরা হলেন আবদুল কাইয়ুম খান মিলন, আবুল কালাম আজাদ, সুশান্ত ঘোসাল, মোহাম্মদ নুরুল হুদা, মোজাম্মেল হোসেন মন্টু, সিদ্দিকুর রহমান, শেখ মুহম্মদ নূরুল ইসলসম, শেখ আবদুল মোতালেব, ফরিদ হোসেন, নুরুল কবীর ও মহিউদ্দিন খান মোহন  অন্যতম।

১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম সরকার গঠন করলে মোহাম্মদ শাহজাহানকে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেস মিনিস্টার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। পাঁচ বছর তিনি দেশের বাহিরে থাকায় যোগাযোগ ছিলনা তাঁর সাথে। এর পরে খুব কম দেখা হতো আমি ঢাকার বাহিরে থাকায়।

গতকাল তাঁর মৃত্যু সংবাদ ফেসবুকে দেখে আপন জন বিয়োগের করুন সুর হৃদয় যন্ত্রে বেজে ওঠে। তিনি অসুস্থ ছিলেন। চলাফেরা করতে পারতেন না। তাঁর আবাসিক ঠিকানা জানা না থাকায় দেখা করতে যেতে পারিনি। তাঁর মৃত্যু সংবাদ আমাদের জন্য বেদনা ও দুঃখের। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসিব করুন।আমিন।

 

লেখক- বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জয়নাল আবেদীন,
গবেষক ও লেখক, সাবেক ব্যাংক নির্বাহী

 

 

 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত