শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি ইউরোপীয় মিত্রদের
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৬:০৩ | আপডেট : ২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:১৮
ইউক্রেনের পক্ষে নতুন করে সমর্থনের জোয়ার তুলেছেন ইউরোপীয় মিত্ররা। জোর দিয়ে বলেছেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনও শান্তি আলোচনায় অবশ্যই কিয়েভকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ আগামী সপ্তাহে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে। শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে ট্রাম্পের প্রতি রাশিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড এবং ইউরোপীয় কমিশনের নেতারা জানান, সম্ভাব্য চুক্তিতে ইউক্রেনকে তার ভূখণ্ডের একটি বড় অংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হতে পারে।
তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে আগামী শুক্রবার আলাস্কায় বৈঠকে বসবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করতে রাজি আছেন, যাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও থাকবেন। তবে আপাতত এটি ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকই থাকছে। রুশ নেতা প্রথম দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠকের প্রস্তাব করেছিলেন।
জেলেনস্কি বলেছেন, কিয়েভ ছাড়া যেকোনও চুক্তি হবে ‘মৃত সিদ্ধান্ত’।
ট্রাম্প এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি কেবল পুতিনের সঙ্গেই বৈঠক করে শুরু করতে পারেন। সাংবাদিকদের তিনি এমনটাই জানিয়েছিলেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেছিলেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন, পুতিন ও জেলেনস্কি উভয়কে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের সম্ভাবনা রয়েছে।
পুতিন এতে রাজি হবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। কারণ তিনি সরাসরি আলোচনার বেশ কয়েকটি সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করার পর তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে দুই নেতা মুখোমুখি হননি।
শুক্রবার কথা বলার সময় ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দেন যে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে চুক্তির জন্য ‘কিছু ভূখণ্ড বিনিময়’ হবে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শুধু জেলেনস্কি নয়, ইউরোপীয় মিত্ররাও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান।
টেলিগ্রামে তিনি লেখেন, “আমরা রাশিয়াকে তার করা অপরাধের জন্য পুরস্কৃত করব না। আমাদের বিরুদ্ধে যেকোনো সিদ্ধান্ত,ইউক্রেন ছাড়া যেকোনও সিদ্ধান্ত, শান্তির বিরুদ্ধেও সিদ্ধান্ত।”
বিবিসির মার্কিন সংবাদ সহযোগী-সিবিএস জানিয়েছে, হোয়াইট হাউজ ইউরোপীয় মিত্রদের বোঝানোর চেষ্টা করছে একটি চুক্তি মেনে নিতে, যাতে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের পুরো দনবাস অঞ্চল এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপ নিজের কাছে রাখে।
তবে ইউরোপীয় নেতারা তাদের বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলেন যে “আন্তর্জাতিক সীমানা বলপ্রয়োগে পরিবর্তন করা যাবে না।”
তারা বলেন,ইউক্রেনের নিজ ভাগ্য নির্ধারণের স্বাধীনতা রয়েছে এবং জোর দিয়ে উল্লেখ করেন যে তাদের দেশগুলো ইউক্রেনকে কূটনৈতিক, সামরিক ও আর্থিকভাবে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
নেতারা আরও বলেন,একটি কূটনৈতিক সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ইউক্রেন রক্ষার জন্য নয়, ইউরোপের নিরাপত্তার জন্যও।
ইউরোপ মস্কোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রুশ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদান।
জো বাইডেন ২০২১ সালের জুনে জেনেভায় পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর, বর্তমান মার্কিন ও রুশ প্রেসিডেন্টদের মধ্যে প্রথম বৈঠক এটি।
২০২২ সালে ক্রেমলিন চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চল — দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া এবং খেরসন সংযুক্ত করার ঘোষণা দেয়। যদিও তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
পূর্ণমাত্রার আক্রমণে মস্কো এখন পর্যন্ত কোনও নির্ণায়ক সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। তবে পূর্ব ইউক্রেনের বড় অংশ দখল করে রেখেছে। অন্যদিকে ইউক্রেনীয় পালটা আক্রমণ রুশ বাহিনীকে পিছনে ঠেলে দিতে সক্ষম হয়নি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত