লৌহজংয়ে সরকারি বিধান অমান্য করে ড্রেজার দিয়ে কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা

  মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২১ |  আপডেট  : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৩২

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের বৌলতলী ইউনিয়নের মাইজগাঁও ও খিদিরপাড়া গ্রাম সংলগ্ন কৃষি জমিতে অবৈধভাবে ড্রেজিং করে মাটি কেটে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। দীর্ঘদিন ধরে সোশাল ইসলামী ব্যাংকে মর্গেজ রাখা জমিতে ড্রেজিং করে আসছেন নূরে আলম সারেঙ্গ ও তার সহযোগীরা।

কৃষি জমি ভরাট করতে হলে স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে শ্রেণী পরিবর্তন করার সরকারি বিধান থাকলেও তা অমান্য করেই অপরিকল্পিত ভাবে কৃষি জমির মাটি কাটায় হুমকিতে পড়েছে পাশে থাকা অপর কৃষকদের তিন ফসলী কৃষি জমিগুলো। এই পরিস্থিতিতে কৃষি জমি রক্ষায় অবিলম্বে অবৈধ ড্রেজিং বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় চলতো ড্রেজিং কার্যক্রম। যা বর্তমানে একই কায়দায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ছাত্রছায়ায় ও স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ রেখে  ড্রেজিং কার্যক্রম  অব্যাহত রেখেছেন ওই ড্রেজার ব্যবসায়ী। এ অবস্থায় অবৈধ ড্রেজিং বন্ধে প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ না থাকায় কৃষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লৌহজংয়ের মাইজগাঁও ও খিদির পাড়া গ্রামের বিস্তীর্ণ জমির মাঝে স্যালো ইঞ্জিনচালিত ১টি কাটার ড্রেজারের মাধ্যমে সোশাল ইসলামী ব্যাংক ঢাকার ইসলামপুর শাখায় মর্গেজ রাখা নিজ কৃষি জমির মাটি ড্রেজার দিয়ে উত্তোলন করে নুরে আলম সারেঙ্গ অন্যত্র ভরাট ব্যবসা করছেন। আর যে জমি ভরাট করছেন তারও শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়নি। 

কৃষকরা জানান, বর্ষার পানিতে কৃষি জমি গুলো ডুবে থাকার সুযোগে তলদেশের পাইপ অন্য জমিতে স্থাপন করে বিভিন্ন ব্যক্তির কৃষি জমি থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কেটে নিচ্ছে। এক জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে শ্রেনী পরিবর্তন না করে অপর কৃষি জমি অপরিকল্পিত ভরাটের কারনে একদিকে পাশের জমি ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে অপরদিকে গ্রামের বিভিন্ন স্থানে জ্বলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ড্রেজার ব্যবসায়ী নুরে আলম সারেঙ্গ অপরিকল্পিত ভাবে জমির মাটি কাটায় পাশে থাকা কৃষক মোসলেম সিকদার,  হাকিম শেখ,  খবির মাস্টার, শামসুল হক মাস্টার ও আনোয়ার বেপারীর তিন ফসলি কৃষি জমিতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। 

স্থানীয় কৃষি জমির মোসলেম সিকদার জানান, বিগত শেখ হাসিনা সরকার আমল থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কেটে ভরাট ব্যবসা করছে নুরে আলম সারেঙ্গ নামের প্রভাবশালী ড্রেজার ব্যবসায়ী। সে সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেল্টার দিয়েছে আর এখন একই কায়দায় শেল্টার দিচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। প্রতিবাদ করলে মামলা ও হামলার হুমকি দেয় তারা। ফলে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।

জানতে চাইলে কৃষি জমিতে ড্রেজার স্থাপনের কথা স্বীকার করে ড্রেজার ব্যবসায়ী নুরে আলম সারেঙ্গ বলেন, ড্রেজার লাগিয়েছি কিন্তু বর্তমানে মাটি কাটা বন্ধ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বৌলতলী ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. জালালউদ্দিন জানান, কৃষি জমি ভরাট করার আগে শ্রেণী পরিবর্তন এবং কি কারনে ভরাট করবে তা অবহিত করার বিধান রয়েছে। কিন্ত কতিপয় ভূমিদস্যুরা তা অমান্য করে ভরাট করে যাচ্ছে। খবর পেয়ে নিষেধ করলেও এখনও জমিতে ড্রেজার স্থাপন করা আছে বলে শুনেছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) মোঃ জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হবে।

সা/ই

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত