বিগত সরকারের দুর্নীতি আমাদের সব অগ্রযাত্রাকে খেয়ে ফেলেছে: শারমীন এস মুরশিদ

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১৮:২২ | আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, ২১:১৫

বিগত সরকারের সময় দুর্নীতি আমাদের সকল অগ্রযাত্রাকে উইপোকার মতো খেয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ।
তিনি বলেন, সে সময়ে প্রায় প্রতিটি প্রকল্পেই দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতি নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ দেখিয়ে আসছে। আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারা যেন দুর্নীতি না করেন- সেই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি।
শনিবার (২১ জুন) ঢাকার এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ উপলক্ষ্যে এক ছায়া সংসদে এসব কথা বলেন তিনি।
শারমীন এস. মুরশিদ বলেন, একটি স্বৈরাচারী সমাজব্যবস্থার ভেতরে থেকে আমরা কোনো সংবেদনশীল, যত্নশীল নীতিমালা প্রত্যাশা করতে পারি না। বিগত সরকার বাল্যবিবাহের মতো একটি সংবেদনশীল সামাজিক বিষয়ের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে বিয়ের বয়স ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ বছর নির্ধারণ করে একটি ভয়ংকর উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল। ফলে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমাদের দীর্ঘদিনের অর্জন টেকসই হয়নি।
তিনি বলেন, যে দেশে আইন করে যৌতুক ও বাল্যবিবাহ বন্ধ করা যায়নি, সে দেশে শুধুমাত্র আইন দিয়ে শিশুশ্রম বন্ধ করাও কঠিন।
তিনি বলেন, শিশুশ্রম সম্মানজনক নয়- এটি শিশুর অধিকার হরণ করে। যে সমাজে শিশুশ্রম থাকে, সেখানে অর্থনীতির নৈতিকতা থাকে না। দারিদ্র্য ও শিশুশ্রম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই শিশুশ্রম নিরসনে দারিদ্র্য বিমোচনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে শিশুশ্রম নিরসনে রাষ্ট্র ও সমাজকে মুখোমুখি দাঁড় করানো যাবে না; বরং রাষ্ট্র, সমাজ, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকার আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন খাতে যে লুটপাট চালিয়েছে, তা সবারই জানা। একইভাবে শিশুশ্রম নিরসনে বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পে ৩৫২ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে তার সুফল পাওয়া যায়নি। সুবিধাবঞ্চিত শ্রমজীবী শিশু নির্বাচন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও আয়বর্ধক কাজের জন্য নির্ধারিত অর্থ বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর যেন কেবল ক্ষমতার নয়, দুর্নীতিরও পালাবদল না হয়। শিশুশ্রম নিরসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে দেশি-বিদেশি অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহারের আহ্বান জানান। বর্তমানে দেশে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ৩৫ লাখের বেশি, পথশিশু রয়েছে ৩৪ লাখ, যার মধ্যে প্রায় ১১ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। ৯৪ শতাংশ পথশিশু কোনো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পায় না, ৫৮ শতাংশের জন্মসনদ নেই, এবং অনেকেই বাবা-মায়ের সঙ্গেও সম্পর্কহীন। মেয়ে পথশিশুদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তারা পারিবারিক যত্নের অভাবে অশ্লীল ভাষায় কথা বলা, মাদক গ্রহণ ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অর্ধেকেরও বেশি কোনো শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় নেই এবং তাদের একটি বড় অংশ ফুটপাত, রেলস্টেশন, বাস বা লঞ্চঘাটে রাত যাপন করে। এসব শিশু দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিপীড়িত হয়ে খাতা-কলমের পরিবর্তে কোমল হাতে শ্রমের বোঝা তুলে নিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ.এইচ.এম সফিকুজ্জামান, আইএলও বাংলাদেশ অফিসের শ্রম প্রশাসন বিভাগের প্রধান নীরান রামজুঠান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে, আইএলওর পৃষ্ঠপোষকতায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহায়তায় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে “শিশুশ্রমের প্রধান দায় রাষ্ট্রের নয়, সমাজের” শীর্ষক ছায়া সংসদে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন উপসচিব রোকেয়া পারভীন জুই, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাবেক বিতার্কিক ড. এস. এম. মোর্শেদ, চাইল্ড লেবার বিশেষজ্ঞ আফজাল কবির খান এবং সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত রিপন। প্রতিযোগিতা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকাসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত