যে দেশ পারমাণবিক অস্ত্রহীন দেশকে নিরাপত্তার দেয়

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১৩:০৫ |  আপডেট  : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৫২

ফাইল ছবি

গ্ণপ্রজাতন্ত্রী চীন নিয়মিতভাবে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র তৈরি এবং উন্নতিসাধন করে, এদের মধ্যে রাসায়্নিক অস্ত্র এবং পারমাণবিক অস্ত্র ও রয়েছে। চায়নার প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরু হয় ১৯৬৪ সালে এবং এর প্রথম হাইড্রোজেন বোমা পরীক্ষা কার্যকর করা হয় ১৯৬৭ সালে। কম্প্রিহেনসিভ টেস্ট ব্যান ট্রীট (সিটিবিটি) এ সাক্ষর করার আগে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চায়না তার এ পরীক্ষা চালু রাখে। জৈবিক এবং অধিবিষ অস্ত্র সম্মেলন ১৯৮৪ সালে আসন লাভ কয়ে এবং রাসায়নিক অস্ত্র সম্মেলন ১৯৯৭ সালে অনুমোদন পায়।

চায়নার আর্সেনালে নিয়ক্লিয়ার ওয়ারহেডের সংখ্যা রাষ্ট্রের গোপনীয় বিষয়। চায়নার আর্সেনালের সংখ্যার ব্যাপারে অনেক ভিন্ন মতামত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের স্ংঘ এর মতে ২০১৫ সাল অব্দী চায়নার পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা প্রায় ২৬০ এর মতো, যা চায়নাকে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার বিরোধী চুক্তি দ্বারা স্বীকৃত পাচটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশদের তালিকার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম।অনেকের মতে, চায়নার কাছে "প্রায় দ্বিগুণ চেয়ে " বেশি পরিমাণ ওয়ারহেড রয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের নিকট হুমকি দাড়াবে।

২০১১ সালের শুরুর দিকে চায়না একটি প্রতিরক্ষা প্ত্র প্রকাশ করে যেখানে চায়না তার পারমাণবিক চুক্তির পাশাপাশি পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রথমে ব্যবহার নয় পলিসির কথাও উল্লেখ করে। এছাড়াও চায়না " চারটি নতুন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে যা চায়নার পারমাণবিকআপগ্রডের মাত্রা এবং পরি্কল্পনা সম্পর্কে উদ্বেগ তৈরি করে। 

৯৯৩ সালের ১৩ই জানুয়ারি চায়না রাসায়নিক অস্ত্র সম্মেলনে সাক্ষর করে। ১৯৯৭ সালের ২৫ এ এপ্রিল চায়নার এর সদস্য পদ লাভ করে । রাসায়নিক অস্ত্র নিষেধকরণ স্ংঘ কে দেওয়া প্রাতিষ্ঠানিক বিবৃতিতে চায়না উল্লেখ করে যে, অতীতে চায়নার কাছে অল্প পরিমাণে কেমিক্যাল আর্সেনাল ছিল কিন্তু কনভেনশনের সদস্যপদ লাভ করার পর সেগুলা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। চায়না তিনটি রাসায়নিক উৎপাদ্ন কারখানার কথা উল্লেখ করে, এগুলো হল সরিষা গ্যাস, ফসজিন গ্যাস এবং লিউস্টি।

চায়না পারমাণবিক অস্ত্র নিরোধী চুক্তি দ্বারা স্বীকৃত পাচঁটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের মধ্যে একটি যা চায়না ১৯৯২ সালে অনুমোদন পায়।চায়না একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ যা পারমাণবিক অস্ত্রহীন দেশদেরকে শর্তহীন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয় :

" চায়না কখনই পারমাণবিক অস্ত্রহীন দেশ বা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চলের বিরুদ্ধে  কোন পরিস্হিতিতেই বা কোন অবস্থাতেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার বা হুমকি প্রদানের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে না"

চায়নার সর্বজনীন নীতি সব সময়ই "প্রথমে ব্যবহার নয়" নীতি অনুসরণ করার পাশাপাশি প্রতিপক্ষ দেশগুলোর জন্য প্রতিবন্ধক এবং পাল্টা আক্রমণে সম্ভাব্য বাহিনী তৈরী রাখে।

২০০৫ সালে, চায়নার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি সাদা কাগজ প্রকাশ করে যেখানে উল্লেখ করা হয় চায়নার সরকার "কোন সময়েই বা কোন অবস্থাতেই প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না"। এর পাশাপাশি আরো উল্লেখ করা হয় যে," প্রথমে ব্যবহার নয়" নীতি ভবিষ্যতে সর্বদাই অপরিবর্তিত থাকবে এবং চায়না পারমাণবিক অস্ত্রহীন দেশ বা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চলের বিরুদ্ধে  পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার বা হুমকি প্রদানের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে না।

চায়না সাধারণত টরপেডো তাদের পারমাণবিক উৎক্ষেপণ অঞ্চল থেকে পৃথক করে রাখে যদি না  হুমকির মাত্রা অতিরিক্ত না হয়।

চায়না সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা জাতিসংঘের পারমাণবিক অস্ত্ররোধী চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে না,এটি পারমাণবিক অস্ত্র সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার জন্য একটি বাধ্যবাধকতামূলক চুক্তি যা ১২০ টিরও বেশি সংখ্যক দেশ দ্বারা সাক্ষরিত।

এ্ছাড়াও ১৯৭০ এর দশকে স্নায়ু যুদ্ধের সময় চায়না আলবেনিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্র সরবরাহ এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

মাও জেডং ১৯৫৪-১৯৫৫ সালে  কোয়েময় এবং  মাটসু দ্বীপের তাইওয়ান জলপ্রণালি সংকটের সময় প্রথমবারের মতো চায়নায় পারমাণবিক বোমা তৈরী করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন।যদিও তিনি আমেরিকার বিশাল সংখ্যক আর্সেনালের সাথে পাল্লা দেওয়ার কথা চিন্তা করেন নি,কিন্তু মাও বিশ্বাস করেছিলেন অন্তত অল্প কিছু সংখ্যক বোমা চায়নার কূটনৈতিক অবস্থান আরো দৃঢ় করবে।১৯৫৮ সালের শুরু দিকে বাওটাও এবং ল্যানঝাও এ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়, এবং লুপ নুর ও জিউকুয়ানে পারমাণবিক পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।সোভিয়েত ইউনিয়ন বিদারণীয় উপাদানের জন্য নিবেদিত বিভাগে    উপদেষ্টা পাঠানোর মাধ্যমে চায়নাকে সাহায্য করেছিল এবং ১৯৫৭ সালে প্রোটোটাইপ বোমা,মিসাইল এবং এর সাথে সংযুক্ত সংশ্লিষ্ট সকল প্রযুক্তি প্রদানের ব্যাপারে সম্মত হয়। চায়নীজরা সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রযুক্তি এবং উপাদান আমদানি করে দেশের অভ্যন্তরে  তাদেরকে উন্নতিসাধন করাকে উপযুক্ত মনে করছিল। এ কারণে চায়না সোভিয়েত ইউনিয়ন এর কাছে ইউরেনিয়াম রপ্তানি করে এবং তার বিনিময়ে ১৯৫৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন চায়নাকে দুটি আর-২ মিসাইল প্রদান করে।

ওই বছরেই সোভিয়েত প্রধান নিকিতা ক্রুশ্চেভ মাওকে যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেন এর সাথে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এর কথা জানান। চায়না ইতিমধ্যে ক্রশ্চেভ এর স্টালিন পরবর্তী শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিপক্ষে ছিল। যদিও সোভিয়েতের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকর্তারা চায়নীজদের আশ্বস্ত করেছিল এই বলে যে চুক্তিটি সোভিয়েতদের পারমাণবিক ছাতার নিচেই আছে,এই মতবিরোধের ফলস্বরুপ সিনো-সোভিয়েত বিচ্ছেদের আবির্ভাব ঘটে।১৯৫৯ সালের জুন মাসে, চীন এবং সোভিয়েত আনুষ্ঠানিকভবে তাদের সামরিক এবং প্রযুক্তি বিষয়ক চুক্তির ইতি টানে।১৯৬০ সালের জুলাইয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন চায়নার পারমাণবিক কার্যক্রমে তাদের সাহায্য বন্ধ করে এবং সকল সোভিয়েত যন্ত্রবিদদের পারমাণবিক কার্যক্রম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

জন ফ কেনেডি এবং লিন্ডন বি জনসন এর তত্তাবধীন আমেরিকান সরকার চায়নার পারমাণবিক কার্যক্রম এর ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিল এবং তারা সোভিয়েত কিংবা তাইওয়ানের সাহায্য নিয়ে  এই কার্যক্রম ব্যাহত করা কিংবা এতে আঘাত হানার সুযোগ খুঁজ ছিলেন,কিন্তু ক্রুশ্চেভ রাজি ছিলেন না।চায়নীজরা ১৬ই অক্টোবর ১৯৬৪ সালে ৫৯৬ সাংকেতিক নামে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে এবং তারা স্বীকার করে যে সোভিয়েতদের সাহায্য ছাড়া এই কার্যক্রম অসম্ভব ছিলো।১৯৯৬ সালের ২৯ জুলাক চায়নীজরা সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়।ক্যানবেরায় অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংগঠনের মতে,১৯৯৬ সালের পারমাণবিক বোমার  উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো ১.৫ কিলোটন।এটি চায়নার ২২তম ভূগর্ভস্থ পরীক্ষা এবং সর্বমোট হিসাবে ৪৫ তম।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত