অবৈধ ড্রেজার বালু ব্যবসায় বাধা

যুবদল নেতার বিরুদ্ধে এনসিপি নেতা ও তার স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ

  মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১১:৪৭ |  আপডেট  : ২৫ জুন ২০২৫, ১৯:০৭


মাদারীপুরে অবৈধ ড্রেজার বালু ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতা ও তার স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ এনসিপির অপর আরেক পক্ষের ইশারায় এ ঘটনা ঘটেছে। 

মঙ্গলবার (২৪ জুন) সন্ধ্যার দিকে জেলার রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের তাতিকান্দা গ্রামের ২নং ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে রাজৈর থানার পুলিশ।

আহতরা হলেন- এনসিপির জেলা সমন্বয়কারী কমিটির সদস্য ও রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের তাতিকান্দা ২নং ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা মহাসিন ফকির (৩৫) ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জান্নাতুল জারা নিপা (৩০)। তাদের উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, অবৈধ ড্রেজার বালু ব্যবসার জন্য পাইপ লাইন টানেন হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা এনামুল শেখ ও তার লোকজন। পরে তাদের বাধা দেন মহাসিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এনামুলসহ বিএনপি নেতাকর্মীরাও। একপর্যায়ে মহাসিনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাড়ির সামনের সড়কের ওপর ডেকে এনে মারধর শুরু করে। এসময় চিৎকার চেচামেচি শুনে স্বামীকে বাঁচাতে এসে মারধরের শিকার হন মহাসিনের দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নিপা। পরে স্বজন ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রাজৈর থানার পুলিশ। এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাদারীপুর জেলা ও উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতারা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সঠিক বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মাদারীপুর জেলা সমন্বয়কারী কমিটির সদস্য আহত মহাসিন ফকির বলেন, এনামুল শেখ আগে আওয়ামী লীগ করতো। এখন হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবদলের প্রার্থী হতে চাচ্ছে। তাদের অবৈধ ড্রেজার বালুর ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। লতিফ বয়াতি (বিএনপি নেতা) আমাকে ফোন করে ঘর থেকে বের করে আনে এবং এনামুলহক সহ আরও ৭/৮ জন মিলে আমাকে মারধর করে। একই সঙ্গে আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকেও মারধর করা হয়। শুধু তাই নয়, আমার মা ও এনসিপির নাম তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তারা।

তিনি আরও বলেন, সদ্য গঠিত মাদারীপুর জেলা এনসিপি কমিটি টাকা বা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে করা হয়েছে। আমরা এই কমিটি না মানায় যুগ্ম সমন্বয়কারী হাসিবুল্লাহ আলাদা প্যানেল তৈরি করছে এবং তার প্যানেলের এনসিপি নেতা মিরাজুল ইসলামকে দিয়ে এই ঘটনা ঘটাইছে। মিরাজুল হামলাকারীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিল। এর আগেও আমাকে গুম করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

এনসিপি নেতা মহাসিনের স্ত্রী আহত জান্নাতুল জারা নিপা বলেন, আমার স্বামীকে এক লোক ফোন করে বাসা থেকে বাইরে আনে। পরে তাকে এনামুল ও তার ভাই নাজমুল এবং হকসহ বেশ কয়েকজন মিলে মারধর করে। এসময় আমি চিৎকার শুনে এগিয়ে গেলে আমাকেও তারা পেটে ও পিঠে লাথি মারে এবং নাজমুল গলা থেকে স্বর্ণের চেন ছিড়ে নিয়ে গেছে। আমার গলায় সেই আঁচড়ের দাগ রয়েছে। আমি অন্তঃসত্ত্বা।

তবে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মাদারীপুর জেলা সমন্বয়কারী কমিটির সদস্য মিরাজুল ইসলামের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে আরেক অভিযুক্ত হোসেনপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা এনামুল শেখ উল্টো অভিযোগ করে বলেন, বাড়ি নির্মাণের জন্য আমার একটা পুকুর ভরাট করতে এনসিপি নেতা মিরাজুলকে বলেছিলাম। তার ড্রেজার পাইপ লাইন নিয়েছি। এর জন্য মহাসিন ফকির চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা না পেয়ে ড্রেজার চালানোর সঙ্গে সঙ্গে গোড়া থেকে একটা পাইপ ভেঙে ফেলছে। এ নিয়ে বলতে গেলে আগে আমাকে মারধর করে। পরে আমার ছোট ভাই (নাজমুল শেখ) মহাসিনের চোখে ঘুষি মারছে। এ বিষয়ে আমরা রাজৈর থানায় মামলা করেছি।

মাদারীপুরের রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। রাতে এক পক্ষের একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি। আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত