ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে
যাত্রী ভোগান্তির সমাধান কি বৃহত্তর আন্দোলন ?
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২২, ১৪:১৭ | আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:২৭
এক্সপ্রেসওয়েতে পরিবহন মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মুন্সীগঞ্জের ৩ উপজেলার মানুষ এখন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
ঢাকা-মাওয়া রুটে চলাচলকারী বেশির ভাগ বাস কোম্পানির পরিবহনগুলো এখন ঢাকা-ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা-ঢাকা রুটে চলাচল করায় ঢাকা-মাওয়া অংশের কোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে তারা যাত্রী উঠাচ্ছে না এবং নামাচ্ছে না। এমনকি ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান-শ্রীনগর ও লৌহজং উপজেলার কোনো যাত্রী তুলছে না। কেউ উঠে পড়লে ভাড়া গুনতে হচ্ছে ঢাকা-ভাঙ্গা রুটের। বাধ্য হয়ে শ্রীনগরের ভাড়া ৬০ টাকা ও মাওয়ার ভাড়া ৭০ টাকার স্থলে ভাঙ্গার ভাড়া ২৫০ টাকা দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে। উল্টো পথে ঢাকায় পৌঁছানোর সময় কোনো বাসই বাসস্ট্যান্ডগুলোতে থামছে না। ফলে প্রতিদিন লাখো যাত্রী ভোগান্তি পোহাচ্ছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ঢাকা-মাওয়া রুটে চলাচলকারী বসুমতি, প্রচেষ্টা, ইলিশ, আনন্দ, গ্রেট বিক্রমপুরসহ বেশ কয়েকটি পরিবহন মাওয়া রুটে চলাচল করতো। নিমতলা, শ্রীনগর ও মাওয়ার যাত্রীদের এগুলোই ছিল পরিবহনের মাধ্যম।
কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এসব বাসগুলো এখন আর নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়ার যাত্রী তুলছে না। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া গুনে নয়তো দোহার-ঢাকা, বালিগাঁও-ঢাকা, সিরাজদিখান-ঢাকা, বাড়ৈখালী-ঢাকা রুটের লোকাল বাসে করে দাঁড়িয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকারের সফলতায় এই অঞ্চলের মানুষ কতটুকু উপকৃত হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বইছে ক্ষোভের ঝড়।
কিছুদিন আগে এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির নামে শ্রীনগর প্রেস ক্লাবে সভা ডাকা হয়েছিল। তারা এক্সপ্রেসওয়েতে পরিবহন মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মুন্সীগঞ্জের ৩ উপজেলার মানুষ কতটা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে তা তুলে ধরেন এবং এর সমাধানের জন্য স্থানীয় সাংসদ ও প্রশাসনের প্রতি দাবী-দাওয়াও পেশ করেন করেন। সভায় বক্তারা বলেন, তাদের দাবী মানা না হলে আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। শ্রীনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান জিঠু বলেন, এই দুর্ভোগ এখন চরম আকার ধারণ করেছে। বিষয়টি নিয়ে ৩ উপজেলার সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দ উদ্যোগ নিলেই সমাধান সম্ভব।
গতকাল শনিবার শ্রীনগরে হয়রানির প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু (ঢাকা-মাওয়া) এক্সপ্রেসওয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এক্সপ্রেসওয়ের মাশুরগাও এলাকায় অবস্থিত পূর্বের বাসস্ট্যান্ডে এই ঘটনা ঘটে। এসময় রাস্তার দুই পাশে প্রায় ৩ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই এলাকায় সকল থেকে ঢাকাগামী যাত্রীরা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু কোন বাসে তাদের না তোলায় বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেখানে যাত্রীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তা আটকে দেয়। এসময় রাস্তার দুই পাশে ঢাকাগামী ও দক্ষিণবঙ্গগামী বিভিন্ন রকম যানবাহনের প্রায় ৩ কিলোমিটার জট তৈরি হয়। পরে পুলিশ এসে অবরোধকারীদেরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং অবরোধ মুক্ত করে।
ঢাকা-মাওয়া রুটে চলাচলকারী বেশির ভাগ যাত্রীদের এখন একটাই দাবী এই দুর্ভোগ লাঘবে এই রুটে বিআরটিসি বাসের সার্ভিস চালু হোক। বেসরকারি বাস কোম্পানির পরিবহনগুলোর কাছে উক্ত রুটের যাত্রীরা আর জিম্মি হয়ে থাকতে চায় না।
মুন্সিগঞ্জের জেলার সাংসদ, ডিসি, উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে যদি কোন সুষ্ঠ সমাধান করে দিতে না পারেন তবে অদুর ভবিষ্যতে যে ক্ষুব্ধ জণগন বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে, এটা নিশ্চিত। আর আন্দোলন করেই যদি ভুক্তভোগীরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করে নেয় তবে এই ঘটনা সমাধানের বিযয়টি যাদের উপর বর্তায় তাদের যোগ্যতার বিষয়ে প্রশ্ন এসেই যায়। আশা করি সংশ্লিষ্টগন বিষয়টি আমলে নিয়ে একটি সুষ্ঠ সমাধানের মাধ্যমে ভুক্তভোগী যাত্রীদের পাশে দাঁড়াবেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত