মাদারীপুরে কুন্ডুবাড়ির মেলা শুরু
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৬:৪৮ | আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:৪২
( বুধবার) থেকে শুরু হচ্ছ মাদারীপুরের বহুল আলোচিত আড়াইশ' বছরের কুন্ডুবাড়ির মেলা। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চার স্তরের নিরাপত্তার মধ্যেদিয়ে মাদারীপুরের কালকিনি পৌর এলাকার গোপালপুরের কুন্ডু বাড়িতে এ মেলা শুরু হবে। দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ আড়াইশ' বছরের ঐতিহ্যবাহী কুন্ডুবাড়ির মেলা। প্রতি বছর কালিপূজা ও দিপাবলী উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় এ মেলার।
এদিকে এই মেলায় অশ্লিলতা, চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়াসহ ৯টি অভিযোগ এনে স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষনা করা হলো এমন ব্যানার পৌর এলাকার বিভিন্নস্থানে টানিয়ে দেয়া হয়। এবং তা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ ঘটনা নিয়ে পুরো জেলাসহ সারা দেশ জুরে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। পরে মেলার বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এবং কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস কার্যালয়ে কয়েকদফা আলেম সমাজ, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে সভা করে প্রশাসন। পরে উপস্থিত সবার সম্মতিক্রমে সভা শেষে পুজা উদযাপন কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে তিন দিনের অনুমোদন দেয়া হয় এ মেলার। এতে খুশি স্থানীয়দের পাশাপাশি পুজা উদযাপন কমিটি।
তবে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে এ মেলার ইজারা বাতিল করে সার্বক্ষনিক দায়িত্বে থাকবেন প্রশাসন। অপরদিকে মেলাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রশাসন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বরিশাল সেনানিবাসের কর্নেল তারিক মাহমুদ, লেঃ কর্নেল আবদুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাশ, কালকিনি থানার ওসি মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, মেজর মো. মুনতাসীর মামুন গৌরব ও ক্যাপ্টেন আবু আমিন প্রমুখ। আজ মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি পৌর এলাকার গোপালপুরের কুন্ডু বাড়িতে ১৭৮৩ সালের নভেম্বরে দিপাবলী ও শ্রীশ্রী কালিপূজা উপলক্ষ্যে দীননাথ কুন্ডু ও মহেশ কুন্ডু এই মেলার প্রবর্তন করেন। তাই কুন্ডুদের বংশের নামানুসারে এই মেলা নাম করন করা হয় কুন্ডবাড়ির মেলা। এই সময় দিপাবলীর পরের দিন এই অঞ্চলের বিভিন্ন কালি প্রতিমা জড়ো করা হত। এর মধ্যে যাদের প্রতিমা সর্বাধীক থেকে সেরা হতো তাদের পুরস্কার প্রদান করা হত। সেই সময় চিত্তবিনোদনের জন্য পুতুল নাচ, কবিগান, জারি গান, পালাগান, নৌকাবাইচের আয়োজন করা হত। কালের বিবর্তনে পালাগান জারি গান, নৌকা বাইচ বন্ধ থাকলেও নাগর দোলার আয়োজন এখনো আছে। বংশপরম্পরায় প্রতি বছর এই মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে শুধু কুন্ডবাড়ি জুড়ে নয় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসে এ মেলা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসে। কাঠের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের জন্য এই মেলা বিখ্যাত। মেলায় মাদারীপুর ছাড়াও ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের মাটির, বাঁশের ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন মালামাল ট্রাকযোগে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। প্রতি বছরের তুলনায় এবার কাঠের ফার্নিচারের চাহিদা বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তবে দু’ একদিনের মধ্যে সকল ধরনের মালামাল বিক্রি শুরু হয়ে যাবে।
মেলার আবেদনকারী স্বপন কুন্ডু বলেন, চলতি বছরে আমাদের এ মেলা নিয়ে একটু সমেস্যা তৈরী হলেও আমরা এ মেলার অনুমোদন পেয়েছি তাই আমাদের পক্ষ্য থেকে প্রশাসনকে ধন্যবাদ যানাই। তবে দিপাবলী ও শ্রীশ্রী কালিপূজা উপলক্ষ্যে আমাদের পূর্ব পুরুষরা মাত্র ৪ একর জমির উপর এই মেলার আয়োজন করতেন। পরে ধীরে ধীরে এই মেলা বিস্তৃতি হয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পরে। প্রতি বছর এই মোলায় কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রি হয়। তবে এ বছর মেলাকে কেন্দ্র করে সর্বক্ষনিক চার স্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকবেন।
এ ব্যাপারে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার দাশ জানান, প্রথমে মেলা নিয়ে বির্তক সৃষ্টি হলেও সেই সমস্যা কেটে গেছে। পুজা উদযাপন কমিটি, সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মেলা পরিচালিত হবে। মেলায় আগত দোকানী, দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করবে প্রশাসন। সবার সম্মতিতেই এবার সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে কুন্ডুবাড়ি মেলা।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত