মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদী ভাঙ্গনে শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন, আতঙ্কে এলাকাবাসী
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২১, ১৯:৩০ | আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:০৪
মাদারীপুরের কালকিনি অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় আড়িয়াল খাঁ নদীতে নতুন করে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। এ ভাঙ্গনের কবলে পরে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক বসতবাড়ি ও একটি মসজিদ এবং ফসলি জমি। এছাড়া বিগত দিনে নদীভাঙনে প্রায় কয়েকশত পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। বর্তমানে নদীর পানি আরো বেড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে নদীর পাড়ের লোকজন।
অপরদিকে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ওই এলাকার দুইশতাধিক পরিবার। আড়িয়াল খাঁ নদী ভাঙনকবলিত অনেক মানুষ কোনো প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আলীনগর এলাকার চরহোগলপাতিয়া গ্রাম। এ গ্রামের ওপর দিয়েই বয়ে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদী। এ গ্রামটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত হয়ে পড়ে রয়েছে। নেই কোনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধাও। বিগত দিনেও নদীতে চলে গেছে এ গ্রামের অনেক বাড়িঘর, কয়েকশ’ একর ফসলি জমি ও চরহোগলপাতিয়া হাওলাদার বাড়ির জামে মসজিদ। কিন্তু তখন কেউ এগিয়ে আসেনি এ গ্রামের মানুষের পাশে। প্রায় ১কিলোমিটার জমির ধান, আখ ও পাটসহ বিভিন্ন প্রকার ফসলি জমি চলে গেছে। এছাড়া বর্তমানে একের পর এক আড়িয়াল খাঁ'র পেটে চলে গেছে-চরহোগলপাতিয়া গ্রামের আলিম আকন , আনোয়ার মুন্সি , টিটল আকন, সন্তোষ মন্ডল, হরিপদ শিল, রবিন,মন্ডল, শিল্পী বেগম, গিয়াসউদ্দিন বেপারী,রাজিব মন্ডল, কাকন মন্ডল, অনিল উকিল,বাবুল ভূইয়া, আবদুল লতিফ হাওলাদার, হেলালউদ্দীন হাওলাদার, জব্বার হাওলাদার, রাফেজা, ময়ুর মন্ডল, সিরাজুল ফকির,খালেক সরদার, মহাদেব ঘরামী, বেনু বেগম ও আসমা, কবির, ইলিয়াস আকন, রানু আক্তারসহ অন্তত ১০০ জনের বসতবাড়ি।
নদীভাঙন আতঙ্কে মামুন সরদার, গিয়াসউদ্দিন বেপারী, বাবুল ভূইয়া , ইসলাম হাওলাদার, হালান হাওলাদার, হরিপদ শিল, কাকন মন্ডল, আনোয়ার মুন্সি, মিরজাহান ফকির, জাফর সরদারসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার তাদের বসতবাড়ি দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। ভূক্তভোগী নাম প্রকাশ করতে অনেকে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার কারনে আমাদের আমাগো ঘড়বাড়ি, জায়গা জমি সব কেড়ে নিয়ে গেছে নদীতে। আর ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা বন্ধ না করলে নদী ভাঙন রোধ না করা হলে আমাগো বাকি যা আছে সব নদীতে চলে যাবে। আমরা গ্রামবাসি নদীভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে চাই। এছাড়া আমরা কোন সাহায্য-সহযোগিতাও পাইনি।কৃষক রাজিব মন্ডল ও আক্তার বেপারীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আমাগো ফসলের সকল জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা এখন কীভাবে বাঁচব। আমাগো কৃষকের কান্নায় কারও কিছু আসে যায় না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. নান্নু মোল্লা বলেন, নদীভাঙনে চরহোগলপাতিয়া গ্রামের সব শেষে হয়ে গেছে। আমি চেষ্টা করছি ভাঙনকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান মিলন বলেন,আড়িয়াল খাঁ রোধে ব্যবস্থা নিতে বহুবার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্বারস্থ হয়েছি। তবে দুঃখের বিষয় এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করা হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত