ভোটের মাঠে বিএনপির ১৫ নেতা, বললেন বহিষ্কার হলেও লড়বেন

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ১১:২২ |  আপডেট  : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০৮

দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন বিএনপির অন্তত ১৫ জন নেতা। তবে তাদের বেশিরভাগই সাবেক। এ বিষয়ে দলীয় নেতারা বলছেন, যারা নির্বাচন করছেন, তারা এখন দলে নেই। কেউ কেউ বিএনপির রাজনীতি ছেড়েছেন। এর মধ্যে কেউ দলের কোনও পদে থাকলে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।

গত ২১ মে মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলীয় নেতাদের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার জন্য কড়াভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে দলের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, ‘দলের কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। তারা বিশ্বাসঘাতক ও জাতীয় বেইমান হিসেবে দলের কাছে চিহ্নিত থাকবেন। জনগণের সামনে তাদের জবাবদিহি করতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৫ মে মেয়র পদে চার, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৭ এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে ৪৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস। এর মধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে তিন বিএনপি নেতার মনোনয়নপত্র রয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচ জন বর্তমান কাউন্সিলর ও দুই জন সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।

বিএনপির যেসব নেতা ভোটের মাঠে রয়েছেন তারা হলেন—৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন একই ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে কবীর, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু বাক্কার, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মো. টুটুল, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক যুবদল নেতা আবদুস সোবহান, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে শাহমখদুম থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি বর্তমান কাউন্সিলর বেলাল আহম্মেদ, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর যুবদলের সাবেক নির্বাহী সদস্য শহিদুল ইসলাম, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুজ্জামান, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বর্তমান কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সাবেক ছাত্রদল নেতা আশরাফুল হাসান এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান।

সংরক্ষিত ৮ নম্বর ওয়ার্ডে লড়ছেন মহানগর মহিলা দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান কাউন্সিলর শাহানাজ বেগম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান কাউন্সিলর শামসুন্নাহার ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান কাউন্সিলর মুসলিমা বেগম।

বহিষ্কারের ঘোষণার পরও নির্বাচন করার ব্যাপারে আনোয়ারুল আমিন বলেন, ‘কাউন্সিলর পদের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করা হয় না। এটি দলীয় নির্বাচন নয়, সাংগঠনিক বাধা থাকার কথা নয়। আমি চারবার নির্বাচিত হয়েছি। দীর্ঘদিন মাঠ ধরে রেখেছি। জনগণ আমাকে চাচ্ছে, তাই মাঠ ছাড়বো না। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে লড়বো।’

সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের প্রার্থী কাউন্সিলর মুসলিমা বেগম বলেন, ‘নির্বাচন করার জন্য দেড় মাস আগে দল থেকে পদত্যাগ করেছি। জনগণ আমাকে চাইছেন। তাই প্রার্থী হয়েছি। বহিষ্কার করলেও ভোটের মাঠে থাকবো।’

রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজপাড়া এলাকায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওই সময় পুলিশ সদস্য সিদ্ধার্থ হত্যা মামলার আসামি হন। লিলি হলের মোড়ে গাড়িতে পেট্রল বোমা মেরে চালককে হত্যা মামলারও আসামি তিনি। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এলাকার মানুষ আমাকে চান বলেই ভোট করছি। দলের জন্য অনেক ত্যাগ আছে। বহিষ্কার করলেও মাঠে আছি।’

১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ২০০২ সাল থেকে কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন শাহমখদুম থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি বেলাল আহম্মেদ। টানা চারবারের কাউন্সিলর বেলাল বলেন, ‘অনেকদিন আগে আমার পদ ছিল। এখন নেই। দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিই না। এলাকার মানুষ চান বলেই তাদের কথা চিন্তা করে নির্বাচন করছি।’

টানা চারবার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছেন মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য আবদুস সোবহান লিটন। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন করবোই। একসময় দলের কর্মী ছিলাম। এখন শুধুই সমর্থক। যেহেতু পদে নেই সেহেতু দলীয় কোনও কর্মসূচিতে যাই না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচন করছি।’

আজীবনের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দলের নেতাকর্মীদের ভোটের মাঠে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী বলেন, ‘যারা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা বিএনপির কেউ নন। ভোটে অংশ নেওয়া কেউ পদে থাকলে অবশ্যই বহিষ্কার করা হবে। যদি কেউ পদে না থাকেন তাহলে বহিষ্কারের কিছুই নেই। তারা আগামীতে পদ পাবেন না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে দল অংশ নেবে না। ফলে সিটি নির্বাচন নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই। জনগণ ভোট দিতে না পারলে নির্বাচন করে লাভ কী। আর দলের নেতারাও প্রার্থী হয়ে কী লাভ, বরং ক্ষতি হবে।’

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন। ২ জুন প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। ওই দিন থেকে প্রচারণায় নামবেন প্রার্থীরা। আগামী ২১ জুন ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। এই নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫২ হাজার ১৫৭। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৮৫ জন, আর নারী এক লাখ ৮০ হাজার ৯৭২ জন। এবার ১৫২টি কেন্দ্রের এক হাজার ১৭৩টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত