একদিন হেঁটেই পায়রা সেতু পার হওয়ার ইচ্ছা

ভাবমূর্তি নষ্ট করতে 'কিছু কিছু ঘটনা’ ঘটানো হচ্ছে, সতর্ক থাকুন: প্রধানমন্ত্রী

  গ্রামনগর বার্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২১, ১৪:১০ |  আপডেট  : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:৩২

দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে একটি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে ‘কিছু কিছু ঘটনা’ ঘটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান তিনি।

রোববার (২৪ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা সেতুর উদ্বোধন এবং ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৬-লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আর কখনো কেউ পেছনে টানতে পারবে না। এর মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটছে, ঘটানো হচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হচ্ছে, সেটা আপনারা নিজেরাই টের পান। যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং সেই সঙ্গে অপপ্রচারও চালানো হয়।

সরকার প্রধান বলেন, আমরা যতই উন্নতি করি, ভালো কাজ করি, একটা শ্রেণি আছে বাংলাদেশের বদনাম করতেই তারা ব্যস্ত। তারা কী চায়? তারা এদেশে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক, সেটা তারা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে তাদের একটু কদর বাড়ে, সেই জন্য তাদের একটা ...সব সময় ...তারা এ উন্নয়নটা দেখে না। বরং ধ্বংসই তারা করতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এ ব্যাপারে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের একটি মন্দিরে কুরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয় হিন্দুদের উপাসনালয়, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।  

তিনি জানান, সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা, পুনর্বাসন ও সহিংসতাকারী দুর্বৃত্তদের বিচার নিশ্চিত করতে তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নির্দেশে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে সরকার। এরই মধ্যে অপরাধ-উস্কানি ও গুজবের সঙ্গে জড়িত অনেককে আটক করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই অঞ্চলের উন্নতি করা একান্তভাবে জরুরি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পায়রা সেতুর মাধ্যমে বরিশাল-পটুয়াখালীর সংযোগ সৃষ্টি হবে। পায়রা নদীর ওপর সেতু। কাজে নদীর নামে সেতুর নামটা হলে নদীটারও একটা পরিচয় পাওয়া যাবে। সে জন্য এই নামটা আমি পছন্দ করেছি। পায়রা তো শান্তির প্রতীক, সেতু হওয়ার পর মানুষের যে আর্থিক উন্নতি হবে তার ফলে মানুষের মনে শান্তি আসবে এবং মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে। সেই সুযোগটা সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ খাল-বিল, নদী-নালার দেশ। আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয় তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দক্ষিণাঞ্চল সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে। এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নতি যত দ্রতু আমরা করতে পারি। তত এই অঞ্চলের মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল হবে। আর জাতীয় অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখবে। আমরা দেশটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।

তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে আর্থ-সামাজিক উন্নতি তরান্বিত হবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ শুরু করি। সারা বাংলাদেশে একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। ধরলা সেতু আমাদের সময় করা। যমুনা নদীর ওপর রেলসহ যে বঙ্গবন্ধু সেতু সেটাও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা। এ দেশের যতটুকু উন্নয়ন সেটা আমরাই করে দিচ্ছি। সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটে দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে স্টেশনসহ যতটুকু উন্নতি হয়েছে, সেটা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই করা হয়েছে। বরিশাল বিভাগে শুধু রাস্তাই আমরা করিনি, সেখানে ক্যান্টনমেন্ট নির্মাণ হয়েছে। একটি নৌ-ঘাঁটি হচ্ছে, বিমান ঘাঁটি হচ্ছে। সেই সঙ্গে কোস্ট গার্ডের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ঘাঁটি হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। এভাবে পুরো বরিশাল নিয়ে একটি বড় কর্মযজ্ঞ সেখানে চলছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, টুঙ্গিপাড়া থেকে স্পিডবোটে আমি বরগুনা গিয়েছিলাম। সেই সময় প্রত্যেকটা দ্বীপ অঞ্চল আমি ঘুরি এবং জনসভা করি। কাজেই এই অঞ্চলের উন্নতি করা একান্তভাবে জরুরি ছিল। পায়রা সেতু আজ উদ্বোধন হয়ে গেল, এখানে যেমন পর্যটনের সুযোগ হবে এবং সবচেয়ে বড় কথা আমরা পায়রা পোর্ট তৈরি করছি, এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে। মন্ত্রী বলেছেন, আগামী বছর পদ্মা সেতু চালু হবে, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর কষ্ট থাকবে না। অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য অন্যান্য সেতুগুলো করে ফেলছি যেন এই অঞ্চল উন্নত হতে পারে।

সিলেটের একটা ‍গুরুত্ব রয়েছে আমাদের কাছে। তা ছাড়া, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই সিলেট। সিলেটকে আরও উন্নত বিভাগ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। প্রবাসীদের অর্থ আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখে। সেটাও আমরা সব সময় স্মরণ রাখি। আমি মনে করি, রাস্তা হয়ে গেলে যোগাযোগ বাড়বে তাতে আমাদের দেশের বিশেষ উন্নতি হবে। আন্তর্জাতিক সড়ক নেটওয়ার্কেও বাংলাদেশ সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়ে যাবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটাকে সব থেকে সুন্দর আধুনিক সড়ক করে দেবো। প্রবাসীরা এসে দেখবেন। রাস্তা দিয়ে যখন যাবে ইংল্যান্ডে আছে না কি পৃথিবীর কোন দেশে আছে সেটা তাদের চিন্তা করতে হবে। তার থেকে সুন্দর রাস্তা আমরা করে দিচ্ছি— বলেন তিনি।

আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন দৃষ্টিনন্দন পায়রা সেতু দেখতে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, যদি একটু ব্রিজটার ওপর হাঁটতে পারতাম। তবে সত্যি খুব ভালো লাগতো।

সশরীরে পায়রা সেতু দেখতে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেই আপনাদের সঙ্গে গণভবনে বসেও কথা বলতে পারছি, মিলিত হতে পারছি। তবে এটা ঠিক যে আমি যদি সেখানে উপস্থিত থাকতে পারতাম, পায়রা সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে পারতাম বা সেতুতে নেমে যদি একটু দাঁড়াতে পারতাম, পায়রা নদীটা দেখতে পারতাম। ’ যে নদীতে আমি সব সময় স্পিডবোটে চড়েছি সেই নদীর ওপরের ব্রিজে যদি হাঁটতে পারতাম। তবে সত্যি খুব ভালো লাগতো। ’

করোনা পরিস্থিতির কারণে যেতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু করোনার কারণে আসলে এক প্রকার বন্দি জীবন, সেজন্য আর সেটা হলো না। তবে আমার আকাঙ্ক্ষা আছে একদিন গাড়ি চালিয়ে সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন এ নতুন সেতুটা দেখতে যাবো অবশ্যই। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ।

অপরদিকে বরিশাল প্রান্তে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, পটুয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান মিয়া, পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ, পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা, পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিববুর রহমান, বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ, বরিশাল-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রতনা, সংরক্ষিত ২৯ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কানিজ সুলতানা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আফজাল, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

একই অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক উভয় সড়কে পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ৬-লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত