ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের বিদায়ের সুর!

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২২, ১০:২৬ |  আপডেট  : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৪

নতুন অর্থমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার পরেও নিজের চেয়ার আঁকড়ে থাকার শেষ চেষ্টা করতে হচ্ছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে। এরই মধ্যে তার ক্ষমতার মেয়াদ গণনা শুরু করে দিয়েছেন কোনো কোনো ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ ও মিডিয়া। তারা বলছেন, কয়েকদিন বা সপ্তাহের মধ্যেই ইতি ঘটতে যাচ্ছে ব্রিটিশ রাজনীতির সবচেয়ে ডিগবাজ পটিয়সী রাজনীতিবিদ লিজ ট্রাসের। চ্যানেল ফোরের এক জরিপে ৬৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, লিজের পদত্যাগ করা উচিত।

মেট্রো নিউজ জানায়, এক মাসেরও কিছু আগে ক্ষমতায় আসা লিজ ট্রাস করপোরেশন ট্যাক্সে পরিকল্পিত হ্রাস, অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা ও ইউটার্নের পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজেও বিদায় নিতে পারেন। রাজনৈতিক সংকট থেকে বাঁচার জন্য তিনি মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন। সিনিয়র কনজারভেটিভ এমপিরা এখন ভাবছেন কীভাবে তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অপসারণ করা যায়। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, কিছু এমপি চিন্তাভাবনা করছেন তাকে প্রকাশ্যে পদত্যাগ করার আহ্বান জানানো হবে কিনা? এমনকি বিদায়ী অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেং বলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাকেও বিদায় নিতে হবে।

বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল বিদায়ের : লিজ তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাবেক অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেংকে বরখাস্ত করে যে সংবাদ সম্মেলন করেন সেখানে তার উপস্থিতি ও শব্দচয়নে ছিল নার্ভাসনেসের চূড়ান্ত প্রতিফলন। এ মন্তব্য করছেন প্রধানমন্ত্রীর সমালোচকরা। একজন সাবেক মন্ত্রী দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেছেন, তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তাকে সেখানে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একটি অনিচ্ছুক শিশুর মতো নিজেকে ব্যাখ্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে তার মধ্যে

কোনো অনুশোচনা ছিল না। ভুল যে একটা করেছে সেটা সে মানতেই পারছিল না। স্বীকার করা তো দূরের কথা। তার দলের অনেক নেতা বলেছেন, অনুশোচনা বা দুঃখ প্রকাশ করলে হয়তো তাকে নিয়ে আর সরানোর ব্যাপারে আমাদের চিন্তা করতে হতো না।

ব্রিটিশ একজন শারীরিক ভাষা বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জুডি জেমস বলেন, সংবাদ সম্মেলনে তার আসা-যাওয়ার সময় বোঝা যাচ্ছিল যে তিনি নেতৃত্ব হারানোর সংকেত পেয়েছেন। তার আর লড়াই করার শক্তি নেই। তার চেহারায় উৎসাহ বা প্রত্যয় ছিল না। জনগণকে সান্ত¡না বা সাহস দেয়ার কোনো কথা তার ছিল না। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক গার্ডিয়ানকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রিত্বের চালকের আসনে তার আর ড্রাইভিং করার ক্ষমতা নেই। মনে হয়েছে ভাগ্যের কাছে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন তার ভবিষ্যৎ।

প্রস্তুতি পরিবর্তনের : ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখন বিশ্বাস করেন, লিজের অফিস থেকে সরে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। ঊর্ধ্বতন বেসামরিক কর্মচারীরা এখন খোলাখুলিভাবে তার যাওয়ার বিষয়ে কথা বলছেন। হোয়াইট হলের একটি সূত্র টাইমসকে জানিয়েছে, তারা মনে করে একটা সংকেত তারা পাচ্ছেন।

ভুল তার হয়েছিল : নতুন অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট গতকাল শনিবার সকালে অফিস করার সময় তার প্রথম সাক্ষাৎকারে আগের ট্যাক্স নীতির দিকনির্দেশনায় সম্পূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং আগের পরিকল্পনায় দুটি ভুল ছিল বলে জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, লিজের প্রণীত ট্রাসোনোমিক্সের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কে আসতে পারেন : ট্রাসের স্থলাভিষিক্ত করার জন্য একজন ‘ঐক্যবব্ধ প্রার্থী’ দেয়ার গুজব রয়েছে। তবে কাকে করা উচিত সে বিষয়ে খুব কমই একমত বলে মনে হচ্ছে। ঋষি সুনাক, পেনি মর্ডান্ট, বরিস জনসন, বেন ওয়ালেসসহ কয়েকজনের নাম ঘুরপাক খাচ্ছে লিজের বিকল্প হিসেবে।

সুনাকের ভবিষ্যদ্বাণী : টোরি দলের নেতৃত্বের দৌড়ে শেষ রাউন্ডে লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যান ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক। এখনো তিনি বেশ কয়েকটি দলের এমপিদের কাছে শীর্ষ পছন্দ হিসেবে রয়েছেন। গত আগস্টে ঋষি সুনাক ট্রাসের ৩০ বিলিয়ন পাউন্ডের অর্থহীন ট্যাক্স কমানোর পরিকল্পনার সমালোচনা করেছিলেন। বলেছিলেন, এটি লাখো মানুষের দুর্দশার কারণ হবে। অর্থনীতির লাল বাতি জ¦ালাবে। এর মূল কারণ হলো মুদ্রাস্ফীতি। লিজ ট্রাসের পরিকল্পনা পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তুলবে। তবে একই দলের এমপি ডগলাস রস বলেন, আমরা আছি লিজের সঙ্গে। আগামী ক্রিস্টমাস আমরা ডাউনিং স্ট্রিটে পালন করব।

আইসবার্গ লেডি : দ্য ইকোনোমিস্ট গত সপ্তাহে লিজকে একজন আইসবার্গ লেডি হিসেবে লেটুস পাতার সঙ্গে তুলনা করেছে। উল্লেখ্য, লিজ রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে লেবার দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এমপি মনোনয়নের প্রাক্কালে কনজারভেটিভ দলে যোগ দেন। এ দলেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নেতৃত্বের গ্রুপ পাল্টিয়েছেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত