বিমানবন্দরে লাগেজের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিলেই লাখ টাকা জরিমানা
প্রকাশ: ২ জুন ২০২৪, ১৬:৫৯ | আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬
নতুন কাস্টমস আইন-২০২৩ অনুসারে বিদেশ থেকে আসা কোনো যাত্রী নিজের লাগেজ সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিলে বা ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য আনলে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে। আর তার লাগেজে থাকা পণ্য রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। এছাড়া, নিষিদ্ধ পণ্য প্রচলতি আইন অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে যাত্রীকে।
কাস্টমসের নতুন আইন-২০২৩ অনুসারে এমন বিধান রাখা হয়েছে। আগামী ৬ জুন থেকে কার্যকর হচ্ছে ওই আইন। গত ৩০ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সই করা এক প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কাস্টমস আইনের ১৫৪ ধারায় বলা আছে, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কাস্টমসের কাছে তার লাগেজ সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে। যাত্রী বা ক্রু লাগেজে রক্ষিত পণ্য সম্পর্কে কাস্টমস কর্মকর্তার কাছে লিখিত বা মৌখিক ঘোষণা দিতে পারবেন এবং কাস্টমস কর্মকর্তার প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। লাগেজ তল্লাশির আগে যাত্রী যদি রক্ষিত পণ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হন এবং তল্লাশিকালে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কাস্টমস কর্মকর্তা সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারবেন। তাছাড়া, সংশ্লিষ্ট পণ্য বাজেয়াপ্তযোগ্য হবে।
প্রসঙ্গত, কাস্টমস আইন ১৯৬৯ অনুসারে, পণ্যের ক্ষেত্রে অসত্য ঘোষণা প্রদান করা হলে বা কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার অথবা ব্যর্থ হলে, সেক্ষেত্রে যাত্রীকে ওই পণ্য-মূল্যের অনধিক তিনগুণ পরিমাণ অর্থদণ্ডের বিধান ছিল। এর আগে, গত বছরের ৩১ অক্টোবর জাতীয় সংসদে কাস্টমস আইন-২০২৩ পাস হয়। পুরোনো আইনে ২২৩টি ধারা ছিল। নতুন আইনে ২৬৯টি ধারা রয়েছে। রাজস্ব সংগ্রহ ও বাণিজ্য সহজীকরণের লক্ষ্যে বিশ্ব কাস্টমস সংস্থার (ডব্লিউসিও) অনুমোদিত আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কনভেনশন অনুযায়ী এবং আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা, যেমন— অনুমোদিত অর্থনৈতিক অপারেটর (এইও), পারস্পরিক স্বীকৃতি চুক্তি (এমআরএ), ইলেকট্রনিক ঘোষণা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট (পিসিএ) ইত্যাদি নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
নতুন কাস্টমস আইনে কনটেইনার জট এড়াতে শুল্কায়নের ১০ দিনের মধ্যে শুল্ক-কর পরিশোধ করে বন্দর থেকে পণ্য খালাসের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে পণ্য খালাসে ব্যর্থ হলে ১০ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে।
কাস্টমস আইন-২০২৩-এর ৩২ ধারায় বলা আছে, আমদানি পণ্যের শুল্ক-কর, চার্জ নির্ধারণের পর তা ১০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ সময় অতিক্রম করলে শুল্ক-কর পরিশোধের সর্বশেষ তারিখ থেকে খালাসের সময় পর্যন্ত বার্ষিক ১০ শতাংশ হারে সাধারণ সুদ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া, শুল্ক-কর বকেয়া থাকলে বকেয়া অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। এতে ব্যবসার খরচ বাড়তে পারে। আইনে বন্দরে পৌঁছার পাঁচ দিনের মধ্যে পণ্যের ঘোষণা বা বিল অব এন্ট্রি জমার বিধান রাখা হয়েছে।
এ নিয়ম ভঙ্গ করলে আমদানিকারককে জরিমানা গুনতে হবে। যদিও বিল অব এন্ট্রি সংশোধনের সুযোগ এবং শুল্ক ফাঁকি উদ্ঘাটনের আগে অপরাধ স্বীকার করলে জরিমানা থেকে অব্যাহতির বিধান রাখা হয়েছে।
আইনের ৮২ ধারায় বলা আছে, পণ্য ঘোষণা বা বিল অব এন্ট্রিতে দেওয়া তথ্যের সত্যতা, সঠিকতা সম্পর্কে আমদানিকারক-রপ্তানিকারক দায়বদ্ধ থাকবে। একই সঙ্গে পণ্য খালাসে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টও দায়ী থাকবে। পণ্যের সঠিকতা যাচাইয়ে কাস্টমস কর্মকর্তা দলিলাদি চাইতে পারবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য না দিলে সংশ্লিষ্ট আমদানি-রপ্তানিকারককে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে।
আইনের ৮৪ ধারায় বলা আছে, কাস্টমস স্টেশনে পণ্য নামার পর আমদানিকারককে পাঁচ দিনের মধ্যে পণ্যের ঘোষণা বা বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হবে। চাইলে পণ্য বন্দরে পৌঁছানোর ৩০ দিন আগেও বিল অব এন্ট্রি জমা দেওয়া যাবে। এ নিয়ম ভঙ্গ করলে আমদানিকারককে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে।
এ ধারাগুলোতে হয়রানি বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসার খরচ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। যদিও আইনে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার অংশ হিসেবে বেশ কিছু নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। যে কারণে আমদানিকারকদের হয়রানি হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া আইনের ১৭৩(৪) ধারায় বলা আছে, আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কাস্টমস পণ্যের নমুনা সংরক্ষণ করে জব্দকৃত পণ্য নিলামে বিক্রয় বা বিলি-বন্দেজ করতে পারবেন।
আইনের ১৯৩ ধারায় বলা আছে, পুলিশ চোরাই মাল সন্দেহে কোনো পণ্য আটক করলে বা জব্দ করলে আটকের একটি নোটিশ নিকটস্থ কাস্টমস গুদামে পাঠাতে হবে। অভিযোগ খারিজ বা তদন্ত বা বিচার সমাপ্ত হওয়ার পর আটক করা জিনিসপত্র নিকটতম কাস্টমস গুদামে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে যে পুলিশ কর্মকর্তাকে গুদামে পণ্য পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকার দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই ধরনের দায়িত্বে অবহেলার ক্ষেত্রে আগে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল।
সা/ই
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত