বিজেপি নেতার ছেলের রিসর্টে মাদক সরবরাহ ও দেহ ব্যবসা চলতো প্রতিদিনই!
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:০৭ | আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:০০
অঙ্কিতা ভাণ্ডারীর খুনের তদন্ত শুরু হওয়ার পর প্রতিদিনই একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। উত্তরাখণ্ডের পউরিতে বিজেপি নেতার ছেলের ওই রিসর্টে দেহব্যবসা নিত্যদিনের ব্যাপার ছিল। মাদকের সরবরাহও চলতো রমরমিয়ে। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে মঙ্গলবার এই তথ্যই প্রকাশ্যে এসেছে। রিসর্টের প্রাক্তন এক কর্মীই তথ্যগুলি ফাঁস করেছেন। কীভাবে তাঁকে এবং তাঁর স্বামীকে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে, তা-ও বলেছেন। এই তথ্যগুলি সামনে আসার পর মনে করা হচ্ছে, রিসর্টে পানীয় বা খাবারে মাদক মিশিয়ে মেয়েদের অজ্ঞান করে দিয়েও তাঁদের উপর শারীরিক অত্যাচার চলতো।
হরিদ্বারের বিজেপি নেতা বিনোদ আর্যের ছেলে পুলকিত আর্যের বনান্তরা রিসর্টের রিসেপশনে অঙ্কিতার আগে কাজ করতেন ঋষিতা। তাঁর স্বামী বিবেক ছিলেন রিসর্টের হাউজকিপার। ঋষিতা জানিয়েছেন, “রিসর্ট কর্তৃপক্ষ নিষিদ্ধ মাদক, গাঁজা সহ আরও নানা ধরনের মাদক দ্রব্য অতিথিদের সরবরাহ করতো। সেই সঙ্গে অতিথিদের ঘরে মেয়েদের পাঠানোও ছিল নিত্যনৈমিত্তিক কাজের অংশ। বুঝতে পেরেছিলাম, আমাকেও এই ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। যে কোনও সময় শারীরিক অত্যাচারের শিকার হতে পারি, সেই ইঙ্গিতও পেয়েছিলাম। আমার সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলা হতো।” ঋষিতা এবং বিবেক দু'জনেই এধরনের ঘৃণ্য কাজের প্রতিবাদ করেন। বিরোধিতা করতেই তাঁদের উপর হেনস্তা শুরু হয়। বিবেকের ঘাড়ে চাপানো হয় চুরির অভিযোগ। তিনি জানান, “একমাস কাজ করতে না করতেই মানসিক চাপের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়ি। সাত দিন কাজে যাইনি। তারপর পুলকিত এবং রিসর্টের দুই ম্যানেজার আশ্বাস দেয়, আর কোনও অসুবিধা হবে না। তারপর আবার যাই কাজে। কিন্তু ওই আশ্বাসবাণী যে শুধু দু'দিনের জন্য, সেটা খুব তাড়াতাড়ি বুঝে যাই। একই ঘটনা ঘটতে থাকে। রিসর্টের অতিথিদের কাছে মাদক সরবরাহ এবং মহিলাদের 'সুবিধা' দিতে বাধ্য করাই ওদের আসল ব্যবসা। দেড় মাস পর আমরা দু'জনেই কাজ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। মাইনে চাইতে গেলে ওরা আমার উপর চুরির বদনাম দেয়। আমি পুলিশে ফোন করি, বলা হয়, এই এলাকা রেগুলার পুলিশের আওতাধীন নয়। একজন পাটোয়ারি (রেভিনিউ আধিকারিক) দেখেন। ওই পাটোয়ারি পুলকিতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাকে হেনস্তা করতে শুরু করে। চলে মারাত্মক মানসিক অত্যাচার। হেপাজতে নিয়ে অত্যাচারের হুমকি দেওয়া হয়। জোর করে আমাকে দিয়ে ক্ষমা চাওয়ানো হয় এবং কাগজে লেখানোও হয়। সেটাকে হাতিয়ার করে ব্ল্যাকমেলও করা হতো। কিন্তু যাই হয়ে যাক, আমরা কাজ ছেড়ে দেব, এই সিদ্ধান্তে অনড় ছিলাম। যে কোনও ধরনের ঝুঁকি নিতেও রাজি ছিলাম।”
ঋষিতা ছেড়ে দেওয়ার পর অঙ্কিতা রিসেপশনিস্ট হিসাবে কাজে যোগ দেন। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় তাঁর সঙ্গেও। অঙ্কিতার হোয়াটস অ্যাপের মেসেজ, ফোন কলের রেকর্ড থেকে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, কীভাবে তাঁকে দেহ ব্যবসায় নামতে চাপ দেওয়া
হতো। মদ্যপ অবস্থায় কেউ একজন তাঁকে শারীরিক হেনস্তা করেছে বলেও সহকর্মী বন্ধুকে জানিয়েছিলেন অঙ্কিতা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও এদিন বলেন, “অঙ্কিতা ওদের কথা মতো দেহ ব্যবসায় নাম লেখায়নি বলেই খুন হতে হলো।” অঙ্কিতার ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, তাঁকে জলে চুবিয়ে খুন করা হয়েছে। তাঁর শরীরে চার-পাঁচ জায়গায় ক্ষতচিহ্নও রয়েছে।
পুলকিত এবং রিসর্টের দুই ম্যানেজার গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা জেরায় দোষ স্বীকারও করেছে। এদিকে, শুক্রবার রাত থেকে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ এনে স্থানীয় প্রশাসন পুলকিতের রিসর্ট ভাঙার কাজ শুরু করেছে। বিজেপি রাজত্বে বিজেপি নেতার ছেলে এতদিন ধরে রমরমিয়ে দেহ ব্যবসা চালানোর পর হঠাৎ এখনই কেন বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ উঠলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রমাণ লোপাটের জন্য এই কাজ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। বিজেপি নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলতে তড়িঘড়ি বিনোদ আর্য এবং তাঁর বড় ছেলেকে বহিষ্কার করেছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত