বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ
প্রকাশ: ৮ এপ্রিল ২০২১, ১৭:০০ | আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:০৯
স্বাধীন বাংলার স্থপতি ও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাঙালির জাতীর ইতিহাসের সঙ্গে তাঁর নাম একাকার হয়েছে। মুজিব শুধু একটি নাম নয়- ইতিহাস ও একটি প্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুটি মহান ব্রত সামনে নিয়ে জাতির জনক রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, অপরটি বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি। বাংলার সকল শ্রেনিপেশার মানুষকে নিয়ে প্রথম লক্ষ্য পূরণ করে যখন দ্বিতীয় লক্ষ্য পূরণের দ্বারপ্রান্তে ঠিক তখনই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। জাতির জনকের দুই কন্যা তখন বিদেশে অবস্থান করায় রক্ষা পান। জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক আওয়ামী লীগের রক্তে ভেজা সংগ্রামী পতাকা হাতে নিয়ে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত করে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুন্দরভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে একের পর এক লক্ষ্যপূরণ করে চলেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সবসময় ছোটকে বড় করে তুলতেন। কারন তিনি জানতেন কোন জাতি বা গোষ্ঠী কে অসম্মান বা ছোট করে কখনও নিজেকে বড় ভাবা যায় না। তাই তিনি যেসব জায়গায় যেতেন বক্তৃতার সময় সেখানকার নেতাকর্মীদের বড় করে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকে থানার, থানা আওয়ামী লীগের নেতাকে জেলার এবং জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকে জাতীয় নেতায় রূপান্তরিত করে তিনি জাতির পিতা হয়েছেন। ফলত, সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজো বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করেই টিকে আছে। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন বিশাল হৃদয়ের একজন বিশালাকৃতির ও বিশাল হৃদয়ের এক মহান নেতা। মানুষের দুঃখ তিনি সহ্য করতে পারতেন না। পরকে সহজেই আপন করে নিতেন। যারা বিরোধী ছিলেন তাদের কাছে টেনে নিতেন। তিনি ক্ষমতার জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য রাজনীতি করেননি। তিনি প্রিয় মাতৃভূমিকে পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা করে বাঙালিরা যাতে বাংলাদেশের ভাগ্যনিয়ন্তা হতে পারে সেজন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে তিনি রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সময়োপযোগী।
দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশের সকল মানুষ কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষে ছিল না। ঐ সময়ও অনেক মানুষ স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান করেছিল। যাদের কে দেশের মানুষ আজ রাজাকার বলে চিনে ও জানে। এই গ্রুপটি আগে যেমন স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল আজও সেই গ্রুপটি বহাল তবিয়তে স্বাধীন দেশে বসবাস করে আজও তারা দেশ বিরোধী বিভিন্ন ষঢ়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য স্বাধীনতার পক্ষের সকল শক্তিকে সজাগ থাকতে হবে।
বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশের সকল শ্রেনিপেশার মানুষ কে দেশের পক্ষে কাজ করার জন্য উদাত্য আহবান জানিয়ে ছিলেন। অনেকে আসে নাই।
১৯৬৬ সালে হোটেল ইডেনে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ২০ মার্চ পল্টন ময়দানের বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘৬ দফা কর্মসূচি নিয়ে অনেকের কাছে গিয়েছি, কেউ আমাকে সমর্থন করে নাই।’ কবিগুরুর গান থেকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে…।’ যেই কথা সেই কাজ, দলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়েই স্বাধীনতা সংগ্রামে সম্মুখে এগিয়ে চললেন। এদিকে পাকিস্তান বার বার বঙ্গবন্ধু কে ক্ষমতার বিভিন্ন লোভ লালসা দেখাতে লাগল। ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে গেল, বঙ্গবন্ধু মৃত্যু কে ভয় পাননি। তিনি তার নীতিতে অটল ও অবিচল রইলেন।
এ দেশের সংগ্রামী ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতির পিতার মুক্তির জন্য আন্দোলন করেছিল। সেই গণআন্দোলন প্রবল গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়। ফাঁসির মঞ্চ থেকে মুক্ত করে এবং কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) গণসংবর্ধনায় জাতির পিতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই বাঙালির বন্ধু তথা ‘বঙ্গবন্ধু’। সবকিছুর ঊর্ধ্বে জাতির পিতার কাছে ছিল বাঙালি ও বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মহান নেতা। যেখানেই মুক্তিসংগ্রাম সেখানেই তিনি সমর্থন করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে তুলনা করা যায়, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ভিয়েতনামের হো চি মিন, তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, যুগোস্লোভিয়ার মার্শাল টিটোর সঙ্গে। তাদের সমকক্ষ নেতা ছিলেন তিনি। পৃথিবীতে অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে আলোচনার টেবিলে বসে। আর বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তাঁর জীবনকে বাঙালি জাতির জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন। নেলসন ম্যান্ডেলা যেমন বলেছিলেন, ‘যে মরতে চায়, তাঁকে কেউ মারতে পারে না।’ বঙ্গবন্ধুও বলেছিলেন, ‘যে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত, তাঁর মৃত্যু নাই।’ বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের একজন মহান নেতা, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। একবার যে সিদ্ধান্ত নিতেন, মৃত্যুর মুখোমুখি হলেও আপস করতেন না।
লেখক- সাংবাদিক ও কলামিস্ট
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত